—প্রতীকী চিত্র।
ভোটের দিনে ভোটারদের বাড়ি থেকে বার করে আনতে দলের ‘পন্না প্রমুখ’ (পৃষ্ঠা প্রমুখ)-দের দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতেই হবে বলে মনে করছেন বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব।
লোকসভা ভোটের প্রথম পর্বে ভোটদানের হার দেখে বিজেপি উদ্বিগ্ন। চূড়ান্ত হার অবশ্য এখনও জানিয়ে উঠতে পারেনি নির্বাচন কমিশন। তবে সূত্রের মতে, গত বারের লোকসভা ভোটের প্রথম দফার চেয়ে এ বারের প্রথম পর্বে প্রায় চার শতাংশ ভোট কম পড়েছে। আর এই ভোটদানের কম হার লক্ষ্য করা গিয়েছে এনডিএ-শাসিত বিহার, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যগুলিতে। অথচ এই রাজ্যগুলি থেকেই বিজেপি সর্বাধিক আসন দখলের লক্ষ্য নিয়েছে। এই অবস্থায় বিজেপি নেতৃত্ব মনে করছেন, প্রথম দফার ভোটে যা দেখা গিয়েছে, তা চলতে থাকলে গত বারের তিনশো আসন ছোঁয়াও মুশকিল হবে। তাই দলের পক্ষে সামগ্রিক ভোটদানের হার বাড়াতে বুথ পর্যায়ে সরাসরি ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা পৃষ্ঠা প্রমুখদের আরও বেশি করে সক্রিয় ভূমিকা নেওয়ার বিষয়টিতে জোর দিয়েছেন তাঁরা।
সাধারণত যে রাজ্যগুলিতে বিজেপি শক্তিশালী, সেখানে তাদের বুথ-পিছু আট থেকে দশ জনের দল থাকে। এই দলে পন্না প্রমুখের দায়িত্বে থাকেন দু’-তিন জন। এঁদের কাজ, নিজস্ব এলাকায় ভোটার তালিকার এক-একটি ‘পন্না’ বা পৃষ্ঠায় নাম থাকা (কমপক্ষে তিরিশ জন) প্রত্যেক ভোটারের বাড়ি গিয়ে ব্যক্তিগত সম্পর্ক তৈরি করা। তাঁদের সঙ্গে দেখা করার পাশাপাশি নিয়মিত ভাবে ফোনে যোগাযোগ রাখা। সরকারের কাজের সুফল সংক্রান্ত প্রচার একেবারে তৃণমূল স্তরে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্বও থাকেন এই পৃষ্ঠা প্রমুখদের উপরে। বিজেপি নেতৃত্ব মনে করছেন, এ বারের ভোটে প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতার চোরা হাওয়ার সামনে পৃষ্ঠা প্রমুখদের সক্রিয়তার উপরেই তাঁদের জেতা-হারা অনেকাংশে নির্ভর করছে।
প্রথম দফা নিয়ে নরেন্দ্র মোদীর দলের উদ্বেগের আরও একটি কারণ হল, গেরুয়া শিবিরের বহু ভোটার যখন ভোটের ওই দিনে বাড়িতে থাকাই শ্রেয় বলে মনে করেছেন, তখন মুসলিম সমাজ দলবদ্ধ হয়ে ভোট দিতে গিয়েছে। বিজেপির আশঙ্কা, সংখ্যালঘুদের ওই ভোটের অধিকাংশই গিয়েছে বিজেপি-বিরোধী প্রার্থীদের ঘরে।
দ্বিতীয় পর্বের ভোটে এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি রুখে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের ভোটের লাইনে আনতে চায় বিজেপি। তার রণকৌশল ঠিক করতে গত কাল রাতে বিজেপি সভাপতি জে পি নড্ডার বাড়িতে বৈঠকে বসেন অমিত শাহ। গভীর রাত পর্যন্ত চলা সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিজেপির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক তরুণ চুঘ, বিনোদ তাউড়েরা। সূত্রের খবর, পৃষ্ঠা প্রমুখেরা যাতে আরও বেশি করে বুথ পর্যায়ে সক্রিয় হন, সে দিকে নজর রাখতে বলা হয় বৈঠকে। উল্লেখ্য, অমিত শাহ নিজেই তাঁর রাজনৈতিক জীবনের গোড়ায় গান্ধীনগরের একটি বুথে পৃষ্ঠা প্রমুখের দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
বিজেপির এক-এক জন পৃষ্ঠা প্রমুখের হাতে যে জনা তিরিশেক ভোটারের দায়িত্ব থাকে, তাঁরা সবাই যাতে ভোট দিতে বুথে যান, তা নিশ্চিত করাটাও সংশ্লিষ্ট প্রমুখের দায়িত্ব। ওই তিরিশ জন ভোটারের মধ্যে কত জনের ভোট বিজেপি পাচ্ছে অথবা পাচ্ছে না, সে সম্পর্কিত একটি রিপোর্টও দলীয় নেতৃত্বকে জমা দেন পৃষ্ঠা প্রমুখেরা। এর ভিত্তিতে নেতৃত্ব অনেকাংশে ধারণা করে নিতে পারেন যে, সংশ্লিষ্ট বুথটিতে তাঁরা জিতবেন না হারবেন।
সূত্রের খবর, প্রথম পর্বের ভোটে দলের পৃষ্ঠা প্রমুখদের একটা বড় অংশের ভূমিকায় অসন্তুষ্ট বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব। দল মনে করছে, ভোটারদের বাড়ি থেকে ভোটের লাইনে টেনে আনার কাজে পৃষ্ঠা প্রমুখদের যতটা দায়বদ্ধতা দেখানোর দরকার ছিল, তা প্রথম পর্বের ভোটে দেখা যায়নি। বরং অনেক ক্ষেত্রেই গা-ছাড়া দেখিয়েছে পৃষ্ঠা প্রমুখদের।
এই কারণেই গত কালের বৈঠকে পৃষ্ঠা প্রমুখদের আরও বেশি করে সক্রিয় ভূমিকা নেওয়ার উপরে জোর দেন বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। সূত্রের খবর, বিনোদ তাউড়ে, তরুণ চুঘদের বলা হয়েছে পৃষ্ঠা প্রমুখদের সক্রিয় করে তুলতে। পৃষ্ঠা প্রমুখেরা ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন কি না, তার উপরেও প্রয়োজনীয় নজরদারির পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। প্রথম দফার নির্বাচনের পরে খোদ নরেন্দ্র মোদীও তাঁর মেরুকরণের রাজনীতির পাশাপাশি বুথভিত্তিক জয় ছিনিয়ে আনার বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন। ভোটের দিন শেষরক্ষা করতে কর্মীদের আরও বেশি ঘাম ঝরানোর পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy