Advertisement
Back to
Lok Sabha Election 2024

শাসক শিবিরে আশা উত্তরে ‘শাপমোচনে’র, আত্মবিশ্বাসী বিজেপি নেতৃত্বও

অধরা উত্তরের মাটিতে দলের পতাকা দেখতে মরিয়া ছিল তৃণমূল। রাজ্যে ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের পর থেকেই এই পরিকল্পনা করেছিলেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

—প্রতীকী ছবি।

রবিশঙ্কর দত্ত , বিপ্রর্ষি চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২৪ ০৭:৩৮
Share: Save:

প্রথম দফার তিন আসনেই ভোটের পরে বিজয় মিছিল বার করেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। বিরোধীদের মনস্তাত্ত্বিক চাপে রাখতে সে ছিল কৌশলই। তবে হিসেব-নিকেষের পরে উত্তরবঙ্গে ‘শাপমোচনে’র আশায় রয়েছে রাজ্যের শাসক দল। প্রথম দু’দফায় ভোটে দুটি আসন কোচবিহার এবং রায়গঞ্জে জয় নিশ্চিত বলেই ধরছেন তারা।

অধরা উত্তরের মাটিতে দলের পতাকা দেখতে মরিয়া ছিল তৃণমূল। রাজ্যে ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের পর থেকেই এই পরিকল্পনা করেছিলেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। গত তিন বছরে দফায় দফায় আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি এবং কোচবিহারে সভা-সমাবেশ করেছেন তাঁরা। স্থানীয় স্তরে রাজনৈতিক এবং সামাজিক বিষয়ে একাধিক সমীক্ষা করিয়ে সেই মতো বেশ কিছু পদক্ষেপের ব্যবস্থাও করেছিলেন। আসনে শূন্যতা কাটানোর পাশাপাশি এ বার ভোট বাড়বে বলেও মনে করছেন দলীয় নেতৃত্ব। দলের এক নেতার কথায়, “আগের লোকসভার থেকে এই ৬টি কেন্দ্রে বিধানসভা ভোটে আমাদের সমর্থন বেড়েছে। তা ধরে রাখা গেলেই উত্তরে শাপমুক্তি ঘটে যাবে!”

উত্তররবঙ্গে পুরনো সাফল্য ধরে রাখার বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী বিজেপি শিবিরও। তারা মনে করছে, দ্বিতীয় দফায় ভোট হওয়া তিন কেন্দ্র দার্জিলিং, রায়গঞ্জ ও বালুরঘাট বিজেপির দখলেই থাকবে। তবে দার্জিলিং ও রায়গঞ্জে ব্যবধান কেমন হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে কেন্দ্রের শাসক দলের অন্দরে।

টানা প্রস্তুতির ফলে এ বার প্রথম দফার ভোটে তিনটি আসনেই ভাল লড়াই দেওয়া গিয়েছে বলে মনে করছে তৃণমূল। কোচবিহারে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের বিরুদ্ধে গোড়া থেকেই কোমর বেঁধে নেমেছিল তৃণমূল। দলের হিসেব, আগে লোকসভা ও বিধানসভা ভোটে না পেলেও এ বার কম-বেশি ৩০% সংখ্যালঘু ভোট পুরোপুরি তৃণমূলের ঝুলিতে গিয়েছে। সেই সঙ্গে রাজবংশী ভোটের একাংশ বিজেপির দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এই অঙ্কেই আসনটিতে জয় নিয়ে দলের ভোট-কুশলীরা কার্যত নিশ্চিত। তাঁদের ব্যাখ্যা, “এই অঞ্চলে উত্তরবঙ্গের বঞ্চনার অভিযোগকে আলাদা রাজ্যের দাবিতে নিয়ে গিয়ে প্রচার করে গত লোকসভা বিজেপি বাড়তি সুবিধা পেয়েছিল। এ বার স্থানীয় স্তরে ‘ডাবল ইঞ্জিন’ হিসেবে সে সংক্রান্ত কোনও প্রশ্নেরই জবাব দিতে পারেনি তারা। বরং, তৃণমূল গোটা রাজ্যের সঙ্গে উত্তরবঙ্গের অভিন্ন পরিচিতির পক্ষে মানুষের মন পেয়েছে।”

প্রথম দফায় ভোট হওয়া জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার নিয়ে তৃণমূলের অন্দরে দু’রকম পর্যালোচনা রয়েছে। জয় সম্পর্কে না হলেও দু’টি আসনে আগের থেকে এগিয়ে থাকার ব্যাপারে অবশ্য দুই অংশই আশাবাদী। একটি অংশের হিসেবে জলপাইগুড়িতে তৃণমূল ও বিজেপির এ বারের লড়াই ছিল প্রায় ৫০-৫০। আলিপুরদুয়ারে জনবিন্যাস এবং সাংগঠনিক শক্তির দিক থেকে তা কিছুটা কম। আলিপুরদুয়ার লোকসভা আসনের অন্তর্গত ৭টি বিধানসভার একটিও তৃণমূলের হাতে নেই। সে ক্ষেত্রে লোকসভায় জয় না পেলেও অন্তত দু’টি বিধানসভা আসনে এগিয়ে থাকা এবং গোটা লোকসভায় ব্যবধান কমানো যাবে বলেই দাবি তাদের।

দ্বিতীয় দফার ভোটে রায়গঞ্জকেই নিশ্চিত প্রাপ্তি বলে মনে করছে তৃণমূল। গত ২০১৯ সালের হিসেবে এই আসনে ৬০ হাজারের বেশি ভোটে পিছিয়ে ছিল তৃণমূল। কিন্তু গত বিধানসভা ভোটে ৭টি আসনের চারটি জিতেই বিজেপির থেকে ১ লক্ষ ৩৯ হাজার ভোটে এগিয়ে রয়েছে তৃণমূল। এ বার বিজেপির প্রার্থী বদল, রায়গঞ্জের বিজেপি বিধায়ককে লোকসভা ভোটে দলের প্রার্থী করতে পারার সুবিধা এখানে দলের আশার পক্ষে রয়েছে বলেই মনে করছেন তৃণমূলের নেতারা। বাম ও কংগ্রেস শিবিরও রায়গঞ্জ নিয়ে আশাবাদী। তাদের হিসেবে চাকুলিয়া, ইসলামপুর, গোয়ালপোখরে তাদের পক্ষে ভাল ভোট হয়েছে। রায়গঞ্জ ও হেমতাবাদ বিধানসভা এলাকার একাংশের রিপোর্টও ‘ইতিহাচক’। শেষ পর্যন্ত রায়গঞ্জ কেন্দ্রে বিজেপি ও কংগ্রেসের মধ্যে মূল লড়াই থাকবে বলে বাম এবং কংগ্রেস নেতাদের বক্তব্য।

বিজেপি অবশ্য জয় নিয়ে সংশয়ে নেই। দলের নেতৃত্বের ধারণা, দার্জিলিঙে গত লোকসভার ৪ লক্ষ ১৭ হাজারের ব্যবধান এ বার কমে যেতে পারে। এমনকি, সমতলের সঙ্ঘ-ঘনিষ্ঠ এক নেতার দাবি, এ বার জিতলে সমতলের তিনটি আসনের জন্যই সেটা সম্ভব হবে। পাহাড়ের ভোট সমান-সমান হয়ে যাবে। দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের বালুরঘাট আসনে অন্তত ৮০ হাজার ভোটে তাঁরা জিতবেন বলে দাবি বিজেপির উত্তরবঙ্গের এক পোড় খাওয়া নেতার।

রায়গঞ্জে স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বের আশা, তাঁরা যে ‘মেরুকরণ’ চেয়েছিলেন, শেষ পর্যন্ত তা হয়েছে। ফলে, বিজেপির দিকের ভোট সেখানে ঠিকই থাকবে। অপর এক নেতার কথায়, “সংখ্যালঘু ভোটটা ভাগ হল কি না, সেটা এখনও বোঝা যাচ্ছে না। সেটা হলে গত বারের ব্যবধান ধরে রাখতে পারব।”

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2024 TMC BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy