ব্রিগেডে বক্তা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার। —নিজস্ব চিত্র।
১০ মিনিটের একটি ভিডিয়ো চালালেন জায়ান্ট স্ক্রিনে। বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙা থেকে বিশ্বভারতী বিতর্ক, একের পর এক ইস্যুর ছবি দেখিয়ে বিজেপিকে নিশানা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। অভিযোগ, বাংলার মনীষীদের সম্পর্কে বারংবার অসম্মানজনক মন্তব্য এবং ব্যবহার করেছেন বিজেপি নেতারা।
‘‘বলুন কার গ্যারান্টি? মোদী না দিদির?’’ সুর চড়িয়ে অভিষেকের সংযোজন, ‘‘লড়াইয়ের ময়দানে লড়ে নেব। খেলা হবে। তৈরি থেকো বিজেপির বন্ধুরা। জনগর্জন কী, আজকে শুধু একটা ট্রেলার দেখালাম, সিনেমাটা বাংলার আপামর জনতা দেখাবে।’’
‘‘আমি যে কথা বলি, কেউ বিশ্বাস করবেন, কেউ করবেন না। কিন্তু ছবি মিথ্যা বলবে না। আপনাদের ১০ মিনিটের একটি ভিডিয়ো দেখাব। এরা (বিজেপি সরকার) মানুষকে ভাতে মারার চক্রান্ত করেছে। আপনি কার সঙ্গে থাকবেন, সেই সিদ্ধান্ত তার পর আপনি নিন।’’
‘‘প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বলেছেন....’’ র্যাম্পে কিছুটা হেঁটে এগিয়ে আবার শুরু করলেন অভিষেক। জানালেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পৌঁছে গিয়েছেন। আবাস প্রকল্পে মোদীর দাবি খণ্ডন করে চিঠি দেখিয়ে অভিষেক বললেন, ‘‘২০২২-’২৩ এবং ২০২৩-’২৪ অর্থবর্ষে আবাসের একটি টাকাও দেয়নি কেন্দ্র। প্রধানমন্ত্রীকে বলব, শ্বেতপত্র প্রকাশ করুন।’’ অভিষেক আরও বলেন, ‘‘কত টাকা ১০০ দিনের কাজে দিয়েছেন, কত টাকা আবাসে দিয়েছেন, তার শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে যদি না-ও পারেন, বিজেপির যে কোনও নেতা, কেন্দ্রীয় সরকারের যে কোনও অফিসারকে কলকাতায় পাঠাবেন। চ্যানেল, সঞ্চালক, সময় আপনি ঠিক করুন। দুধ কা দুধ, পানি কা পানি হয়ে যাবে।’’
‘‘কার পক্ষে থাকবেন? যিনি ভাষণ দেন, না যিনি রেশন দেন?’’
‘‘প্রধানমন্ত্রী ক্ষমা চেয়েছেন? দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলছেন। আর সবচেয়ে বড় দুর্নীতিগ্রস্তটা তাঁর পাশে বসে রয়েছে।’’
‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যদি না থাকতেন, বাংলার কোটি কোটি মানুষকে আজও বন্দুকের নলের নীচে মাথা নত করে থাকতে হত। আমরা লড়ে দেখিয়েছি। করে দেখিয়েছি।’’
‘‘দিদি না মোদী? কার গ্যারান্টি চায় বাংলা? মোদী না দিদি?’’
আবার বিদ্যাসাগর কলেজে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার ঘটনায় বিজেপিকে দুষলেন অভিষেক। অভিযোগ করলেন, বাংলা বিরোধীদের জনপ্রতিনিধি করেছে বিজেপি।
‘‘আমি বলব, জনগণের গর্জন। আপনারা বলবেন, বাংলা বিরোধীদের বিসর্জন। এটা মানুষের ক্ষমতা প্রমাণের ব্রিগেড।’’
‘‘আপনাদের টাকা আপনারা পাবেন। পঞ্চায়েত ভোটের এক মাসের মধ্যে ব্যবস্থা আমরা করব বলেছিলাম। করেছি। আজও করব।’’
‘‘কেউ বলছে, একে একে ছেড়ে চলে যাচ্ছে, ক’দিন পর তৃণমূল দলটাই থাকবে না। আমরা ঠিক করেছিলাম, এদের কাছে টাকাপয়সা আছে, ইলেকশন কমিশন আছে, ইডি-সিবিআই আছে। তৃণমূলের কাছে মানুষ আছে। একটা প্রতিযোগিতা হোক। আগামীর রায়, বাংলা বিরোধীরা বিদায়।’’
‘‘দু’সপ্তাহের কম সময়ের মধ্যে ব্রিগেডে সমাবেশের ঘোষণা করেছিলাম। বিগত দিনগুলিতে যত জনসভা হয়েছে, তৃণমূল বাদে যারা সভা করেছে, তার প্রস্তুতি নিতে ছ’মাস লেগেছে। আমরা ১২ দিনে করে দেখালাম।’’
র্যাম্পে হাঁটতে হাঁটতে মুষ্টিবদ্ধ করে উপরের দিকে হাত তুললেন অভিষেক। বার কয়েক হাত ঝাঁকালেন। এ যেন কর্মী-সমর্থকদের চাঙ্গা করার এক বার্তা।
মঞ্চে পৌঁছলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। হাত নাড়লেন কর্মীদের উদ্দেশে। প্রণামও করলেন। র্যাম্পে নতজানু হয়ে প্রণাম অভিষেকের।
ব্রিগেডে মঞ্চে পৌঁছলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
২০১৯ সালের পর ২০২৪ সাল। পাঁচ বছর পর আবার ব্রিগেডে সমাবেশ করছে তৃণমূল। লোকসভা ভোটকে সামনে রেখে ‘জনগর্জন’ সভায় বক্তব্য করছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। মোদী জমানাকে তিনি জমিদারির সঙ্গে তুলনা করেছেন। অভিযোগ, বাংলাকে বঞ্চিত করে রেখেছে কেন্দ্রীয় সরকার।
তৃণমূলের অভিযোগ, ১০০ দিনের কাজ, আবাস যোজনা, গ্রাম সড়ক যোজনা-সহ একাধিক প্রকল্পে বিপুল পরিমাণ অর্থ বকেয়া রেখেছে কেন্দ্র। ‘প্রাপ্য’ আদায়ের দাবিতে কলকাতা থেকে নয়াদিল্লি পর্যন্ত আন্দোলন করেছেন অভিষেক।
লোকসভা ভোটকে সামনে রেখে ব্রিগেডে তৃণমূলের আয়োজিত সমাবেশের নাম ‘জনগর্জন সভা।’ বস্তুত, এই সমাবেশ থেকে বাংলায় লোকসভা নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু করল রাজ্যের শাসকদল। ব্রিগেড সমাবেশের আকর্ষণ তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy