‘কাড়া’ নিয়ে মিছিল। পুরুলিয়া ২ ব্লকের গোলামারা গ্রামে। নিজস্ব চিত্র।
সিংহ ছাপে ভোটারদের নজর টানতে অতীতে মনোনয়নের সময়ে ফরওয়ার্ড ব্লকের মিছিলে ছৌ নৃত্যের বেশে সিংহরূপী শিল্পীদের দেখেছে পুরুলিয়া। কিন্তু রীতিমতো জ্যান্ত ‘কাড়া’ (পুরুষ মোষ) নিয়ে ভোট প্রচারের মিছিল কখনও দেখা গিয়েছে কি, মনে করতে পারছেন না জেলাবাসী। এ বারে তেমনই ছবি দেখা গেল আদিবাসী কুড়মি সমাজের মূল মানতা তথা সমাজের তরফে এ বারে লোকসভা ভোটে প্রার্থী অজিত মাহাতোর মিছিলে। কুড়মি-আবেগ ছুঁতেই কি এই প্রয়াস, এমন চর্চা যেমন চলছে তেমনই ‘কাড়া’ চিহ্নেই কি ভোটযুদ্ধে নামতে চলেছেন অজিত, সেই সম্ভাবনাও উঁকি দিচ্ছে অনেকের মনে।
অজিত জানান, ঝালদা ১, বাঘমুণ্ডি, আড়শা, ঝালদা ২, জয়পুর, মানবাজার-সহ কেন্দ্রের বিভিন্ন ব্লকের গ্রামে ঘুরে ঘুরে প্রচার চলছে। তবে কিছু দিন হল, গাঁয়ে গাঁয়ে কর্মী-সমর্থক ও মানুষজনই দাবি করছেন, ‘কাড়া’ নিয়ে মিছিল করতে। তাঁদের দাবি মেনেই এই কাজ। ঢোল, মাদলের বোলে ‘কাড়া’কে সামনে রেখে মিছিলে ভিড় জমছে ভালই। মিছিলের পুরোভাগে পাজামা-পাঞ্জাবি, গলায় হলুদ উত্তরীয়তে দেখা যাচ্ছে অজিতকে।
কাড়ার লড়াই পুরুলিয়া-সহ অবিভক্ত মানভূমের অন্যতম প্রাচীন লোক বিনোদন। অক্টোবরে আমন চাষ উঠলে গাঁয়ে গাঁয়ে কাড়ার লড়াইয়ের আসর শুরু হয়ে যায়। চলে চৈত্রের শেষ পর্যন্ত। হাজারে হাজারে মানুষ তা দেখতে ভিড় জমান। কয়েকটি ক্ষেত্রে লড়াইয়ের আসরে দুর্ঘটনার জেরে একাধিক প্রাণহানির ঘটনায় পুলিশ-প্রশাসনের তরফে কাড়ার লড়াইয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। তবে তাতে লড়াইয়ের আসর থামেনি। উল্টে লড়াইয়ে নিষেধাজ্ঞা জারির প্রতিবাদে জেলার বিভিন্ন থানা এলাকায় লড়াইয়ের সমর্থনে থাকা মানুষজনকে নিয়ে আন্দোলনে নেমেছেন অজিত। থানায় থানায় স্মারকলিপিও দেওয়া হয়েছে। চলতি মাসের গোড়ার দিকে জেলার কাড়া-রসিক ও মালিকদের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন অজিত।
তবে কি এ বারের ভোটে ‘কাড়া’ই হতে চলেছে নির্বাচনী প্রতীক? অজিত বলেন, “নির্বাচনী প্রতীক কী হবে, তা মনোনয়নের পরেই বলা যাবে। তবে মনে হয় কাড়া নয়। কাড়ার লড়াই মানভূম সংস্কৃতির অন্যতম জনপ্রিয় বিনোদন এবং নিজেও দীর্ঘদিন ধরে এই সংস্কৃতির সমর্থক, তাই এমন কথা ছড়িয়েছে। যে গ্রামেই যাচ্ছি মানুষই বলছেন, প্রচারে কাড়া সঙ্গে নিতে। তবে একের বেশি কাড়া থাকলে মিছিলেই লড়াই লেগে যাবে। তাই একটি কাড়া নিয়ে প্রচার চলছে।” ইতিমধ্যে সমাজ মাধ্যমে রীতিমতো ‘ভাইরাল’ হয়েছে প্রচারের ছবি। জেলার গণ্ডি ছাড়িয়ে তা পৌঁছেছে অন্যত্রও।
তৃণমূলের সোশ্যাল মিডিয়া শাখার আহ্বায়ক বিকাশ মাহাতো বলেন, “কাড়া নিয়ে মিছিল আমাদের নজরেও পড়েছে। মানভূম সংস্কৃতির একটি জনপ্রিয় লোক বিনোদনকে ভোটে ব্যবহার করা হচ্ছে। আমরাও মানভূমের বিভিন্ন লোক বিনোদনকে আমাদের প্রার্থীর প্রচারে নিয়ে আসছি।”
কাড়ার লড়াইয়ের বিরোধিতায় দীর্ঘদিন ধরে সরব ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির পুরুলিয়া জেলা শাখার সম্পাদক মধুসূদন মাহাতোর কথায়, “আমরা নীতিগত ভাবে কাড়া বা মোরগ লড়াইয়ের বিরোধী। ভোট প্রচারে কেউ কাড়া নিয়ে মিছিল করতেই পারেন। তবে সেই মিছিল থেকে যদি কাড়ার লড়াইকে
সমর্থন জানানো হয়, আমরা তার প্রতিবাদ জানাব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy