নির্মলকুমার সাহাকে এ বারের লোকসভা নির্বাচনে বহরমপুর কেন্দ্র থেকে প্রার্থী করেছে বিজেপি। —নিজস্ব চিত্র।
মুর্শিদাবাদে চিকিৎসক হিসেবে পরিচিত মুখ নির্মলকুমার সাহাকে এ বারের লোকসভা নির্বাচনে বহরমপুর কেন্দ্র থেকে প্রার্থী করেছে বিজেপি। নির্মলের সঙ্গে সরাসরি কোনও রাজনৈতিক দলেরই অতীতে ঘনিষ্ঠতা দেখা যায়নি। যদিও তাঁর পরিবার বরাবরই সঙ্ঘ ঘনিষ্ঠ। বিপুল সংখ্যক সংখ্যালঘু ভোটার আছেন যে বহরমপুরে সেখানে ‘ডাক্তারবাবু’ (এই নামে সমধিক পরিচিত নির্মল)-কে দিয়েই বাজিমাত করার পরিকল্পনা পদ্মশিবিরের। যদিও কংগ্রেস এবং তৃণমূল তাতে গুরুত্ব দিতে নারাজ।
বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রে সাতটি বিধানসভা— বড়ঞা, কান্দি, ভরতপুর, রানিনগর, বেলডাঙা, নওদা এবং বহরমপুর। গত লোকসভা ভোটে তৃণমূল ও কংগ্রেসের দ্বিমুখী লড়াই হয়েছিল। আরএসপি প্রার্থী দিলেও বামফ্রন্টগত ভাবে লড়াইয়ে নামতে দেখা যায়নি। কংগ্রেসের অধীর চৌধুরীই জেতেন। যদিও গত বিধানসভা ভোটে উল্টে যায় অঙ্ক। ভোট প্রাপ্তির নিরিখে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসে বিজেপি, তৃতীয় স্থানে নেমে যায় কংগ্রেস। এই ফলের উপর ভর করে দাঁড়িয়ে আসন্ন লোকসভায় এই আসন কংগ্রেসের হাত থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে রীতিমতো আশাবাদী তৃণমূল। এ বার সেই আসনেই ভোট কাটাকাটির অঙ্কে বাজিমাত করতে চাইছে বিজেপি। বহরমপুর বিধানসভা-সহ সংখ্যালঘু কম এমন বিধানসভা এলাকাগুলিতে নিজেদের ভোট ধরে রেখে, চিকিৎসক নির্মলের ব্যক্তিগত গ্রহণযোগ্যতাকে কাজে লাগিয়ে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকাতেও বাজিমাত করতে চায় মোদী, শাহের দল।
২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে বহরমপুর লোকসভা থেকে জয়ী হন অধীর। তৃণমূলের প্রার্থী ছিলেন অপূর্ব সরকার। অপূর্ব বর্তমানে তৃণমূলের কান্দির বিধায়ক ও বহরমপুর-মুর্শিদাবাদ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি। বিজেপির প্রার্থী হয়েছিলেন কৃষ্ণ জোয়ারদার আর্য। অধীর তৃণমূলের অপূর্বকে প্রায় ৮১ হাজার ভোটে হারিয়ে লোকসভায় যান। ২০১৯ সালে অধীর পাঁচ লক্ষ ৯০ হাজারের বেশি ভোট পেয়েছিলেন। সেখানে বিজেপির প্রাপ্ত ভোট ছিল মাত্র ১ লক্ষ ৪৩ হাজার। তৃণমূলের অপূর্ব পেয়েছিলেন প্রায় পাঁচ লক্ষ ১০ হাজার ভোট। এই পরিস্থিতিতে বহরমপুরে বিজেপির ভরসা রাজনীতিতে নয়া মুখ নির্মল।
প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে এত দিন না থাকলেও সঙ্ঘ পরিবারের সঙ্গে দীর্ঘ পারিবারিক সম্পর্ক নির্মলদের। কাকা মনিগোপাল সাহা সঙ্ঘের দীর্ঘ দিনের কর্মী ছিলেন। মুর্শিদাবাদ জেলায় আরএসএসের সংগঠন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। নির্মলের বড় দাদা কল্যাণকুমার সাহা মুর্শিদাবাদ চেম্বার অফ কমার্সের সভাপতি। সেই সঙ্গে জেলায় আরএসএস পরিচালিত একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্বও রয়েছে তাঁর কাঁধে। তবে নির্মলকে কোনও দিনই রাজনীতির আঙিনায় সে ভাবে দেখা যায়নি। শল্যচিকিৎসক হিসেবে জেলা জুড়ে খ্যাতি তাঁর। প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকার রোগীদের বিনামূল্যে অস্ত্রোপচার করেন, লোকমুখে শোনা যায় এ কথা। তাই, হিন্দু-মুসলিম, সকলের কাছেই তিনি ডাক্তারবাবু। এ বার রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় মেরুকরণের ঊর্ধ্বে ব্যক্তি নির্মলের ‘নির্মল’ ভাবমূর্তিকে ব্যবহার করেই ভোট বৈতরণী পেরোতে চাইছে বিজেপি।
নির্মলের প্রার্থীপদ নিয়ে অবশ্য খুব একটা চিন্তিত নয় কংগ্রেস শিবির। জেলা কংগ্রেস মুখপত্র জয়ন্ত দাস বলেন, ‘‘মানুষের প্রতিদিনের রাজনৈতিক দাবি আদায়ের লড়াইয়ে অধীর চৌধুরী একটা প্রতীক। বহরমপুর কেন্দ্রে কোনও প্রতিদ্বন্দ্বিতাই নেই।’’ বিজেপির ঘোষিত প্রার্থীকে কটাক্ষ করে মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূলের সভাপতি অপূর্ব সরকার বলেন, ‘‘ফুটবলারকে ক্রিকেট খেলতে বললে যেটা হয় এ ক্ষেত্রেও সেটাই হবে মনে হচ্ছে। উনি খুব ভাল চিকিৎসক। দীর্ঘদিন মানুষের চিকিৎসা করুন।’’ বিজেপি সভাপতি শাখারভ সরকার বলেন, ‘‘ডাক্তারবাবুর পরিবার দীর্ঘ দিন ধরেই সঙ্ঘ-ঘনিষ্ঠ। ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সর্ব স্তরে ওঁর গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নাতীত। মানব সেবায় ডাক্তারবাবু একটা দৃষ্টান্ত। আগামী নির্বাচনে বিজেপির বহরমপুর জয় শুধু সময়ের অপেক্ষা।’’
আর সদ্য রাজনীতির ময়দানে নামা চিকিৎসক নির্মলের প্রতিক্রিয়া, ‘‘কোনও দিন রাজনীতি করব ভাবিনি। তবে নরেন্দ্র মোদীর অনুপ্রেরণায় দেশে সুশাসন ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যে লড়াই শুরু হয়েছে, তার অংশীদার হতে চাই। আর সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরু বলে কিছু হয় না। প্রত্যেকেই মানুষ। মানুষই ঠিক করে দেবেন তাঁদের প্রতিনিধি কে হবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy