রাহুল গান্ধী। — ফাইল চিত্র।
লোকসভা ভোটের আগে বেকারত্ব নিয়ে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেলেন রাহুল গান্ধী। ভারতে তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার পাকিস্তানের প্রায় দ্বিগুণ বলে তিনি অভিযোগ তুলেছেন। বলেছেন, ভারতে তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার এখন বাংলাদেশ, ভুটানের মতো দেশের থেকেও বেশি।
আজ গোয়ালিয়রে ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রার পথসভায় প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি পরিসংখ্যান-সহ বলেন, ‘‘যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে বেকারত্বের হার এখানে ২৩%, পাকিস্তানে ১২%।’’ রাহুল বলেন, গত ৪০ বছরের মধ্যে ভারতে বেকারত্বের হার সর্বকালীন শীর্ষে পৌঁছেছে। এই সামগ্রিক পরিস্থিতির জন্য প্রধানমন্ত্রীকে দায়ী করে রাহুলের অভিযোগ, ‘‘নরেন্দ্র মোদীজি জিএসটি এবং নোটবন্দি করে ছোট ব্যবসা ও ব্যবসায়ীদের শেষ করে দিয়েছেন। এর ফলে ভয়ঙ্কর রকম বেকারত্ব দেখা দিয়েছে।’’
পাকিস্তানের থেকেও ভারতে তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার বেশি— এই অভিযোগে রাহুল হাতিয়ার করেছেন আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংগঠন (আইএলও)-এর রিপোর্টকে। আইএলও-র রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২২-এ ভারতে ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সি যে সব তরুণ কাজ খুঁজছেন, তাঁদের মধ্যে বেকারত্বের হার ২৩.২%। বস্তুত, তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের নিরিখে গোটা বিশ্বে যে ছ’টি দেশ একেবারে পিছনের সারিতে রয়েছে, তার মধ্যে ভারত অন্যতম। এই ছ’টি দেশের মধ্যে ভারতের সঙ্গে রয়েছে যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া এবং আর্মেনিয়া, লেবানন, ইয়েমেন, ইরান। যে সব দেশে তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার কম, সেই তালিকার প্রথম দিকে রয়েছে যথাক্রমে তাইল্যান্ড, ফিলিপিন্স, দক্ষিণ কোরিয়া, ভিয়েতনাম, আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়া। গত সপ্তাহেই এই পরিসংখ্যান বিশ্ব ব্যাঙ্কের প্রাক্তন মুখ্য অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু তাঁর ‘এক্স’ হ্যান্ডলে পোস্ট করেছিলেন। রাহুল এই পরিসংখ্যানই তুলে ধরেছেন। কৌশিক লিখেছিলেন, ‘২০২২ সাল নিয়ে চিন্তায় ফেলার মতো তথ্য। যে সারণিতে ভারত রয়েছে, সেখানে থাকা উচিত নয়।’ যুব প্রজন্মের বেকারত্বের এই চড়া হারের মাসুল ভারতের মানবসম্পদ ও সাধারণ মানুষকে দিতে হচ্ছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন তিনি। স্লোগানের বদলে তথ্যের দিকে নজর দিয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণের উপরেও জোর দিয়েছিলেন। আজও কৌশিক বসু লিখেছেন, ‘তরুণদের মধ্যে চড়া বেকারত্বের হার ও কৃষিতে ১ শতাংশেরও কম বৃদ্ধির হার বুঝিয়ে দেয়, আর্থিক বৃদ্ধির অধিকাংশ সুফলই উপরের তলায় পৌঁছচ্ছে। এতে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ক্ষতি। এ দিকে নজর না দিলে ভুল হবে।’
কংগ্রেসের অভিযোগ, ২০২২-এ তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার ২৩.২% ছিল। এর মধ্যে স্নাতকদের মধ্যে বেকারত্বের হার ৪২ শতাংশ ছিল। মোদী সরকার যখন ক্ষমতায় আসে, তখন তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার ছিল ২১.৫%। ২০১৮-তে তা বেড়ে ২৬% ছাপিয়ে যায়। ২০১৯-এ কিছুটা কমলেও কোভিডের বছর ২০২০-তে বেকারত্বের হার ৩০% টপকে গিয়েছিল। এখন কিছুটা কমলেও তা ২৩ শতাংশের উপরে। বেকারত্বের হার গত চার দশকে সর্বোচ্চ বলেই এ দেশের যুবকেরা কখনও রাশিয়ার সেনার সহায়ক হিসেবে ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে গিয়ে, কখনও ইজ়রায়েল-প্যালেস্টাইন সংঘাতের মধ্যেই ইজরায়েলে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। প্রতি ঘণ্টায় দেশে গড়ে ২ জন বেকার তরুণ আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন।
আজ রাহুল গোয়ালিয়রে প্রাক্তন সেনাকর্মী এবং সেনায় ভর্তি হতে ইচ্ছুকদের সঙ্গে প্রায় চল্লিশ মিনিট কথা বলেন। সেনাবাহিনীতে স্বল্পমেয়াদি চাকরির অগ্নিপথ প্রকল্পের ‘অন্যায়’, সেনায় ভর্তি বন্ধ থাকা, এক পদ এক পেনশন এবং অগ্নিবীর সেনাদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ নিয়ে কথাবার্তা বলেন রাহুল। ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চ কেন্দ্রে ক্ষমতায় এলে অগ্নিপথ প্রকল্প বিস্তারিত ভাবে পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় পরিবর্তনের আশ্বাস দেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy