সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। —ফাইল চিত্র।
পাঁচ বছর আগে সাকুল্যে ছিল তিন। তামিলনাড়ু থেকে দুই এবং অন্যটি কেরল থেকে। এ বার লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় দফা পেরিয়ে যাওয়ার পরে আসনের নিরিখে দুই সংখ্যায় পৌঁছে যাওয়ার আশা দেখছে সিপিএম।
দ্বিতীয় দফায় ভোট হয়ে গিয়েছে কেরলের ২০টি আসনেই। প্রথম ও দ্বিতীয় দফা মিলিয়ে ভোট মিটে গিয়েছে তামিলনাড়ু, রাজস্থান, ত্রিপুরার মতো রাজ্যেও। ভোটের পরে রাজ্যভিত্তিক যে প্রাথমিক পর্যালোচনা রিপোর্ট দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে এসেছে, তার ভিত্তিতেই দশের ঘরে আসন পৌঁছতে পারে বলে আশাবাদী সিপিএম। এই তালিকায় অবশ্য বাংলা নেই। শূন্যের গেরো কাটিয়ে এই রাজ্য থেকে লোকসভা আসন বার করার লক্ষ্যেই এখন মরিয়া সীতারাম ইয়েচুরি, মহম্মদ সেলিমেরা।
কেরলে গত বার ২০টি আসনের মধ্যে ১৯টি আসনই গিয়েছিল কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউডিএফের দখলে। সিপিএম পেয়েছিল কেবল আলপ্পুঝা আসন। সূত্রের খবর, এ বার ভোটের পরে সিপিএমের কেরল রাজ্য নেতৃত্বের প্রাথমিক রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, দল সেখানে কম করে ৮ এবং সর্বাধিক ১৫টি আসনও পেতে পারে! কেরল সিপিএমের ব্যাখ্যা, শবরীমালা মন্দির সংক্রান্ত আদালতের রায় কার্যকর করতে গিয়ে ২০১৯ সালে পিনারাই বিজয়নের সরকারকে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার মুখে পড়তে হয়েছিল। প্রথা ভাঙার ভাবাবেগ উস্কে দিয়ে প্রচার করে ফায়দা তুলেছিল কংগ্রেস। সেই সঙ্গে রাহুল গান্ধী প্রথম বার ওয়েনাড়ে গিয়ে প্রার্থী হওয়ায় তাঁর প্রধানমন্ত্রিত্বের সম্ভাবনার হাওয়াও কংগ্রেস তুলতে পেরেছিল। এ বার সেই সব বিষয় কাজ করছে না। বরং, বিজেপির মোকাবিলা করতে গিয়ে কংগ্রেসেরও ‘নরম হিন্দুত্বে’র কৌশল এবং ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের শরিক হয়েও বাম-শাসিত সরকারের মুখ্যমন্ত্রী বিজয়নকে ইডি-সিবিআই কেন ধরছে না, এই সংক্রান্ত আক্রমণ বামেদের পক্ষে যেতে পারে বলে সিপিএম নেতৃত্বের ধারণা।
তবে সিপিএমের শীর্ষ নেতৃত্ব কেরল রাজ্য শাখার রিপোর্টকে পুরোপুরি প্রামাণ্য ধরছেন না। দলের এক পলিটব্যুরো সদস্যের কথায়, ‘‘মোট আসন ২০। তার মধ্যে ৮ থেকে ১৫ একটা বিরাট ক্যানভাস! সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ সম্ভাবনার মধ্যে বিস্তর ফারাক। কেরলে এ বার আমাদের দিকে ৬ থেকে ৮টি আসন আসতে পারে, প্রাথমিক ভাবে এই হিসেব ধরে এগোনোই ভাল।’’ রাজ্যে তাঁদের সম্ভাবনার মধ্যে অবশ্য সিপিআই এবং কেরল কংগ্রেস (এম)-এর একটি করে আসনও ধরছেন কেরল সিপিএমের নেতৃত্ব। কোট্টায়াম আসনে গত বার ইউডিএফের শরিক দল হিসেবে কেরল কংগ্রেস (এম) জিতেছিল। তার পরে ২০২০ সাল থেকে তারা আবার শিবির বদলে এলডিএফে আছে। গত বারের জয়ী তথা বিদায়ী সাংসদ টমাস চাঝিকাডান ওই আসনেই এ বার এলডিএফের প্রার্থী।
কেরল থেকে অন্তত ৬টি আসন আসতে পারে ধরে নিয়ে সিপিএমের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব হিসেবে রাখছেন রাজস্থানের সীকর কেন্দ্র। যেখানে কংগ্রেসের সমর্থনে লড়ছেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও রাজস্থানে দলের রাজ্য সম্পাদক অমরা রাম। কৃষক নেতা অমরা জিতে আসবেন বলেই সিপিএমের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব প্রবল আশাবাদী, রাজ্য থেকে ভোট-পরবর্তী রিপোর্টও ‘ইতিবাচক’। ডিএমকে এবং কংগ্রেসের জোট-শরিক হিসেবে লড়াই করে তামিলনাড়ুর দু’টি আসনও কার্যত ‘নিশ্চিত’ ধরছে সিপিএম। এম কে স্ট্যালিনের রাজ্যে গত বার দু’টি আ,ন পেয়েছিল সিপিআই-ও।
ত্রিপুরা পূর্ব লোকসভা আসনে এ বার বিজেপির সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের রিপোর্ট এসেছে উত্তর-পূর্বের ওই রাজ্য থেকে। জনজাতি সংরক্ষিত ত্রিপুরা পূর্ব কেন্দ্রে বিজেপির প্রতীকে প্রার্থী হয়েছেন তিপ্রা মথার সর্বময় নেতা প্রদ্যোৎ কিশোর দেববর্মার দিদি কৃতী। বিজেপির জনজাতি নেতৃত্বের একাংশ ওই প্রার্থীর হয়ে ভোটের কাজে নামেননি, আবার কেন্দ্রের সঙ্গে চুক্তি এবং বিজেপির হাত ধরা নিয়ে মথার অন্দরেও ক্ষোভ আছে। এই পরিস্থিতিতে আসনটি বার করে আনা সম্ভব হবে কি না, সে দিকে নজর রয়েছে সিপিএমের শীর্ষ নেতৃত্বের। ওই আসনে সিপিএমকে সমর্থন করেছে কংগ্রেস।
এর পরে থাকছে বাংলা। সিপিএমের এক পলিটব্যুরো সদস্যের বক্তব্য, ‘‘বাংলায় এ বার কংগ্রেসের সঙ্গে আমাদের সমঝোতা অনেক মসৃণ হয়েছে। প্রচারে ভাল সাড়া মিলছে। দু’দলের কর্মী-সমর্থকেরাই পুরোদস্তর ময়দানে নেমেছেন। সেলিম, সুজন চক্রবর্তীর নেতারা জিতে এলে আমাদের সংসদীয় দল খুবই শক্তিশালী হবে।’’ জোটের নিরিখে রাজ্যে গোটাদশেক আসনে এ বার বাড়তি নজর দিয়েই ভোটে নেমেছে সিপিএম। দলের রাজ্য নেতৃত্বের দাবি, জনমত সমীক্ষার বাইরে গিয়ে কিছু আসনে চমকপ্রদ ফল হবে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy