চিত্তরঞ্জন কলোনিতে দলের ভাঙচুর হওয়া ক্যাম্প অফিসে সৃজন ভট্টাচার্য। শনিবার। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী।
যে সময়টা তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী এসি ঘরে বসে খানিকটা আয়েসে কাটালেন, ভ্যাপসা গরমে গলদঘর্ম হয়ে সেই সময়টা বুথ থেকে বুথে টাট্টু ঘোড়ার মতো ছুটে বেড়ালেন সৃজন ভট্টাচার্য।
ঘামে শরীরে সঙ্গে লেপ্টে গেল লালের সঙ্গে ঘি রঙ মেশানো লম্বা ঝুলের খাদির পাঞ্জাবি। গোটানো জিন্সে হাওয়াই চটির দৌড় তবু থামল না। কখনও ছাপ্পা ভোট, কখনও ‘গো-ব্যাক’ শ্লোগানের মুখে শক্ত হল যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রের বাম-কংগ্রেস জোটের প্রার্থীর চোয়াল। তবে মেজাজ হারাননি। প্রতিটি পদচারণায় ছিল শিক্ষার ছাপ।
ভাঙড় থেকে উড়ে এল সন্ত্রাসের খবর। গাড়ির মুখ ঘুরিয়ে সেদিকে রওনা দেওয়ার মুখে জানিয়ে গেলেন, “ভাঙড়, যাদবপুর, সোনারপুর, বারুইপুরে তৃণমূল যে অশান্তি করবে জানাই ছিল। কিন্তু মানুষ দারুণ মুডে ভোট দিচ্ছেন। তৃণমূলের অন্তর্জলি যাত্রা শুরু হয়ে গিয়েছে।”
মাত্রই ৩১ বছর বয়স। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের এমএ। এক মুখ দাড়ি। জ্বলজ্বল করছে দু-চোখ। সকালে গড়িয়া স্টেশন অঞ্চল পেরিয়ে গঙ্গাজোয়ারার ভোট কেন্দ্র ঘুরে বারুইপুরে গিয়ে খবর পেলেন রামনগরের কাছে হিঞ্চি প্রাইমারি স্কুলে বসতে দেওয়া হচ্ছে না দলীয় এজেন্টকে। সেখানে পৌঁছতেই উড়ে আসে বিরোধীদের ‘গো ব্যাক’ স্লোগান।
পরিচিতমহলে ভীষণই একরোখা বলে নাম রয়েছে সৃজনের। ঠান্ডা মাথায় পাল্টা রুখে দাঁড়ানোর জন্য সুনামও আছে তাঁর। তাই, সেই বিরোধিতাকে ঝড়ের মুখে শুকনো পাতার মতো উড়িয়ে দিয়ে বসিয়ে এলেন দলীয় এজেন্টকে। সামনে কর্তব্যরত পুলিশ অফিসারকে দেখে অভিযোগ জানালেন, ভোট ঠিক করে হচ্ছে না। ছাপ্পা ভোট চলছে। সেই অভিযোগেও ছিল পরিমিতি বোধ।
তাঁকে সামনের আসনে নিয়ে ছুটে চলল গাড়ি। পিছনে সংবাদপত্র ও সংবাদমাধ্যমের কনভয়। বারুইপুরের কাছে বিশালক্ষী বিদ্যামন্দিরে গিয়ে থামল সেই কনভয়। গাড়িতেই খবর পান, রাস্তার ধারের ওই ভোটকেন্দ্রে স্থানীয় কাউন্সিলর ঢুকে বসে রয়েছেন। সৃজন পৌঁছতেই সেই কাউন্সিলরকে হাতে এক গোছা মোবাইল ফোন নিয়ে বেরিয়ে যেতে দেখা গেল। বাদানুবাদের প্রয়োজনটুকু পড়ল না।
যাদবপুর চিত্তরঞ্জন কলোনি এলাকা থেকে ধুন্ধুমার কাণ্ডের খবর এল! বাণী নিকেতন বিদ্যামন্দির ভোটকেন্দ্রের আশেপাশের একাধিক সিপিএমের ক্যাম্প অফিস তৃণমূল নাকি ভেঙে দিয়েছে। পাশের
চিত্তরঞ্জন কলোনির ত্রৈলোক্যনাথ ঘোষ প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের কাছে সিপিএমের ক্যাম্প অফিসেরও একই অবস্থা। দলীয় কর্মীদের অভিযোগ, তৃণমূলের বাইকবাহিনী এসে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছে। আহত, রক্তাক্ত হয়েছেন শম্পা কর্মকার আর তাঁর মেয়ে স্নেহা কর্মকার। সৃজন পৌঁছতেই ঢেউয়ের মতো আছড়ে পড়ল অভিযোগ। উড়ে এল যৌন হেনস্থার অভিযোগও!
৭৩ বছরের লালজি চৌধুরীও রক্তাক্ত। উঠে আসে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার কথা। সৃজন সেখানে পৌঁছে কর্মীদের নিয়ে ক্যাম্পগুলি আবার তৈরি করালেন। জানিয়ে দিলেন, “আমরা এখানে কান্নাকাটি করতে আসিনি। মানুষ ভোট দেবেই।” বয়স্ক মহিলাদের জটলা থেকেই হঠাৎ ভেসে আসে এক জনের কণ্ঠ, “কই, সৃজন কই? কে সৃজন?” এক জন মহিলা তর্জনি উঁচিয়ে চিনিয়ে দেন তাঁকে — “ওই তো মাসি। ওই যে দাড়ি-ভর্তি মুখ।” বয়স্ক মহিলার পাল্টা মন্তব্য, “ওমা! কী মিষ্টি ছেলেটা।”
তাঁর অবশ্য কানে গেল না কথাটা। হাতে সময় কম। মোবাইল ক্রমাগত বেজে চলেছে। দূরদূরান্ত থেকে ডেকে পাঠাচ্ছেন সহযোদ্ধারা। একতরফা মার চলছে। নাকতলার দলীয় কার্যালয়ে মিনিট কয়েক জিরিয়ে নেওয়ার ফাঁকে অনেক অনুরোধেও মুখে কিছু তুললেন না। চললেন হালতুর দিকে। সেখানকার সুচেতানগর বালিকা বিদ্যামন্দিরে নিজের ভোট দিতে গেলেন সৃজন।
ছেলের ভোটার স্লিপ হাতে নিয়ে অপেক্ষায় ছিলেন বাবা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy