গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
বাংলায় বিজেপির ‘শক্ত ঘাঁটি’ বলে যদি কোনও আসনকে চিহ্নিত করতে হয়, তা হলে তার অন্যতম আলিপুরদুয়ার লোকসভা আসন। গত লোকসভা নির্বাচনে ওই আসনে সর্বোচ্চ ভোটে জিতেছিল বিজেপি। আবার গত বিধানসভা নির্বাচনে ওই লোকসভার অন্তর্গত সব ক’টি আসনেই জয় পেয়েছে পদ্মফুল।
আলিপুরদুয়ারের এমন পরিচয় অবশ্য এক দশক আগেও ছিল না। রাজ্যে বাম শরিক আরএসপি-র ‘শক্ত ঘাঁটি’ ছিল এই আসন। তফসিলি জনজাতির জন্য সংরক্ষিত এই আসনে ১৯৭৭ সাল থেকে টানা ১০ বার জিতেছিল আরএসপি। প্রথম পাঁচ বার পীযূষ তিরকে এবং পরের পাঁচ বার জোয়াকিম বাক্সলা। ২০০৯ সালেও আরএসপির মনোহর তিরকে সাংসদ হয়েছিলেন এই আসন থেকে।
বদল এল ২০১৪ সালে। রাজ্য সরকারে পালাবদলের সঙ্গে বদলে গিয়েছিল আলিপুরদুয়ারও। সে বার ওই আসনে জেতেন তৃণমূলের দশরথ তিরকে। তবে ব্যবধান ছিল মাত্র ২১,৩৭৯ ভোট। বিজেপি ছিল তৃতীয় স্থানে। তাদের ভোটও বেড়েছিল অনেকটা। সে বার আরএসপি-র ভোট কমেছিল ১৩.৫ শতাংশ। বিজেপির ভোট বৃদ্ধি পেয়েছিল ৫.৯ শতাংশ। পাঁচ বছর পরে ২০১৯ সালে বিজেপির প্রাপ্ত ভোট আরও ২৭.১ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। অন্য দিকে, আরএসপি-র কমে ২৩.৮১ শতাংশ আর কংগ্রেসের ভোট কমেছিল ৭.৫ শতাংশ। তৃণমূলের ভোটপ্রাপ্তির হার বৃদ্ধি পেলেও বিজেপির কাছে তাদের হারতে হয় ২,৪৩,৯৮৯ ভোটের ব্যবধানে। সঙ্গে সব ক’টি বিধানসভা আসনেই এগিয়ে ছিলেন জন বার্লা। স্পষ্টতই বামের ভোট রামে চলে গিয়েছিল এই আসনে। বাঁধ তৈরি করতে পারেনি তৃণমূল।
বড় জয় পাওয়া বার্লা কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও হয়েছিলেন। কিন্তু এ বার তিনি প্রার্থী নন। ২০০৯ সালে ওই আসনে তৃতীয় হওয়া মনোজ টিগ্গা এ বার বিজেপির প্রার্থী। মাদারিহাটের দু’বারের বিধায়ক মনোজ এখন বিধানসভায় বিজেপির মুখ্য সচেতকও বটে। তিনিই আলিপুরদুয়ারের বিজেপি জেলা সভাপতি। সঙ্গে এ বারের লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থীও বটে। ওই আসনের দু’টি বিধানসভা কেন্দ্র আবার অন্য জেলার। কোচবিহারের তুফানগঞ্জ এবং জলপাইগুড়ির নাগরাকাটা। তবে সবক’টিতেই বিজেপি জিতেছিল ২০২১ সালের ভোটে। পরে অবশ্য আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক সুমন কাঞ্জিলাল তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন।
আলিপুরদুয়ার আসনের দুই প্রধান প্রার্থীই পরিষদীয় এবং সংসদীয় রাজনীতিতে রয়েছেন। বিজেপির মনোজ যেমন বিধানসভার বিধায়ক, তেমনই তৃণমূল প্রার্থী প্রকাশ চিক বরাইক রাজ্যসভার সদস্য। এই আসনের ফলাফল ঠিক হয় মূলত চা-বাগানের ভোটে। বলা হয় শ্রমিকেরা যাঁকে ভোট দেবেন, আলিপুরদুয়ার তাঁর। অনেকেই মনে করছেন, সেই অঙ্কেই রাজ্যসভার সাংসদ হওয়া সত্ত্বেও প্রকাশকে প্রার্থী করা হয়েছে। বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলকে সর্বত্র হারের মুখ দেখতে হওয়ার পরে দলের ‘আদিবাসী মুখ’ প্রকাশকে আলিপুরদুয়ারের জেলা সভাপতি করে তৃণমূল। তাঁর নেতৃত্বেই গত পুরভোটে আলিপুরদুয়ারের দু’টি পুরসভার দু’টিতেই জয় ছিনিয়ে নিয়েছিল রাজ্যের শাসকদল। ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ভোটেও এই জেলায় বড় সাফল্য পেয়েছিল তৃণমূল। পাশাপাশিই তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের বক্তব্য, কেন্দ্রের বিরুদ্ধে একের পর এক আন্দোলনে নেমে চা-বলয়েও এখন অত্যন্ত পরিচিত মুখ প্রকাশ। গত অগস্ট মাসে রাজ্যসভায় যাওয়ার পরে ইতিমধ্যেই কয়েক বার চা-শ্রমিকদের পক্ষে সংসদে সওয়াল করতেও দেখা গিয়েছে তাঁকে।
এ বার ‘হাড্ডাহাড্ডি’ লড়াইয়ের সম্ভাবনা আলিপুরদুয়ার লোকসভা আসনে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy