হেমন্ত সোরেন। —ফাইল ছবি।
মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠানোর জবাব বিজেপিকে দিলেন ঝাড়খণ্ডের আদিবাসীরা।
রাজ্যে আদিবাসী প্রধান ৫টি সংরক্ষিত আসনের সব ক’টিতে বিজেপিকে পরাজিত করেছে জেএমএম (ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা) এবং তার জোটসঙ্গী কংগ্রেস। জেএমএম ৩টি এবং কংগ্রেস ২টি আসনে জয়ী হয়েছে। বাকি ৮টি আসন পেয়েছে বিজেপি, একটি তাদের জোটসঙ্গী আজসু। খুটি কেন্দ্রে প্রায় দেড় লক্ষ ভোটে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অর্জুন মুন্ডাকে পরাজিত করেছেন কংগ্রেস প্রার্থী কালীচরণ মুন্ডা। জেএমএম-এর সভাপতি শিবু সোরেনের ঘর ভাঙিয়ে তাঁর বড় বউমা সীতাকে দুমকায় নিয়ে গিয়ে প্রার্থী করেও গড় রক্ষা করতে পারেনি বিজেপি।
সিংভূম, খুটি, দুমকা, রাজমহল এবং লোহারডাগা— জনজাতিদের জন্য সংরক্ষিত ঝাড়খণ্ডের এই পাঁচটি লোকসভা আসনের সব ক’টিতে বিজেপি পরাজিত হয়েছে। জেএমএম মুখপাত্র সুপ্রিয় ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, প্রচারে তাঁরা জোর দিয়েছিলেন আদিবাসী নেতা হেমন্ত সোরেনের প্রতি নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহদের ‘অবিচারের’। তিনি বলেন, এই ‘অবিচারের বিরুদ্ধে লড়াই’-এ হেমন্তের স্ত্রী কল্পনাকেও রাজনীতিতে নামতে হয়েছে। এ বার আদিবাসীরা ভোট-বাক্সে তার জবাব দিন। সুপ্রিয় বলেন, “প্রতিক্রিয়া দেখেই বুঝেছিলাম, সুযোগ এলেই এর জবাব দেবেন আদিবাসীরা। হয়েছেও তাই।” তিনি জানান, গুরুজি নামে পরিচিত শিবুর নিজের এলাকা দুমকা আসনটি ছিল জেএমএম-এর সম্মানের লড়াই।
শিবুর অসুস্থতার কথা প্রচারে এনে দুমকা কেন্দ্রে ২০১৯-এ বিজেপি তাঁকে পরাজিত করে। এ বার শিবুর বড় ছেলে দুর্গার স্ত্রী জামা-র বিধায়ক সীতাকে দলে টেনে দুমকা আসন ধরে রাখার কৌশল নিয়েছিল বিজেপি। দুর্গা মাত্র ৪০ বছর বয়সে মারা যাওয়ার পর মেজ ছেলে হেমন্তকে সরকার ও দলের মাথায় তুলে আনেন শিবু। কিন্তু হেমন্ত গ্রেফতার হওয়ার পরে তাঁর স্ত্রী কল্পনাকে নেতৃত্বে আনা নিয়ে গৃহযুদ্ধ বেধে যায় শিবুর পরিবারে। সীতা বুঝে যান, তিনি আর গুরুত্ব পাবেন না। বিজেপি সেই সুযোগে পুরনো দুর্নীতির মামলাকে হাতিয়ার করে সীতার কাছে পৌঁছে যায় বলে খবর। অভিযোগ, ইডি-র হাত থেকে বাঁচতে বিজেপিতে যোগ দেন তিনি। কিন্তু দুমকায় জেএমএম প্রার্থী নলিন সোরেনের কাছে ২২ হাজার ৫২৭ ভোটে পরাজিত হয়েছেন সীতা। অনেকেরই আশঙ্কা এই পরাজয়ে কার্যত সীতার ‘পাতালপ্রবেশ’ই হতে চলেছে। কারণ, বিজেপির স্থানীয় নেতৃত্বের কাছেও গুরুত্ব হারালেন ‘গুরুজি কা বহু’। জেএমএম-এ তাঁর ফেরার দরজাও কার্যত বন্ধ।
হেমন্ত জেলে যাওয়ার আগে স্ত্রী কল্পনার হাতে সরকারের দায়িত্ব তুলে দিতে চাইলেও তা হয়নি প্রধানত বউদি, জামা-র বিধায়ক সীতা এবং ছোট ভাই দুমকার বিধায়ক বসন্তের আপত্তিতে। বর্ষীয়ান চম্পাই সোরেনকে মুখ্যমন্ত্রী করে দল সামাল দেয়। কিন্তু লোকসভা নির্বাচনে দলের নেতৃত্ব দিয়ে সাফল্যের মুকুট মাথায় তুলে নিলেন সেই কল্পনা। উচ্চশিক্ষিত সপ্রতিভ কল্পনা সোরেন যেমন গান্ডে বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন, পাশাপাশি ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠকে অংশ নিয়ে সনিয়া-প্রিয়ঙ্কা গান্ধীর নজরে পড়েন। এই উপনির্বাচনে ১ লক্ষ ৯ হাজার ৮২৭ ভোটের ব্যবধানে কল্পনা পরাজিত করেছেন বিজেপির প্রার্থীকে।
তাই দল ও সমাজের পুরুষতন্ত্রকে পরাস্ত করে কল্পনা সোরেন ঝাড়খণ্ড তথা জাতীয় রাজনীতির মুখ হয়ে উঠতে পারেন বলে আশা অনেকেরই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy