নরেন্দ্র মোদী-মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
আগামী ১ জুন উত্তর কলকাতা ভোট। শাসকদল সূত্রের খবর, তার আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দিয়ে তাঁর নির্ধারিত কর্মসূচির অতিরিক্ত একটি কর্মসূচি করানো হতে পারে। ২৩ এবং ২৭ মে মমতার পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি রয়েছে উত্তর কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রে। কিন্তু তার পরেও ওই লোকসভায় কেন্দ্রে তৃতীয় একটি কর্মসূচি নিতে চাইছে তৃণমূল। সবকিছু পরিকল্পনা মতো এগোলে সেই কর্মসূচি হবে ২৯ মে। ঘটনাচক্রে, তার আগের দিন, ২৮ মে উত্তর কলকাতার বিজেপি প্রার্থী তাপস রায়ের সমর্থনে রোড-শো করার কথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। উত্তর কলকাতার তৃণমূল প্রার্থী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থকেরা চাইছেন, মোদীর কর্মসূচির পর দিনই যাতে দিদি স্বয়ং পথে নামেন। সেই সূত্রেই প্রশ্ন উঠেছে, উত্তর কলকাতায় কি তৃণমূলের উপর ‘চাপ’ বাড়ছে?
তবে মোদীর রোড-শো যে এলাকায় রয়েছে, সে দিকে না গিয়ে উত্তর কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রের অন্য দিকে তৃণমূলনেত্রীকে দিয়ে আরও এক দফা প্রচার করাতে চাইছে শাসকদলের প্রথমসারির নেতৃত্ব। তবে মমতা মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সে ব্যাপারে ‘সবুজ সঙ্কেত’ দিয়েছেন বলে জানা যায়নি। তৃণমূল চায়, ২৮ তারিখ মোদীর রোড শোয়ের পরে ২৯ তারিখ মূলত সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় মমতাকে দিয়ে রোড শো করাতে। তবে সমস্তটাই এখনও ‘পরিকল্পনা’র স্তরে রয়েছে। দিদি সময় দিলে তবেই তা চূড়ান্ত হবে।
উত্তর কলকাতার ভোট নিয়ে তৃণমূলের অন্দরে বিবিধ সমীকরণ আগে থেকেই কাজ করছে। ওই কেন্দ্রের প্রার্থী সুদীপের বিরোধিতা করে দল ছেড়েছেন তাপস রায়। তিনি গিয়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। এবং উত্তর কলকাতা কেন্দ্রে তাঁকেই প্রার্থী করেছে পদ্মশিবির। তৃণমূলের এখনও তাপসের কিছু ‘হিতৈষী’ রয়ে গিয়েছেন বলেই দলীয় সূত্রের খবর। তাঁরা সুদীপকে জেতানোর জন্য ‘সর্বশক্তি’ দিয়ে ময়দানে নামবেন কি না, তা নিয়ে দলেরই একাংশ সন্দিহান। তৃণমূলের ভোটের একটা অংশ কংগ্রেসে চলে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই ৬২ নম্বর ওয়ার্ডের (আলিমুদ্দিন স্ট্রিট এবং রিপন স্ট্রিট এলাকা) প্রায় এক হাজার তৃণমূলকর্মী কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন। উত্তর কলকাতার সিপিএম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী প্রদীপ ভট্টাচার্যের হাত থেকে কংগ্রেসের পতাকা নিয়েছেন তাঁরা। ভোটের সময় এমন দলবদল বিরল ঘটনা নয়। তবে ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ হল, ওই যোগদানের ভিডিয়ো ‘সুদীপ-বিরোধীরা’ ছড়িয়ে দিয়েছেন সমাজমাধ্যমে।
তৃণমূল সূত্রের খবর, দলের শীর্ষ সারির এক নেতা মঙ্গলবারই তৃণমূলের উত্তর কলকাতার দুই প্রবীণ বিধায়ককে ফোন করেছিলেন। তাঁদের সরাসরি বার্তা দেওয়া হয়েছে এই মর্মে যে, তাঁদের দু’টি বিধানসভা থেকে সুদীপ যেন পর্যাপ্ত পরিমাণে ‘লিড’ পান। ওই দুই বিধায়ককে অনুনয়ের সুরেই শীর্ষনেতৃত্বের তরফে বলা হয়েছে, এখন প্রার্থী বদল সম্ভব নয়। তাই তাঁরা যেন দলের প্রার্থীর হয়েই কাজ করেন। ঘটনাচক্রে, ওই দুই বিধায়ক তখন নিজেদের মধ্যে বৈঠক করছিলেন। সেই বৈঠক চলাকালনই পরপর ফোন পান তাঁরা।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার মমতা প্রথম উত্তর কলকাতার প্রচারে নামবেন। তিনি সভা করবেন বৌবাজারে ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া মোড়ে। ঘটনাচক্রে, ওই এলাকাতেই বাড়ি তাপসের। তাপস দীর্ঘদিনের নেতা। ওই এলাকাতেই এতদিন রাজনীতি করেছেন। বৌবাজার এলাকা থেকেই নেতা হিসেবে তাঁর প্রতিষ্ঠা। আমহার্স্ট স্ট্রিট সংলগ্ন এলাকায় তাঁর ‘গ্রহণযোগ্যতা’ রয়েছে। কলকাতা পুরসভার ৪০, ৪৮, ৪৯, ৫০ এবং ৫১ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় তাপস এতদিন রাজনীতি করেছেন। ফলে ওই ওয়ার্ডগুলির ভোটে কী হবে, তা নিয়ে তৃণমূলের মধ্যে আলোচনা রয়েছে। দলের একটা অংশের আশঙ্কা যে, ‘ব্যক্তি’ তাপসের জন্য দলের ভোট বিজেপির দিকে চলে যেতে পারে। প্রচারের শেষ লগ্নে এসে সেটা রুখতে চাইছে তৃণমূল।
বিজেপিও উত্তর কলকাতাকে ‘ফোকাস’ করে লড়তে চাইছে। নরেন্দ্র মোদী তো বটেই, চার মুখ্যমন্ত্রীও তাপসের হয়ে প্রচারে নামছেন। তাঁরা হলেন ত্রিপুরা, অসম, মধ্যপ্রদেশ এবং রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী। শুভেন্দু অধিকারী, সুকান্ত মজুমদারেরাও উত্তর কলকাতায় ঝাঁপাচ্ছেন বলে খবর। মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত উত্তর কলকাতার তৃণমূল জানাতে পারেনি, দলের সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সুদীপের হয়ে প্রচারে নামবেন কিনা। তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির জন্য যা ‘তাৎপর্যপূর্ণ’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy