(বাঁ দিক থেকে) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সুকান্ত মজুমদার, অধীর চৌধুরী, সুজন চক্রবর্তী এবং নওশাদ সিদ্দিকি। —ফাইল চিত্র।
সাত দফায় বাংলার ভোটের নির্ঘণ্ট নিয়ে নানা মুনি নানা মত! রাজ্যের শাসকদল যেখানে দীর্ঘ দিন ধরে ভোট করানোর ঘোরতর বিরোধী এবং সাত দফায় ভোটকে কার্যত বাংলার প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের অবিচার বলে দেগে দিয়েছে, সেখানে কেন্দ্রের বিজেপি-বিরোধী শিবিরের অনেকেই এই নির্ঘণ্টকে স্বাগতও জানিয়েছেন। বাংলার ভোট নির্ঘণ্ট নিয়ে কে কী বললেন?
বাংলার ভোট নির্ঘণ্টকে স্বাগত জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তিনি ভেবেছিলেন বাংলায় আট দফায় হবে লোকসভা ভোট। কিন্তু শেষ পর্যন্ত গোটা দেশে সাত দফাতেই লোকসভা নির্বাচন সম্পন্ন হবে বলে জানায় নির্বাচন কমিশন। তবে তাতেও সুকান্ত খুশিই। তিনি বলেন, ‘‘আশা করি গত বারের চেয়ে বেশি সংখ্যক কেন্দ্রীয় বাহিনী ব্যবহার করা যাবে বাংলার ভোটে। এ রাজ্যে প্রতি বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতি ছাড়া সুষ্ঠু ভাবে ভোট করানো সম্ভব নয়। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার পেশিশক্তির আস্ফালন নিয়ে কড়া বার্তা দিয়েছেন। ইতিমধ্যেই তৃণমূল বিভিন্ন জায়গায় হুমকি দিতে শুরু করেছিল। তবে এ বার ওদের তেজ কিছুটা স্তিমিত। কারণ ওরা বুঝতে পেরেছে, ওদের সময় খারাপ।’’
শনিবার ভোট নির্ঘণ্ট ঘোষণার আগে ভোট প্রক্রিয়া এবং তদ্সংক্রান্ত নানা বিষয়ে নিজের বক্তব্য জানান মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার। ভুয়ো খবর ছড়ানো থেকে শুরু করে ভোটের ময়দানে পেশিশক্তির প্রয়োগ— নির্বাচন সংক্রান্ত নানা রকম সমস্যা নিয়েই পরামর্শ দেন রাজীব। সেই সঙ্গে এই সমস্যার সমাধানে কমিশন কী কী পদক্ষেপ করছে, তা-ও সবিস্তারে ব্যাখ্যা করেন তিনি। শনিবার সেই প্রসঙ্গ টেনেই সন্তোষ প্রকাশ করেছেন সুকান্ত।
যদিও এই মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের মনোনয়ন নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে বাংলার শাসকদল তৃণমূল। তাদের বক্তব্য, ‘‘নির্বাচন কমিশনারের মনোনয়ন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকার যা করছে, তাকে যদি ক্রিকেট মাঠের ভাষায় ব্যাখ্যা করা যায় তবে বলতে হয়, ম্যাচ খেলতে নামবে যে ক্রিকেট দল, তাদেরই ক্যাপ্টেন ঠিক করে দিচ্ছেন আম্পায়ার কে হবেন। নির্বাচন কমিশনের প্রতি পূর্ণ সম্মান রেখেই বলছি, একে কি পক্ষপাতহীন নির্বাচন বলা যায়?’’
রাজ্যে শাসকদলের সঙ্গে বৈরিতার সম্পর্ক হলেও সিপিএম অবশ্য নির্বাচনী নির্ঘণ্ট নিয়ে সুর মিলিয়েছে তৃণমূলের সঙ্গেই। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তথা দমদম লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘সাত দফায় ভোট কেন হচ্ছে?’’ যদিও তার পরেই সুজনের সংযোজন, ‘‘কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে পঞ্চায়েত ভোটেও দেখা গিয়েছিল, রাজ্যে লুটের রাজত্ব চলে। তার পর সেই লুটেরাদের পাশে দাঁড়ান রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। এ খানে সাত দফা কি ১৭ দফা কোনও ব্যাপার নয়। কমিশনকে নিশ্চিত করতে হবে, মানুষ যেন নিজেদের ভোটটা দিতে পারেন।’’
সাত দফা ভোটকে স্বাগত জানিয়েছেন রাজ্যের কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। অধীর বলেছেন, ‘‘সাত দফায় ভোট করানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে ভাল করেছে নির্বাচন কমিশন। যে ভাবে রাজ্যে সন্ত্রাস চলে তাতে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে একাধিক দফায় কড়া প্রহরায় ভোট করানো দরকার। তবে কমিশনকে এটাও নিশ্চিত করতে হবে। ভোটের দিনের অনেক আগেই যেন ভোট কেন্দ্রে কেন্দ্রীয় বাহিনী পৌঁছে যায়। তাতে স্থানীয় মানুষজন আশ্বস্ত বোধ করবেন।’’ কংগ্রেসের জাতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গেও ভোটের নির্ঘণ্টকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, ‘‘এই ভোট হয়তো গণতন্ত্রকে বাঁচানোর শেষ সুযোগ। তাই এই নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’’
অধীরের সুরেই রাজ্যের আইএসএফের বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকিও নির্বাচনী নির্ঘণ্টকে স্বাগত জানিয়েছেন। তবে তিনিও বলেছেন, ‘‘কত দফায় ভোট হচ্ছে, সেটা বিচার্য নয়। দেখতে হবে, মানুষ নিরাপদে ভোট দিতে যেতে পারছেন কি না।’’ তবে একই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের উপর আস্থা রেখে নওশাদ বলেছেন, ‘‘আমি আজ ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা শুনেছি, আমার মনে হয়েছে, যে ভাবে এ বারে নির্বাচন কমিশন ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে পক্ষপাতহীন ভোট করানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তাতে ভরসা পাচ্ছি।’’
যদিও তৃণমূল বলেছে, ‘‘এই নির্ঘণ্টের ফলে ভোটারদের অসুবিধা হবে। সুবিধা পাবে অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষমতাবান দলগুলি। কারণ অর্থবান দলগুলি তাদের টাকা কাজে লাগিয়ে ভোটের ফল নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। ক্ষমতার পূর্ণ প্রয়োগ করতে পারবে। অন্য দিকে, অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল রাজনৈতিক দলগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পিছিয়ে পড়বে। গত বারও বেশি দফায় ভোট করিয়ে দেখা গিয়েছিল ভোটের হার কমেছে। অন্য দিকে ক্ষমতাবান রাজনৈতিক দলগুলি কী করতে পারে, তার প্রমাণ চণ্ডীগড়ে ভোট লুটের ঘটনা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy