ইভিএম নিয়ে ভোটকেন্দ্রের পথে। আমডাঙায়। ছবিঃ সুদীপ ঘোষ।
এক দিকে মতুয়া প্রধান বনগাঁ, আর এক দিকে অর্জুন সিংহের ব্যারাকপুর। সোমবার রাজ্যে লোকসভা ভোটের পঞ্চম দফায় সাতটি কেন্দ্রের মধ্যে রয়েছে এই দুই আসনও, যেখানে প্রচারের মাত্রা উচ্চগ্রামে বেঁধে গিয়েছিল। ফলে উত্তাপ ভোটযন্ত্র ছাপিয়ে কেন্দ্র দু’টির অলিতে গলিতেও ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা। বিশেষ করে ভোটের আগের রাতেই কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী তথা বিজেপি প্রার্থী শান্তনু ঠাকুরের উপরে হামলার অভিযোগ উঠেছে। গঙ্গা তীরবর্তী ব্যারাকপুর অর্জুন (সিংহ) বনাম পার্থে (ভৌমিক) তেতে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা প্রশাসনেরই একাংশে। এর সঙ্গে হাওড়া, উলুবেড়িয়া তো আছেই। ভোটগ্রহণ হবে হুগলি জেলার শ্রীরামপুর, হুগলি ও আরামবাগ কেন্দ্রেও।
অর্জুন, পার্থ, শান্তনু ছাড়াও এই দফায় ভাগ্য নির্ধারণ হবে লকেট চট্টোপাধ্যায়, রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, দীপ্সিতা ধর, বিশ্বজিৎ দাস, প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়, রথীন চক্রবর্তী প্রমুখের। আরামবাগে যে-ই জিতুন, সেই কেন্দ্রের মানুষ এই যাত্রায় নতুন সাংসদ পেতে চলেছে।
স্বাভাবিক ভাবেই এই দফায় কেন্দ্রীয় বাহিনী বেশ কিছুটা বাড়িয়েছে নির্বাচন কমিশন। চতুর্থ দফার ভোটের দিন বিক্ষিপ্ত হলেও কিছু গোলমাল হয়েছে। ভোট পরবর্তী হিংসার ঘটনাও ঘটেছে দু-একটি জায়গায়। ফলে পঞ্চাম দফায় কেন্দ্রীয় বাহিনী বাড়িয়ে ৬৫০ কোম্পানি মোতায়েন করা হয়েছে। রাজ্য পুলিশের ২৯,১৭২ জন কর্মীও থাকছেন নিরাপত্তার দায়িত্বে। সাতটি কেন্দ্র মিলিয়ে ৫৬৭টি কুইক রেসপন্স টিম বা কিউআরটি ঘুরবে বলে কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে। জাতীয় নির্বাচন কমিশন যে এই দফা নিয়ে কিছুটা চিন্তিত, তা বোঝা গিয়েছে আরও একটি ক্ষেত্রে। এই দফায় ক্রিটিক্যাল বা ঝুঁকিপূর্ণ বুথের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
কমিশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, শতাংশের হারে হুগলি লোকসভা কেন্দ্রে ঝুঁকিপূর্ণ বুথের সংখ্যা সর্বোচ্চ, প্রায় ৮৭.২৫%। সেখানে ২০৪৮টির মধ্যে ১৭৮৭টি বুথই এমন গোত্রের। পিছিয়ে নেই আরামবাগও। সেখানে ২০৭৮টির মধ্যে ১৭৭০টি বা ৮৫.১৭% বুথই ঝুঁকিপূর্ণ। শ্রীরামপুরে ঝুঁকিপূর্ণ বুথ রয়েছে প্রায় ৫৯.৫৩%। সব মিলিয়ে এই দফায় সাতটি লোকসভা কেন্দ্রের ১৩ হাজার ৪৮১টির মধ্যে ৭৭১১টি বুথই (৫৭.১৯%) কমিশনের ঝুঁকিপূর্ণ-তালিকায়।
ব্যারাকপুরে যেখানে মোট বুথ ১৫৯১, সেখানে ঝুঁকিপূর্ণ বুথের সংখ্যা ১০৬৯। অর্থাৎ, ৬৭.১৯%। ব্যারাকপুর কমিশনারেটে কিউআরটি থাকছে ৫১টি। এমন একটি উত্তেজনাপ্রবণ আসনে, যেখানে রাজনৈতিক গোলমালের সাম্প্রতিক ইতিহাসও রয়েছে, সেখানে কেন ঝুঁকিপূর্ণ বুথের শতাংশের হার হুগলি বা আরামবাগের তুলনায় কম, সেই প্রশ্নও উঠেছে। এখানকার সাংসদ অর্জুন সিংহ ২০১৯ সালে বিজেপির টিকিটে জেতেন। তার পরে তিনি তৃণমূলে যোগ দেন। এ বারে সেই দল থেকে টিকিট না পেয়ে বিজেপিতে ফিরে এসে প্রার্থী হয়েছেন। তাঁর বিপরীতে আছেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূল প্রার্থী পার্থ ভৌমিক।
বনগাঁ বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী হওয়ায়, সেখানকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভিন্ন ধরনের। শুক্রবার সন্ধ্যা ছ’টা থেকে ভোট শেষ হওয়া না পর্যন্ত উত্তর ২৪ পরগনার সীমান্ত দিয়ে ঢোকা-বেরনোয় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন। তবে চিকিৎসার কারণে, বনগাঁর ভোটার হলে এবং পচনশীল দ্রব্যের গাড়ি হলে সীমান্ত পেরনো যাবে যথাযথ নথি দেখিয়ে।
নিরাপত্তার প্রশ্নেও কোনও সমঝোতা করা যে হবে না, সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনগুলিকে ফের সেই বার্তা আবারও দিয়েছে দিল্লির নির্বাচন সদন। আগের দফাগুলির মতো এই দফার ভোটেও বাড়তি তৎপর থাকতে বলা হয়েছে। হুগলি এবং হাওড়া গ্রামীণ এলাকায় সবচেয়ে বেশি কিউআরটি মোতায়েন করা হয়েছে, যথাক্রমে ১৬৬টি এবং ১০৫টি। সব বুথে ওয়েবকাস্টিংও হবে।
অন্য দিকে, ২৫ মে, ষষ্ঠ দফা ভোটের আগেই একসঙ্গে চার পুলিশ আধিকারিককে বদলি করল নির্বাচন কমিশন। রবিবার লিখিত ভাবে কমিশন রাজ্যকে জানিয়েছে, পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, পূর্ব মোদিনীপুরের কাঁথির এসডিপিও দিবাকর দাস, ওই জেলারই ভূপতিনগর থানার ইনসপেক্টর গোপাল পাঠক এবং পটাশপুর থানার ইনসপেক্টর রাজু কুণ্ডুকে নির্বাচনের সঙ্গে যুক্ত নয়, এমন পদে পাঠাতে হবে। তাঁদের জায়গায় উপযুক্ত অফিসারদের নাম আজ, সোমবার সকাল ১০টার মধ্যে কমিশনে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রাজ্যকে।
কমিশন সূত্রের খবর, কাশ্মীরে কর্মরত ১০০ জন কনস্টেবলকে ষষ্ঠ এবং সপ্তম দফায় এ রাজ্যে ব্যবহার করতে চাইছে কমিশন। কাশ্মীরে থাকা কেন্দ্রীয় বাহিনীর কয়েক জন অফিসারকেও আনার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy