অমিত শাহ। —ফাইল ছবি।
‘খেলা শুরু’!
প্রায় এক দশক পরে শরিক-নির্ভরতার প্রত্যাবর্তন ঘটল জাতীয় রাজনীতিতে। কারণ, বিহারে নীতীশ কুমার ও অন্ধ্রপ্রদেশে চন্দ্রবাবু নায়ডুকে পাশে না পেলে টানা তৃতীয় বার নরেন্দ্র মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদে দেখার স্বপ্ন বিজেপির চুরমার হয়ে যেত। আর সেই চন্দ্রবাবু কিন্তু প্রথম থেকেই শর্ত চাপাতে শুরু করেছেন বলে একটি সূত্রের দাবি। আর সেই শর্ত হল, অমিত শাহকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদে আনা যাবে না। বিদায়ী মন্ত্রিসভার দুই নম্বর শাহকে নিয়ে এত বড় শর্ত প্রবল গুঞ্জন তুলেছে স্বাভাবিক ভাবেই।
এ দিকে, ‘ইন্ডিয়া’ শিবিরও নীতীশ-নায়ডুকে পাশে পেতে পাল্টা তৎপরতা শুরু করায় আগামিকালই এনডিএ-র বৈঠক ডেকেছেন বিজেপি নেতৃত্ব। ওই দু’দল এনডিএর শরিক হলেও, মোদীর মতো ‘একনায়কতন্ত্রে’ বিশ্বাসী নেতার পক্ষে পাঁচ বছর শরিকদের মন জুগিয়ে সরকার বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব কি না, তা নিয়ে ফলপ্রকাশের দিনেই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। তেমনই ঘন ঘন মত বদলানোর জন্য কুখ্যাত এই দুই নেতার মন জোগাতে আর কী কী করতে হবে, সেই প্রশ্নও উঠেছে।
ভাবী মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নায়ডুকে ইতিমধ্যেই ফোন করে অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহ। কেন্দ্রে সরকার গড়ার প্রশ্নেও আলোচনা হয়েছে। সূত্রের মতে, চন্দ্রবাবুকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশের জন্য বিশেষ প্যাকেজের। অন্য দিকে, ঘন ঘন শিবির পাল্টানোর জন্য ‘পাল্টুকুমার’ নাম কেনা নীতীশ কুমারের সঙ্গেও আলোচনা সেরে রেখেছে বিজেপি। দলের একটি অংশের দাবি, প্রয়োজনে নীতীশকে উপ-প্রধানমন্ত্রী করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
মোদী ২০১৪ সালে যখন প্রথম দফায় সরকার গড়েছিলেন, এনডিএর শরিক ছিলেন চন্দ্রবাবু নায়ডু। কিন্তু অন্ধ্রপ্রদেশের জন্য বিশেষ প্যাকেজ না পাওয়ায় ২০১৮ সালে জোট ছেড়ে বেরিয়ে যান। এ বারে ভোটের আগে চন্দ্রবাবুর সঙ্গে হাত মেলায় বিজেপি। ওই রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে টিডিপি একার জোরে ক্ষমতায় আসার পাশাপাশি লোকসভাতেও টিডিপি-বিজেপি জোট ২৫টি আসনের মধ্যে এগিয়ে রয়েছে ২১টি আসনে।
অন্য দিকে, গত লোকসভায় এনডিএ ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিল নীতীশ কুমারের দল জেডিইউ। এ বছরের জানুয়ারিতে জেডিইয়ের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধে বিজেপি। আজ ওই রাজ্যের ৪০টি আসনের মধ্যে জেডিইউ ও বিজেপি এগিয়ে রয়েছে ৩৩টি আসনে। সব মিলিয়ে টিডিপির ১৬টি আসন ও জেডিইউয়ের ১৪টি মিলিয়ে ৩০টি আসনের সমর্থন না থাকলে এনডিএর রথ ম্যাজিক সংখ্যা ছোঁয়ার অনেক আগেই থেমে যেত।
কিন্তু সমস্যা হল, মোদী গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী ও পরে দু’দফায় দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে একনায়কের মতো সরকার চালিয়ে এসেছেন। সেই মোদী কি শরিকদের দাবি-দাওয়া মেনে নিয়ে সরকার চালাতে পারবেন? এ দিকে, নীতীশ-নায়ডু নিজেদের রাজ্যে মুসলিমদের প্রতি উদার মনোভাব নিয়ে চলেন। ফলে আগামী দিনে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের মতো আইন আনা কঠিন হয়ে পড়বে বলে বুঝতে পারছে গেরুয়া শিবির। বিজেপির রাজ্যসভার প্রাক্তন এক সাংসদের মতে, শরিকি তিক্ততা বাড়লে, আগামী দু-তিন বছরের মধ্যে ফের লোকসভা নির্বাচন হলে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
লোকসভার ভোটের আগে বিহারে জিতনরাম মাঁঝির দল হাম, উত্তরপ্রদেশে আরএলডি নেতা জয়ন্ত চৌধুরীর সঙ্গেও জোট করেছিল বিজেপি। আজ বিজেপির এক নেতার ব্যাখ্যা, ‘‘সে সময়েই সম্ভবত শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে খবর ছিল, একার পক্ষে বিজেপির ক্ষমতায় আসা সম্ভব নয়। সে কারণেই ছোট দলগুলিকে কাছে টানা শুরু করে বিজেপি।’’ ঘটনাচক্রে, খেটে গিয়েছে সেই সমীকরণ। পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে আরএলডি নিজে তো দু’টো আসন জিতেছে, একাধিক আসনেও জিততে সাহায্য করেছে বিজেপিকে। বিহারে মাঁঝির দল একটি আসনে জিতে এনডিএ-র শক্তিবৃদ্ধি করেছে। অমিত শাহ নিজে তাই জিতনরামকে ফোন করে এনডিএ বৈঠকে থাকার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy