ঠাকুরবাড়িতে হরিচাঁদ মন্দিরে পুজো দিচ্ছেন বারাসতের বিজেপি প্রার্থী স্বপন মজুমদার। —নিজস্ব চিত্র।
কয়েক দিন আগে পর্যন্ত যে দুই নেতার সম্পর্কের টানাপড়েন নিয়ে দলের অন্দরে চর্চা চলছিল, লোকসভা ভোটের আবহে তাঁরাই এখন কাছাকাছি!
বনগাঁ দক্ষিণ কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক তথা বারাসত লোকসভার প্রার্থী স্বপন মজুমদারের সঙ্গে বনগাঁর বিদায়ী দলীয় সাংসদ তথা প্রার্থী শান্তনু ঠাকুরকে কিছুদিন ধরেই কোনও কর্মসূচিতে একসঙ্গে দেখা যাচ্ছিল না। বুধবার ঠাকুরনগরে মতুয়াদের ঠাকুরবাড়িতে গিয়ে তাঁদের আরাধ্য হরিচাঁদ ও গুরুচাঁদ ঠাকুরের মন্দিরে গিয়ে পুজো দিলেন স্বপন। শান্তনু ওই বাড়িতেই থাকেন। দু'জনে দীর্ঘ সময় সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। সেখানে ছিলেন বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক অশোক কীর্তনিয়াও।
তিন নেতার এই কাছাকাছি আসা বিজেপি কর্মীদের কাছে ভোটের আগে স্বস্তিদায়ক। এর ফলে দলের ঐক্যবদ্ধ ছবিটা মানুষের সামনে তুলে ধরা যাবে বলেই মনে করছেন নেতা-কর্মীদের অনেকে। স্বপন অবশ্য এ দিন দাবি করেন, ‘‘আমাদের মধ্যে কখনই দূরত্ব ছিল না। ব্যস্ততার কারণে দু’জনকে একসঙ্গে কম দেখা যেত। আমাদের মধ্যে দাদা-ভাইয়ের মতো সম্পর্ক রয়েছে। দু’জনে ভোটে প্রার্থী হওয়ায় বিরোধীরা অপপ্রচার করছে।’’ শান্তনুর হয়ে তিনি প্রচারেও যাবেন বলে জানিয়েছেন। শান্তনু জানিয়েছেন, তিনি বারাসত কেন্দ্রে প্রচারে যাবেন। স্বপনের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কে নিয়ে শান্তনু বলেন, ‘‘মানুষ অনেক কিছুই বলতে পারেন। আমার মুখ থেকে কখনও কিছু শুনেছেন? এটাকে সময়ের দূরত্ব বলা যেতে পারে। আমাদের মধ্যে কোনও কোন্দল নেই।’’ ব্যস্ততার কথা বলেছেন শান্তনুও।
অথচ, ভোটের দামামা বাজার আগে পর্যন্ত দীর্ঘদিন স্বপন ও শান্তনুকে এক সঙ্গে কোনও দলীয় কর্মসূচিতে কার্যত দেখাই যায়নি। আরও নানা ঘটনায় দু’জনের মতপার্থক্যও প্রকাশ্যে এসেছিল। স্বপন মতুয়া পরিবারের হলেও বেশ কিছুদিন মতুয়া ঠাকুরবাড়িতে যাননি। বনগাঁ লোকসভার প্রার্থী হিসাবে শান্তনুর নাম ঘোষণা হওয়ার পরেও স্বপনকে এ নিয়ে বিশেষ কিছু বলতে শোনা যায়নি। পরিস্থিতির বদলাতে থাকে বিজেপির দ্বিতীয় প্রার্থী-তালিকা প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে। বারাসতের প্রার্থী হিসাবে স্বপনের নাম ঘোষণা করা হয়। ওই দিনই দু’জনকে এক সঙ্গে দেখা গিয়েছিল। গোপালনগরের পাল্লায় শান্তনুর সমর্থনে মিছিলেও স্বপন ছিলেন। তার আগে স্বপনের বাড়িতে গিয়েছিলেন শান্তনু।
রাজনৈতিক মহলের অনেকেই মনে করছেন, রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা এবং ভোটে জিততে দু’জনেই পরস্পরের প্রয়োজনীয়তার কথা বুঝতে পারছেন। সে কারণেই কাছাকাছি আসা। কারণ বনগাঁ ও বারাসত— দুটি লোকসভা আসনেই বড় সংখ্যায় মতুয়া উদ্বাস্তু মানুষের বসবাস।
স্বপন জানান, এ দিন তাঁরা সিএএ (সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন)- কার্যকর করার বিজ্ঞপ্তি জারি হওয়ার পর কী ভাবে সব মতুয়া উদ্বাস্তু মানুষদের এক ছাতার তলায় নিয়ে আসা যায় তা নিয়ে আলোচনা করেছেন।
কিছুদিন আগে পর্যন্ত শান্তনু ও সুব্রত ঠাকুরের ‘দূরত্ব’ নিয়েও জেলা রাজনীতিতে কানাঘুষো চলছিল। দলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, ‘দূরত্ব’ কমাতে সম্প্রতি বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ঠাকুরবাড়িতে এসে দু’জনকে নিয়ে বৈঠক করেছিলেন। তারপর থেকে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে বলে বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের দাবি। এ বার স্বপন-শান্তনুর সম্পর্কের ‘উন্নতি’তেও তাঁরা আও স্বস্তি পেলেন।
তবে এই কাছাকাছি আসাকে কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না তৃণমূল। দলের বনগাঁ লোকসভার প্রার্থী বিশ্বজিৎ দাসের দাবি, ‘‘দলীয় নেতৃত্বের চাপে শান্তনু-স্বপনরা যতই বৈঠক করুন, হৃদয় থেকে কি দূরত্ব মুছে যাবে? দলটাই গোষ্ঠীকোন্দলে জেরবার।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy