—প্রতীকী চিত্র।
মেলেনি বহু প্রতীক্ষিত কলেজ ও দমকল কেন্দ্র। সার ও চাষের খরচ বাড়ায় ক্ষোভ জমেছে কৃষক মহল্লায়। এই প্রেক্ষাপটে হাজির হয়েছে আরও একটি নির্বাচন। গত আট বছর ধরে ধীরে ধীরে তৃণমূলের দুর্গ হয়ে ওঠা মন্তেশ্বরে এ বার ভাল ফল সম্পর্কে তিন পক্ষই আত্মবিশ্বাসী। তবে আগের মতো এ বারও সংখ্যালঘু ভোটে তৃণমূলের একছত্র আধিপত্য থাকবে কিনা, সেই প্রশ্নই পাক খাচ্ছে রাজ্যের শাসক দল, বিজেপি এবং সিপিএমের অন্দরে।
বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে ১৭টি পঞ্চায়েত নিয়ে গঠিত মন্তেশ্বর বিধানসভা। দশটি পঞ্চায়েত রয়েছে মন্তেশ্বর ব্লকে। বাকি সাতটি মেমারি ২ ব্লকে। গত পঞ্চায়েত ভোটের ফল বলছে, মন্তেশ্বর ব্লকের তিনটি জেলা পরিষদ আসনেই বিপুল ভোটে জিতেছিল তৃণমূল। অনেক পিছিয়ে থেকে দু’টিতে বিজেপি এবং একটিতে সিপিএম দ্বিতীয় হয়েছিল। মেমারি ২ ব্লকের একটি জেলা পরিষদ আসনে ৮২৫০ ভোটে সিপিএমকে হারিয়ে জয়ী হয় তৃণমূল। ভোটের অঙ্কে বিরোধীদের থেকে অনেক এগিয়ে থাকলেও এই হিসাবে ‘কতটা জল’ আছে সে প্রশ্ন অবশ্য রয়েছে। পঞ্চায়েত ভোটে জনমতের প্রকৃত প্রতিফলন ঘটেনি বলে অভিযোগ বিরোধীদের।
বিজেপির জেলা সম্পাদক বিশ্বজিৎ পোদ্দার বলেন, ‘‘এই কেন্দ্রে দিলীপ ঘোষ প্রার্থী হওয়ায় কর্মীরা চনমনে হয়েছেন। ভাল ফলের জন্য কী করতে হবে কর্মীদের তা বুঝিয়ে দিয়েছেন দিলীপদা।’’ যদিও গোটা বিধানসভা এলাকায় বিজেপির দেওয়াল লিখন বা প্রচার তেমন একটা চোখে পড়েনি। দিলীপ অবশ্য চার বার মন্তেশ্বরে প্রচারে এসেছেন। বিজেপি নেতৃত্বের একাংশ মানছেন, তৃণমূলকে টক্কর দেওয়ার মতো সংগঠন এখনও গড়া যায়নি।
এক সময়ে মন্তেশ্বর ছিল সিপিএমের ঘাঁটি। ২০১৬ বিধানসভা ভোটে এই কেন্দ্রে জয়ী হয় তৃণমূল। ৭০৬ ভোটে জিতে বিধায়ক হন সজল পাঁজা। তাঁর মৃত্যুতে উপনির্বাচন হলে বড় ব্যবধানে জয়ী হন তাঁর পুত্র সৈকত। সেই থেকেই তৃণমূলের খাসতালুক মন্তেশ্বর। ২০১৯ লোকসভা ভোটে এই কেন্দ্র থেকে ২৮০৩৬ ভোটে এগিয়েছিল তৃণমূল। মূলত বামেদের ভোটে স্ফিত হয় বিজেপির ভোটব্যাঙ্ক। গত বিধানসভা ভোটের আগে সৈকত বিজেপিতে যোগ দিলেও তৃণমূলের কোনও ক্ষতি হয়নি। ব্যবধান বাড়িয়ে ৩১১৮৫ ভোটে জেতে তৃণমূল। বামেদের ভোটের প্রায় সবটাই বিজেপি এবং তৃণমূল শিবিরে চলে গিয়েছিল।
সাতগাছিয়ায় কলেজ এবং মন্তেশ্বরে দমকল কেন্দ্রের দাবি বার বার তোলা হলেও তা বাস্তিবায়িত হয়নি। এ নিয়ে চাপা অসন্তোষ রয়েছে মানুষের মধ্যে। বিরোধীরা বিষয়টি প্রচারে এনেছে। তেমনই পঞ্চায়েত স্তরে তৃণমূলের নানা কাজকর্মে বিরক্ত কিছু মানুষ। ফসলের লাভজনক দাম না পাওয়া, বাড়তে থাকা চাষের খরচ এবং সারের দাম নিয়ে চিন্তিত বহু চাষি। এ সবের ফল ভোটবাক্সে পড়তে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকের একাংশ।
রাজ্য সরকারের নানা প্রকল্পকে হাতিয়ার করে ভোট বৈতরণী পার করতে চাইছে তৃণমূল। সংগঠন শক্তিশালী হওয়ায় প্রচারে বিরোধীদের থেকে তারা যে অনেক এগিয়ে, তা মানছেন ভোটাররাও। তবে কয়েক জায়গায় দলের অন্দরে চোরাস্রোত রয়েছে বলে তৃণমূল সূত্রে খবর। প্রচারের প্রথম পর্বে দেখা মেলেনি বর্তমান বিধায়ক তথা রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্য সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীকে। বিষয়টি চোখ এড়ায়নি মানুষের। তবে এখন তিনি প্রচারে থাকছেন।
বিজেপির আশা, এ বারও বামেদের ভোট তাদের দিকে আসবে। শুশুনিয়া, মন্তেশ্বর, বাঘাসন, দেনুড়, বোহাড় ২, বিজুর ১-এর মতো কয়েকটি পঞ্চায়েতে দলের শক্তি বেড়েছে বলেও দাবি গেরুয়া শিবিরের। বিজেপির জেলা সম্পাদকের দাবি, কয়েক মাস আগে তৃণমূলের ব্লক সভাপতি পরিবর্তন ঘিরে কোন্দল বেড়েছে রাজ্যের শাসক দলের অন্দরে। এই পরিস্থিতিতে সংখ্যালঘু ভোটের একাংশ যেতে পারে বামেদের ঝুলিতে। তাতে লাভ হবে দিলীপের।
তৃণমূলের মন্তেশ্বরের ব্লক সভাপতি কুমারজিৎ পানের অভিযোগ, ‘‘বিরোধীরা নানা বিষয় নিয়ে অপপ্রচার করছে। দলে অন্তর্কলহ নেই। এ বারও আমরা এই বিধানসভায় বড় ব্যবধানে এগিয়ে থাকব।’’
মন্তেশ্বরে ভাল ফলের আশা করছে সিপিএম-ও। প্রচারে সারের দামবৃদ্ধি, ফসলের ন্যায্য মূল্য না পাওয়া এবং ওষুধের দাম বাড়ার মতো বিষয়গুলি তুলে ধরছেন সিপিএম প্রার্থী সুকৃতি ঘোষাল। বামেদের বাড়তি সুবিধা প্রার্থীর ভাবমূর্তি। দলীয় নেতাদের দাবি, তৃণমূল ও বিজেপির প্রতি মানুষের মোহভঙ্গ হয়েছে। গত লোকসভা ও বিধানসভা ভোটে বিরোধী শিবিরে চলে যাওয়া বহু বাম সমর্থক ফিরবেন পুরনো শিবিরে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy