(বাঁ দিক থেকে) সুজাতা মণ্ডল, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সৌমিত্র খাঁ। —ফাইল চিত্র।
তৃণমূলের হাতে থাকা বিষ্ণুপুর আসন গত লোকসভা ভোটে জিতে নিয়েছিল বিজেপি। ২০০৯-২০১৪ পর্যন্ত যিনি ছিলেন তৃণমূলের সাংসদ, গত ভোটে সেই সৌমিত্র খাঁ-ই জিতেছিলেন বিজেপির টিকিটে। কিন্তু সোমবার ওন্দার সভা থেকে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করলেন, এ বার তৃণমূল বিষ্ণুপুর আসন জিততে পারে। তবে তার একটি অঙ্ক আছে। সেই অঙ্ক কী, তা-ও বলে দিলেন দলের সর্বময় নেত্রী।
বাঁকুড়া জেলায় দু’টি লোকসভা আসন— বাঁকুড়া এবং বিষ্ণুপুর। দু’টি আসনই গত লোকসভা ভোটে জিতেছিল বিজেপি। সোমবার বিষ্ণুপুরের তৃণমূল প্রার্থী সুজাতা মণ্ডলের সমর্থনে ওন্দায় সভা করেন মমতা। সেই মঞ্চ থেকেই তিনি বলেন, ‘‘আমি শুনেছি বাঁকুড়া সিটটা অরূপ (তালড্যাংরার বিধায়ক তথা লোকসভার প্রার্থী অরূপ চক্রবর্তী) জিতবে। এ বার ওন্দার মানুষ ভোটটা দিলে বিষ্ণপুরও আমরা জিতব।’’ গত লোকসভায় বিষ্ণুপুরে বিজেপি জিতেছিল প্রায় ৮০ হাজার ভোটে। মমতার দাবি নিয়ে রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র রাজর্ষি লাহিড়ী বলেন, ‘‘স্বপ্নে কেউ পোলাও বানালে যত খুশি ঘি ঢালতেই পারেন। কিন্তু বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর যে তৃণমূল জিতবে না, তা তৃণমূলনেত্রীও ভাল করেই জানেন। গত বার বাঁকুড়া আসনে সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে দাঁড় করিয়েও উনি তাঁকে জেতাতে পারেননি।’’
বিষ্ণুপুরের বিদায়ী সাংসদ সৌমিত্রের প্রাক্তন স্ত্রী সুজাতাকে বিষ্ণুপুরে প্রার্থী করেছে তৃণমূল। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে তাঁকে আরামবাগে দাঁড় করিয়েছিল জোড়াফুল শিবির। কিন্তু জিততে পারেননি তিনি। তবে ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটে জেলা পরিষদের আসনে জেতেন তিনি। সেই সুজাতাকেই এ বার লোকসভার লড়াইয়ে নামিয়েছে তৃণমূল।
২০২১ সালের বিধানসভা ভোট ধরলে বিষ্ণুপুর লোকসভা আসনটি তৃণমূলের জন্য ‘কঠিন’। ওই লোকসভার অন্তর্গত সাতটি বিধানসভার মধ্যে পাঁচটিতেই জিতেছিল বিজেপি। পরে অবশ্য কোতুলপুরের বিজেপি বিধায়ক হরকালী প্রতিহার এবং বিষ্ণুপুরের বিজেপি বিধায়ক তন্ময় ঘোষ যোগ দেন তৃণমূলে। তৃণমূল কেবল জিতেছিল বরজোড়া এবং পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষে। সেই নিরিখে বিষ্ণুপুর লোকসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ বিধানসভা ২০২১ সালেও বিজেপির দখলে ছিল। তবে তৃণমূলের একটি অংশের মতে, মমতা হয়তো মনে করছেন, যে দুই বিজেপি বিধায়ক তৃণমূলে শামিল হয়েছেন, সেখানে এ বার তৃণমূলই এগিয়ে থাকবে। দু’টি বিধানসভায় তৃণমূল এমনিই জিতেছিল। ফলে ওন্দায় যদি তৃণমূল এগিয়ে থাকতে পারে, তা হলে বিষ্ণুপুর বিজেপির হাত থেকে কেড়ে নেওয়া সম্ভব। আবার অন্য একটি অংশের বক্তব্য, পোড়খাওয়া রাজনীতিক মমতা জানেন, ওন্দায় দলের মধ্যে কিছু ‘দ্বন্দ্ব’ রয়েছে। নিচুতলায় কিছু নেতা বিজেপির হয়ে কাজ করছেন বলেও এলাকায় গুঞ্জন রয়েছে। তা কাটাতেই সোমবার ওন্দার ভোট পাওয়ার উপর জোর দিয়েছেন তিনি। তৃণমূলের এক নেতার কথায়, ‘‘বাঁকুড়া-বিষ্ণুপুর দু’টি আসনেই সব অঙ্ক নির্ভর করছে বাম ভোটের উপর। তারা যদি বিজেপিতে যাওয়া ভোট কিয়দংশও ফেরাতে পারে, তা হলে তৃণমূলের সুবিধা হবে।’’ তবে তা কতটা হবে, তা নিয়ে সন্দিহান সিপিএম নেতারা। বাঁকুড়া জেলা সিপিএমের কাছে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ দুই আসনে জামানত রক্ষা করা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy