Advertisement
Back to
Post Poll Violence

মারধরে আশ্রয় অতিথিশালায়! ভোট-সন্ত্রাসে বোমা শহরে

নারকেলডাঙায় বোমা পড়ার ঘটনাটি ঘটে বুধবার রাত পৌনে ১১টা নাগাদ। অভিযোগ, কয়েক জন মোটরবাইকে এসে বিজেপি কার্যালয় থেকে কিছুটা দূরে বোমা ছুড়ে পালায়।

—প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০২৪ ০৭:২৯
Share: Save:

কোথাও বাড়ি ভাঙার অভিযোগ উঠেছে। কোথাও বাড়ি লক্ষ্য করে রাতভর ইটবৃষ্টির অভিযোগ। আরও অভিযোগ, কাউকে মেরে হাত-পা ভেঙে দেওয়া হয়েছে, কারও আবার মাথা ফেটেছে। অবস্থা এমনই যে, ভয়ে বাড়িছাড়া হয়েছেন অনেকেই। নারকেলডাঙায় বিজেপির কার্যালয়ের কাছেই বোমা ছোড়ার অভিযোগ উঠেছে। ভোটের ফল ঘোষণার পরে ৪৮ ঘণ্টার বেশি কেটে গেলেও নির্বাচন-পরবর্তী হিংসার অভিযোগ বন্ধ হয়নি। উল্টে, বুধবার রাত থেকে তা আরও বেড়েছে বলে অভিযোগ। এই পরিস্থিতিতে ভোট-পরবর্তী হিংসা সংক্রান্ত একটি জনস্বার্থ মামলার শুনানিতে কলকাতা হাই কোর্ট অবিলম্বে হিংসা বন্ধ করতে পুলিশ-প্রশাসনকে সক্রিয় হতে নির্দেশ দিয়েছে।

নারকেলডাঙায় বোমা পড়ার ঘটনাটি ঘটে বুধবার রাত পৌনে ১১টা নাগাদ। অভিযোগ,
কয়েক জন মোটরবাইকে এসে বিজেপি কার্যালয় থেকে কিছুটা দূরে বোমা ছুড়ে পালায়। নারকেলডাঙা থানা এলাকার বাসিন্দা সুরবিন্দ্র পাল সিংহ নিজেকে বিজেপি-র স্থানীয় মণ্ডল সভাপতি বলে দাবি করে বলেন, ‘‘২৯ নম্বর ওয়ার্ডে বুধবার রাতে তৃণমূল একটি বিজয় মিছিল করেছিল। গন্ডগোলের আশঙ্কায় সেই মিছিল আমাদের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে ঢুকতে দেয়নি পুলিশ। কিন্তু মিছিলের পরে কয়েক জন মোটরবাইকে চেপে এসে আমাদের কার্যালয় থেকে কিছুটা দূরে বোমা ছুড়ে পালায়। কার্যালয়ের সামনে পুলিশ রয়েছে দেখেই সেখানে বোমা
ছোড়েনি।’’

এ দিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত, ধনদেবী খন্না রোডের বাসিন্দা সোমা সেনের দাবি, ‘‘আমি বিজেপি করি বলে আমাদের মিষ্টির দোকান খুলতে দেওয়া হচ্ছে না। রাতে বোমা পড়ার সময়ে ভয়ে বেরোতে পারছিলাম না।’’

অভিযোগ উড়িয়ে স্থানীয় তৃণমূল নেতা তথা কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ স্বপন সমাদ্দারের যদিও দাবি, ‘‘বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্বেই এ সব হয়েছে। এই এলাকায় তৃণমূল অশান্তির রাজনীতি করে না।’’ লালবাজার দাবি করেছে, নারকেলডাঙায় বোমা পড়েছিল, না কি বড় বাজি ফাটানো হয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশের তরফে ওই ঘটনায় কোনও গ্রেফতারিরও খবর নেই।

হরিদেবপুরে ভোট-পরবর্তী গোলমালের আর একটি অভিযোগ সামনে এসেছে। সেখানকার ব্যানার্জিপাড়া রোডের বাসিন্দা অভিজিৎ সাঁপুই নিজেকে বিজেপি কর্মী বলে দাবি করে বলেন, ‘‘প্রথমে আমাদের বাড়ি লক্ষ্য করে ইট ছোড়া হতে থাকে। আমি রাস্তায় গেলে বেধড়ক মারধর করা হয়।’’ তাঁর স্ত্রী শ্যামলীর অভিযোগ, ‘‘চুলের মুঠি ধরে মারধর করার পরে হাত মচকে দিয়েছে। পরে ১০০ ডায়ালে ফোন করলে হরিদেবপুর থানা থেকে পুলিশ আসে।’’

ঘটনাস্থল ১৫৫ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত। সেখানকার পুরপ্রতিনিধি রত্না শূরের অবশ্য দাবি, ‘‘তৃণমূল যুক্ত নয়। সিন্ডিকেট-বিবাদের জেরে যা হওয়ার হয়েছে।’’

এ দিন বিজেপির তরফে কয়েক জনকে এনে রাখা হয়েছে মধ্য কলকাতার একটি
অতিথিশালায়। সেখানে গিয়ে দেখা গেল, অন্তত ৮০ জন আশ্রিত। তাঁদের এক জন, ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা হেনা শূরের দাবি, ‘‘ভোটের পর থেকেই হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। ফল ঘোষণার পরে বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়। তাই সকলে মিলে পালিয়ে এসেছি। কবে ফিরতে পারব, জানি না। এলাকায় দেখা গেলে খুন করে দেওয়া হবে বলে হুমকি দিয়েছে।’’

পাশে বসে অঝোরে কেঁদে চলেছেন নারকেলডাঙার রীতা রজক। বললেন, ‘‘গভীর রাতে যে ভাবে বাড়িতে তৃণমূলের লোকজন চড়াও হয়েছিল, তাতে প্রাণে বাঁচতাম না। কোনও মতে পালিয়ে এসেছি। আত্মীয়েরা ফোন করে বলছে, আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে এলাকায় আমাদের খুঁজছে।’’

বৃহস্পতিবার ওই অতিথিশালায় গিয়েছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীকে বলছি, শুধরে যান। এখনও সময় আছে। বিজেপি কিন্তু চুপ করে বসে থাকবে না। মারের পাল্টা মার হবে!’’ আর দক্ষিণ কলকাতার জয়ী তৃণমূল প্রার্থী মালা রায় বলেন, ‘‘এখনও উস্কানিমূলক মন্তব্য করে গোলমালে ইন্ধন দেওয়া হচ্ছে। সকলকে বলব শান্ত থাকতে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE