Advertisement
Back to
Lok Sabha Election 2024

জানেন, জামানত জব্দ হবে আবার! তবু নেশার বশেই বার বার ভোটে দাঁড়ান বালুরঘাটের ‘মাস্টারমশাই’

রণেন্দ্রনাথ বালুরঘাট ব্লকের বোটুন অঞ্চলের দাশুল গ্রামে থাকেন। পেশায় প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। ২০১৩ সালে চাকরি থেকে অবসর নেন তিনি। এর পরেই তাঁর সংসদীয় রাজনীতিতে যোগদান।

রণেন্দ্রনাথ মালি।

রণেন্দ্রনাথ মালি। —নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
বালুরঘাট শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ২০:৪৭
Share: Save:

নির্বাচনী ময়দানে তাঁর আবির্ভাব রাজ্যে পালাবদলের ভোট থেকে। তার পর প্রার্থী হয়েছিলেন ২০১৪ ও ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটেও। প্রতি বারই জামানত জব্দ হয়েছে। কিন্তু হাল ছাড়েননি ‘মাস্টারমশাই’। এ বারের লোকসভা ভোটেও বালুরঘাটে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এবং রাজ্যের মন্ত্রী বিপ্লব মিত্রের মতো দুই ওজনদার প্রার্থীর বিরুদ্ধে লড়লেন সত্তরোর্ধ্ব রণেন্দ্রনাথ মালি। বৃদ্ধ বিলক্ষণ জানেন, জেতার সম্ভাবনা নেই! শুধু তা-ই নয়, এ বারও জামানত বাজেয়াপ্ত হবে। তবু বৃদ্ধ রণেন্দ্রনাথ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, ভোট-রণে ভঙ্গ দেবেন না।

রণেন্দ্রনাথ বালুরঘাট ব্লকের বোটুন অঞ্চলের দাশুল গ্রামে থাকেন। পেশায় প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। ২০১৩ সালে চাকরি থেকে অবসর নেন তিনি। এর পরেই তাঁর সংসদীয় রাজনীতিতে যোগদান। ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটে প্রথম বার নির্দল হিসাবে লড়েছিলেন রণেন্দ্রনাথ। পেয়েছিলেন মাত্রটি সাতটি ভোট। চাকরি থেকে অবসরের পর ‘বহুজন মুক্তি পার্টি’ নামে একটি রাজনৈতিক দলে যোগ দেন। সেই দলের প্রার্থী হিসাবেই ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে বালুরঘাটে লড়েন রণেন্দ্রনাথ। সে বার পেয়েছিলেন প্রায় ১৬০০ ভোট। বৃদ্ধ ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটেও লড়েন। সে বার তাঁর প্রাপ্ত ভোট বেড়ে হয় ২০০৭। এ বার রণেন্দ্রের আশা, ছ’হাজার মতো ভোট পাবেন। তিনি বলেন, ‘‘আমার দলের তো সে রকম সংগঠন নেই। আত্মীয়স্বজন, পরিচিতেরাই রয়েছেন আমার সঙ্গে। তবে হ্যাঁ, ধীরে ধীরে আমার উপর মানুষের বিশ্বাস বাড়ছে।’’

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় দফায় বালুরঘাটে ভোট হয়েছে। শনিবার সকাল থেকেই বিভিন্ন দলের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে স্ট্রংরুমে ইভিএম বন্দি করার কাজ হচ্ছিল। রণেন্দ্র নিজেই সেখানে পৌঁছে গিয়েছিলেন। জানান, লোক না থাকায় যাবতীয় দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়েছেন তিনি। তবে বৃদ্ধের বিশ্বাস, ‘‘বহুজন মুক্তি পার্টির মতো ছোট দলকেও মানুষ এক দিন ভরসা করবেন। আমার স্বপ্নপূরণ হবেই।’’

১৯৬৪ সালের সিপিএমের সদস্যপদ পেয়েছিলেন রণেন্দ্র। পরে ১৯৭৭ সালে গ্রামের স্কুলে চাকরি পান। বেতন ছিল ২৫২ টাকা। তখন থেকেই গ্রামের লোকেদের কাছে ‘মাস্টারমশাই’ বলে পরিচিত তিনি। রণেন্দ্র জানান, তাঁর লক্ষ্য সমাজের পিছিয়ে পড়া শ্রেণিকে তাঁদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করা। তাঁর দল এই আদর্শে বিশ্বাসী। কিন্তু ভোটযুদ্ধে নামলে তো প্রচুর খরচও থাকে। সেই অর্থ আসে কোথা থেকে? রণেন্দ্র বলেন, ‘‘মনোনয়নে ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়। আর থাকে প্রচারের খরচ। ভোটের দিনে একটা গাড়ির ব্যবস্থাও করতে হয়। তাতে সব মিলিয়ে ৪০ হাজার টাকা তো খরচ হয়েই যায়। আগে যখন দলে আর কেউ ছিলেন না, তখন সব খরচ নিজেই বহন করতাম। গত দুটো নির্বাচনে আমি ও আমার অনুগামীরা মিলে চাঁদা তুলেছি। আর বাকিটা আমার পেনশনের টাকা।’’

রণেন্দ্র জানান, প্রতি বার জামানত জব্দ হয় বলে তাঁর সংসারে অভাব লেগেই রয়েছে। তবু ভোটে দাঁড়ানো তাঁর নেশা হয়ে গিয়েছে এখন। বৃদ্ধের দুঃখ, তাঁর এই লড়াইয়ে পরিবারকে কখনও পাশে পাননি। তাঁর কথায়, ‘‘এরা ভিতু। সমাজকে পরিবর্তন করতে এরা ভয় পায়। তাই আমায় এরা সাহায্য করে না। কিন্তু সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতার কারণেই আমাকে রাজনৈতিক লড়াই করতে হয়। গ্রামের গরিব, নিচু শ্রেণির মানুষেরা নিজেদের স্বার্থ বোঝে না। বড় রাজনৈতিক দল কখনও গরিব মানুষের স্বার্থ রক্ষা করবে না। আমি সমাজের প্রতি দায়বদ্ধ। কিছু মানুষকেও তো বোঝাতে পারছি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2024
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy