মহারাষ্ট্রের ধারাশিবের জনসভায় নরেন্দ্র মোদী। মঙ্গলবার। ছবি: পিটিআই।
ভোট চলাকালীন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘সাম্প্রদায়িক মন্তব্য’ নিয়ে কংগ্রেস অভিযোগ করায় নির্বাচন কমিশনের তরফে বিজেপি সভাপতিকে নোটিস দেওয়া হয় গত সপ্তাহে। এর পর মেরুকরণের প্রচার চালিয়ে গেলেও বক্তৃতায় ‘মুসলিম’ শব্দটি উহ্য রেখেছিলেন মোদী। তবে আজ তেলঙ্গানা এবং মহারাষ্ট্রের প্রচারে ফের তিনি দাবি করলেন, কংগ্রেস তফসিলি জাতি ও জনজাতি, দলিত, ওবিসি-র সংরক্ষণ কেড়ে নিয়ে মুসলিমদের দিয়ে দেবে। এর মধ্যেই আবার সমাজমাধ্যমে পোস্ট করা বিজেপির একটি ভিডিয়ো নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে দেশের সব সম্পদ মুসলিমদের দিয়ে দেবে।
রীতিমতো উচ্চকণ্ঠে প্রধানমন্ত্রী আজ তেলঙ্গানার জাহিরাবাদের জাহির করেছেন, “যত দিন আমি বেঁচে আছি, দলিত জনজাতিদের সংরক্ষণকে ধর্মের ভিত্তিতে মুসলিমদের হাতে তুলে দেব না, দেব না, দেব না! কংগ্রেস এবং তাদের যত সহযোগী রয়েছ, তারা কান খুলে এটা শুনে নাও।”
আজ প্রচারে রামমন্দির নির্মাণের প্রসঙ্গ তুলে হিন্দুত্বের তাস খেলেছেন প্রধানমন্ত্রী। একইসঙ্গে, মোদী ফের ক্ষমতায় এলে সংবিধান বদল হবে বলে যে প্রচার করছেন রাহুল গান্ধী এবং কংগ্রেস, তা খারিজ করে দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, “সংবিধানের প্রতি গোড়া থেকে ঘৃণা পোষণ করে কংগ্রেস। বাবা সাহেব অম্বেডকর যে সংবিধান দিয়েছিলেন সেখনে প্রতি পাতায় রামায়ণ এবং মহাভারতের ছবি ছিল। আমাদের ঐতিহ্যের সঙ্গে সংবিধানকে সংযুক্ত করার এ এক চমৎকার প্রয়াস। কিন্তু কংগ্রেস প্রথমেই সংবিধানের পাতা থেকে এই ছবিগুলিকে সরিয়ে দিল। ছিঁড়ে দিল ঐতিহ্যের সঙ্গে যোগসূত্র।” মোদীও ওই অভিযোগ উড়িয়ে কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশ তাঁর সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেছেন, ‘আমার কাছে সুন্দর অলঙ্করণের সংবিধানের গোড়ার সংস্করণ রয়েছে। তাতে আমাদের সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক ইতিহাসের ২২টি ছবি রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী কংগ্রেস এবং সংবিধানের অলঙ্করণ নিয়ে যে দাবি করেছেন তা অর্থহীন’।
নিজের সংবিধান-প্রীতির কথা বলতে গিয়ে মোদী বলেন, “প্রথম যখন সংসদে প্রবেশ করি মাথা ঠেকিয়েছিলাম সেখানকার মাটিতে। আবার ২০১৯ সালে সেন্ট্রাল হলে বক্তৃতা দেওয়ার আগে সংবিধানের বইটি আনিয়ে মাথা নত করে তাকে প্রণাম করে তারপর বক্তৃতা দিই।” নেহরু-গান্ধী পরিবারকে বিশেষ ভাবে নিশানা করে প্রধানমন্ত্রীর আক্রমণ, “এই শাহী পরিবার দেশের সংবিধানের কথা বাদ দিন, কংগ্রেস দলের সংবিধানও মানে না। সীতারাম কেশরীকে এই পরিবার বাথরুমে আটকে রেখেছিল, পরে আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করে। কংগ্রেস দলকেও তো শাহী পরিবার কব্জা করেছে।”
সংবিধান নিয়ে কংগ্রেসের আক্রমণের পাশাপাশি, হিন্দুত্বের তাস খেলতেও বাকি রাখেননি মোদী। তিনি বলেন, “পাঁচশো বছরের অপেক্ষার পর অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণে সকলে খুশি। ব্রিটিশ যাওয়ার পরই তো রামমন্দির তৈরির কাজ শুরু হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু কংগ্রেস তা করেনি ভোটব্যাঙ্কের চিন্তায়। আপনাদের বিশ্বাসের প্রতি ওদের শ্রদ্ধাই নেই। রামের প্রতি কংগ্রেসের আস্থা থাকলে এটা কখনই করত না।” তাঁর সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশে সন্ত্রাসবাদী হামলা, বিস্ফোরণ বন্ধ হয়ে যাওয়ার কৃতিত্বও নিয়েছেন মোদী। তিনি বলেছেন, “আজ আমাদের সীমান্তের দিকে যে তাকায়, তাকে মুখের মতো জবাব দিয়ে থাকে ভারত। সেটাই এখন ভারতের পরিচয়। আগে দেশে সন্ত্রাসবাদী হামলা হলে পাকিস্তানকে ডসিয়ার দেওয়া হত। সেটাই ছিল সেই যুগে বড় খবর। ডসিয়ার অর্থাৎ একটি ফাইল। আজকের নতুন ভারত ডসিয়ার দেয় না, ঘরে ঢুকে মেরে আসে। মিশন এলওসি, সার্জিকাল স্ট্রাইক করে জঙ্গিদের সাজা দেয়।” বিরোধীরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, লাদাখে ভারতের জমি চিন দখল করে রাখার পরেও চুপ করে আছে প্রধানমন্ত্রী।
কংগ্রেস বার বার চেয়েছে তফসিলি জাতি, জনজাতি, দলিত, ওবিসি-র সংরক্ষণের কোটা লুট করে তা মুসলিমদের হাতে তুলে দিতে— এ কথা গত কাল বিভিন্ন চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। আজকের তিনটি জনসভাতেও তাঁর মুখে একই অভিযোগ। তেলঙ্গানার জনসভায় তাঁর অভিযোগ, যে কংগ্রেসের ভোটব্যাঙ্ক নয় তার আস্থার কোনও দাম নেই তাদের কাছে। হায়দরাবাদে রামনবমীর শোভাযাত্রা আটকে দিয়েছে কংগ্রেস, যাতে ভোটব্যাঙ্ক খুশি থাকে। তাঁর কথায়, “এখানে লিঙ্গায়েত এবং মরাঠিদের ২৬টি জাতি রয়েছে, যারা ওবিসি-ভুক্ত হতে চায়। কিন্তু তাদের ওবিসি বানাতে আগ্রহী নয় কংগ্রেস, অথচ মুসলিমকে রাতারাতি তারা ওবিসি বানিয়ে দিচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy