—প্রতীকী চিত্র।
ভোট বড় বালাই। তাই ভোটের বাজনা বাজতেই সরকারি প্রকল্পের উদ্বোধন, শিলান্যাসের বান ডাকল জেলা জুড়ে। এক দিকে শাসক দল তৃণমূলের ছোট বড় মাঝারি নেতারা, অন্যদিকে বিজেপির প্রধানমন্ত্রী। বাদ গেলেন না কংগ্রেসের সাংসদ অধীর চৌধুরীও। কোটি কোটি টাকার প্রকল্প, যা দীর্ঘ দিন আটকে ছিল রাতারাতি তা উদ্বোধন করলেন কোথাও বিধায়ক, কোথাও সাংসদ, কোথাও বা নেহাতই দলের ব্লক সভাপতি। যা দেখে বিরোধীরা তীব্র ভাষায় কটাক্ষ করতে ছাড়ছেন না।
সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য সোমনাথ সিংহরায় বলছেন, “এ যেন উদ্বোধন ও শিলান্যাসের রেষারেষি চলছে। কোথাও অসম্পূর্ণ স্বাস্থ্য কেন্দ্র, কোথাও বা মাদার চাইল্ড হাব। কোথাও বা পথশ্রী, কোথাও ধর্মীয় স্থানের দেওয়াল, এমনকি গঙ্গার ঘাটও। তবে এ সবে কোনও ফল হবে না। মানুষ বোঝে শাসক দলের চালাকি। তাই এতে ভোটে কোনও প্রভাব পড়বে না।”
প্রায় ৪০ বছর ধরে বন্ধ থাকার পরে ভোটের আগে শমসেরগঞ্জের পুঠিমারি স্বাস্থ্য কেন্দ্রের অন্তর্বিভাগ উদ্বোধন করলেন তৃণমূল বিধায়ক আমিরুল ইসলাম। তাঁরই বাড়ির পাশের এই স্বাস্থ্য কেন্দ্র বাম জমানার ৩৪ বছর ও বর্তমান জমানার ১২ বছর বন্ধ। বিরোধীদের দাবি, ঠিক ভোটের আগে উদ্বোধন যে মানুষের মন পেতে তা বুঝতে অসুবিধে হয় না। দু’দিন আগে ধুলিয়ানে মাদার অ্যান্ড চাইল্ড হাবের উদ্বোধন হল বিধায়কের হাত ধরেই, অথচ অভিযোগ, সেখানে এখনও গড়েই ওঠেনি পরিকাঠামো। তাই শুধু স্বাভাবিক প্রসব হবে সেখানে।
জঙ্গিপুরের সাংসদ খলিলুর রহমানও কম যান না। ৪ দশক বন্ধ থাকার পর বিডিও ও ওসিকে পাশে রেখে উদ্বোধন করলেন সাগরদিঘির সিংহেশ্বরী গৌরীপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের অন্তর্বিভাগ। ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক ওয়াসিম আক্রাম জানালেন, উদ্বোধন হলেও আপাতত প্রসব চালু করা যাচ্ছে না। একটি নিশ্চয় যান থাকবে। তাতে করেই প্রসূতিদের নিয়ে যাওয়া হবে সাগরদিঘি হাসপাতালে। প্রশ্ন উঠছে, তা হলে উদ্বোধন করে লাভ?
বুধবার খলিলুর উদ্বোধন করেছেন সুতি ১ ব্লকে শিশু পার্ক, খড়গ্রাম বাসস্ট্যান্ডের শিলান্যাস করেছেন, খড়গ্রামের এক প্রাথমিক স্কুলকে দু’টি কম্পিউটার দিয়েছেন। কম যান না মন্ত্রী আখরুজ্জামানও। বৃহস্পতিবার প্রায় আড়াই কোটি টাকার ৪টি রাস্তার ও মহম্মদপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের শিলান্যাস করলেন তিনি। শুক্রবার ৮৪টি পরিবারের হাতে দিয়েছেন বাড়ির পাট্টা।নবগ্রামে কানাই চন্দ্র মণ্ডলও বসে থাকেননি। সেখানে গোপগ্রাম ও কিশোরপুরে ৩টি রাস্তার শিলান্যাস করেছেন তিনিও। মুর্শিদাবাদ পুর এলাকাতেও একটি গঙ্গা ঘাট সংস্কারের শিলান্যাসের পাশাপাশি, চোখের আলোতে ৭২ জনের চোখে চশমা তুলে দিয়েছেন সেখানকার তৃণমূল পুরপ্রধান। ঘোষণা করেছেন, একাধিক রাস্তায় ৪.৬২ কোটি টাকার টেন্ডার ডাকার কথাও। জাকির হোসেন অসুস্থ। সুস্থ হয়ে ফিরে আসতে ঘোষণা হয়ে যেতে পারে ভোট। তাই তাঁর হয়ে তৃণমূলের ব্লক সভাপতি গৌতম ঘোষ নিজেই মির্জাপুর ও আহিরণে পথশ্রীর দু’টি রাস্তার শিলান্যাস করলেন শুক্রবার। শুধু তাই নয়, জানিয়ে দিলেন নির্বাচন আসছে, তাই দু’দিনের মধ্যেই সব রাস্তার শিলান্যাস শেষ করা হবে। তৃণমূল দাবি করেছে, বকেয়া কাজ শেষ করাই উদ্দেশ্য।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বঙ্গ সফরে এসে গুচ্ছ প্রকল্পের মাঝে এ জেলায় উদ্বোধন করে গিয়েছেন দীর্ঘ দিনের পড়ে থাকা নশিপুর সেতু ও তিনটি অমৃত ভারত রেল স্টেশন। আর নির্বাচনের আগে মুর্শিদাবাদ জেলায় শতাধিক আইসিডিএস কর্মী নিয়োগের তালিকা প্রকাশ করেছে জেলা প্রশাসন। অর্থাৎ বসে নেই কেউ। লক্ষ্য একটাই নির্বাচন।
বিজেপি তো উত্তর মুর্শিদাবাদের ৩৬টি মণ্ডলের ২২৬ জন দলীয় কর্মী সমর্থককে নিয়ে আস্থা স্পেশাল নামে আস্ত ট্রেন নিয়েই ভোটের আগে তিন দিনের সফরে অযোধ্যা রওনা দিয়েছেন নিউ ফরাক্কা স্টেশন থেকে।
বহরমপুরের কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরীও বা পিছিয়ে যান কেন?
তাঁর হাতে সরকার না থাকলেও সাংসদ তহবিল রয়েছে। তাই তিনিও গত ক’দিনে বেশ কিছু প্রকল্পের শিলান্যাস করলেন শুক্রবার পর্যন্ত।
কংগ্রেসের জেলার সাধারণ সম্পাদক জয়ন্ত দাস অবশ্য বলছেন, “টাকা খরচ করতে না পারলে ব্যর্থতার দায় চাপাবেন তো আপনারাই। তাই ব্যস্ততার সঙ্গেই সব প্রকল্পের শিলান্যাস ও উদ্বোধন সেরে ফেলা ছাড়া উপায় কী?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy