(বাঁ দিকে) মহুয়া মৈত্র এবং শতাব্দী রায় (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনে দুই অঙ্কের সাংসদ সংখ্যা রয়েছে, এমন রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে মহিলা সাংসদদের শতাংশ বিচারে দেশের মধ্যে প্রথম স্থানে চলে এল তৃণমূল কংগ্রেস। তাদের এ বারের জয়ী ২৯ জন সাংসদের মধ্যে ১১ জনই মহিলা, শতাংশের বিচারে যা প্রায় ৩৮%। তৃণমূল যে ১২ জন মহিলাকে লোকসভায় প্রার্থী করেছিল, তার মধ্যে বিষ্ণুপুরের সুজাতা মণ্ডল বাদে সকলেই নির্বাচিত হয়েছেন।
গত লোকসভার তুলনায় দেশে এ বার মহিলা সাংসদদের মোট সংখ্যা অল্প হলেও কমেছে। সে বার ৭৮ জন মহিলা সাংসদ ছিলেন। এ বার ৭৪ জন। ২০০৯ ও ২০১৪-র লোকসভা ভোটে সেই সংখ্যাটা ছিল যথাক্রমে ৫৯ ও ৬২ জন। অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্র্যাটিক রিফর্মস-এর (এডিআর) তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, কংগ্রেস, সমাজবাদী পার্টি, ডিএমকে, জেডিইউ এবং টিডিপি-র নির্বাচিত প্রার্থীদের মধ্যে মহিলাদের শতাংশ যথাক্রমে, ১৩, ১৪, ১৪, ১৭ এবং ৬%। বিজেপির ২৪০ জন সাংসদের মধ্যে ৩১ জন মহিলা, যা কংগ্রেসের মতোই প্রায় ১৩%।
দলের এমন ‘দৃষ্টান্তের’ জন্য কলকাতা দক্ষিণের সাংসদ মালা রায় বলছেন, “মহিলা সংরক্ষণের কথা তো হালের। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বরাবরই পঞ্চায়েত থেকে সংসদ এবং দলীয় স্তরে সাংগঠনিক ভাবে মহিলাদের বিশেষ অগ্রাধিকার দিয়েছেন।” ভোট প্রচারেও মহিলাদের জন্য রাজ্য সরকারের প্রকল্প ‘কন্যাশ্রী’, ‘রূপশ্রী’, ‘লক্ষ্মীর ভান্ডারের’ কথা বার বার তুলে ধরেছে তৃণমূল। দলের ১২ জন মহিলা প্রার্থীর জন্য ‘লক্ষ্মী এল ঘরে’ শীর্ষক আলাদা প্রচার কর্মসূচিও নিয়েছিল মহিলা তৃণমূল কংগ্রেস। এই সূত্রেই সংগঠনের রাজ্য সভানেত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলছেন, “আমরা ২৯% মহিলা প্রার্থী দিয়েছিলাম। তার জন্য সংরক্ষণ প্রয়োজন হয়নি।”
তৃণমূলের মহিলা সাংসদেরা নানা ধরনের সামাজিক প্রেক্ষাপট ও কর্ম-জগৎ থেকে উঠে
এসেছেন। যেমন, রাজনীতির সূত্রেই উঠে আসা মালা রায়, মিতালি বাগ, কাকলি ঘোষ দস্তিদার, প্রতিমা মণ্ডল, মহুয়া মৈত্র, সাজদা আহমেদরা রয়েছেন। তেমনই পূর্বাশ্রমে চলচ্চিত্র তারকা হলেও দীর্ঘদিন ধরেই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত শতাব্দী রায়, জুন মালিয়া, সায়নী ঘোষেরা রয়েছেন। আবার চলচ্চিত্র জগতের রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়, চিকিৎসক শর্মিলা সরকারেরা সরাসরি সাংসদ হয়েছেন। এঁদের মধ্যে কৃষ্ণনগর থেকে ফের জিতে মহুয়া তাঁর জয়কে মোদী-বিরোধী লড়াইয়ের সাফল্য হিসেবেই দেখছেন। তাঁর মন্তব্য, ‘‘আমি সব চেয়ে খুশি, যে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি ভারতবর্ষকে ধ্বংস করছে... মোদী সাহেবের বিরুদ্ধে এই ভোট হয়েছে। আর মোদী-শাহ এই দু’জন মিলে যে দেশটাকে নষ্ট করছিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ভোট হয়েছে, আমি খুবই খুশি।’’
তবে রাজনৈতিক শিবিরের একাংশ মনে করছে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল অনেক সময়ে সাংগঠনিক ‘ফাঁকফোকর’ মেরামত করতেও ‘তারকা’ প্রার্থীদের সামনে আনে। কিন্তু প্রশ্ন থাকে ওই প্রার্থী সাংসদ হলে তাঁদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ নিয়ে। এই সূত্রে তাঁরা গত লোকসভার সাংসদ মিমি চক্রবর্তী, নুসরত জাহানের লোকসভায় উপস্থিতির হার স্মরণ করাচ্ছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষক তথা ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক শুভময় মৈত্রেরও বক্তব্য, “সংসদীয় রাজনীতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মহিলাদের এ ভাবে সামনে আনা অবশ্যই কৃতিত্বের। দক্ষিণ ভারতের রাজনীতিতে অতীতে এমন দেখা গিয়েছে। এই কৃতিত্ব আরও বেশি হত যদি, ‘রাজনৈতিক সক্রিয়তা’ থাকা মহিলাদের আরও বেশি করে সামনে আনা হত।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy