দমদম বিমানবন্দরে রাজীব কুমার। ছবি: স্নেহাশীষ ভট্টাচার্য।
দীর্ঘ টানাপড়েনের পরে সন্দেশখালি-কাণ্ডের অন্যতম মূল অভিযুক্ত শেখ শাহজাহান গ্রেফতার হয়েছে। কিন্তু রাজ্যের অন্যত্র কি শাহজাহানের মতো আর কোনও ‘বাহুবলী’ নেই? সূত্রের দাবি— সোমবার জেলাশাসক, পুলিশ সুপার, পুলিশ কমিশনার, রেঞ্জ আইজি এবং ডিভিশনাল কমিশনারদের নিয়ে হওয়া বৈঠকে এই প্রশ্নই তুলেছেন জাতীয় নির্বাচন কমিশনের কর্তারা। এই ‘বাহুবলী’দের বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। গত পঞ্চায়েত ভোটের সবিস্তার তথ্য সামনে রেখে আসন্ন ভোট-পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেছে কমিশন।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উপরে এ বার যে বাড়তি জোর থাকবে, তা আগেই স্পষ্ট করে দিয়েছিল জাতীয় নির্বাচন কমিশন। এ দিন আইনশৃঙ্খলা থেকে নিরপেক্ষতা—সব কিছু নিয়েই রাজ্যকে সতর্ক করেছেন দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমারের নেতৃত্বে কমিশনের ফুল বেঞ্চ। সূত্রের দাবি, এ দিন সন্দেশখালির ঘটনার উল্লেখ যেমন ছিল, তেমনই ভোটার তালিকায় ‘ভুয়ো’ ভোটারদের উপস্থিতি নিয়েও প্রশ্নের মুখে পড়ে পুলিশ এবং প্রশাসন।
গত ৫ জানুয়ারি থেকে প্রতি সপ্তাহের আইনশৃঙ্খলা রিপোর্ট দিল্লির নির্বাচন সদনে জমা পড়ছে। সরাসরি ভোটের সঙ্গে যুক্ত না হলেও, ওই দিনই সূত্রপাত হওয়া সন্দেশখালির ঘটনার প্রায় ৫৫ দিন পরে গ্রেফতার হয়েছে ওই কাণ্ডের অন্যতম মূল অভিযুক্ত শাহজাহান। এ নিয়ে প্রশাসন এবং পুলিশের একাংশের ভূমিকা এবং নিরপেক্ষতা নিয়ে সরব হয়েছেন বিরোধীরা। এ দিন কমিশনের সামনে সেই অভিযোগও করেছেন তাঁরা। পরে প্রশাসনের সঙ্গে কমিশনের বৈঠকে সেই প্রসঙ্গ উঠেছিল বলেই খবর। এমনকি, গ্রেফতারিতে এত সময় কেন লাগল, সেই প্রশ্নের মুখেও পড়তে হয় সংশ্লিষ্ট পুলিশ আধিকারিকদের। সূত্রের দাবি, কিছুটা সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলও।
বসিরহাট পুলিশ সুপার মেহেদি হাসানকে যেমন কিছু প্রশ্ন করা হয়েছিল বলে সূত্রের দাবি। কিন্তু মেহেদি নবাগত হওয়ায় আগের দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ আধিকারিক জোবি থমাসের থেকে বিষয়টি জানতে চান কমিশনের কর্তারা। সূত্রের দাবি, কার্যত ভর্ৎসনার মুখেও পড়তে হয় থমাসকে। কমিশনের বার্তা ছিল—তাঁদের বোকা বানানোর চেষ্টা করলে লাভ হবে না। অন্যত্র এই ধরনের ‘বাহুবলী’ নেতারা সক্রিয় থাকলে, তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ করতেই হবে। কমিশন বুঝিয়ে দিয়েছে, খুন-ধর্ষণের মতো ঘটনায় সর্বোচ্চ পর্যায়ে সংবেদনশীল হয়ে পদক্ষেপ করতে হবে। উস্কানি, বোমাবাজি, আত্মহত্যার ঘটনা ঘটলে তার যথাযথ তদন্ত করতে হবে। না-হলে জেলাশাসক এবং পুলিশ-কর্তাদের দায়ী করা হবে। বীরভূম, ডায়মন্ড হারবার এবং ইসলামপুরের পুলিশ কর্তারা যে কমিশনের নজরে রয়েছেন, তা-ও স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত, অতীতে একাধিক ভোটে বহু অফিসারকে পদ থেকে অপসারণ করেছে কমিশন। এ বারও তেমন পদক্ষেপে কমিশন যে দ্বিধাগ্রস্ত হবে না, স্পষ্ট বার্তা রয়েছে তা নিয়েও।
এ দিন ২০১৯ সালের লোকসভা ও ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের সবিস্তার তথ্য হাতে নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন জেলা-কর্তারা। কিন্তু কমিশন-কর্তারা ২০২৩ সালে হওয়া পঞ্চায়েত ভোটের তথ্য কিছুটা আকস্মিক ভাবেই সামনে আনেন। কোথায় কোথায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ভোট হয়েছে, কোথায় পুনর্গণনা করতে হয়েছে বা কোথায় ভোটের সময় বা ভোট পরবর্তী কী ধরনের হিংসা হয়েছে, তার পূর্ণাঙ্গ বিবরণ তুলে ধরেন কমিশন-কর্তারাই। তা দেখিয়ে প্রস্তুতির নির্দেশ দিয়েছেন তাঁরা। এই দিক থেকে সমালোচনার মুখে পড়েছিল হাওড়া, উত্তর দিনাজপুর, দুই ২৪ পরগনা ইত্যাদি জেলা প্রশাসন।
সূত্রের দাবি, এ দিন আটটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেন কমিশন-কর্তারা। সাতটি দলের প্রতিনিধিই প্রশাসন এবং পুলিশের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। ঘটনাচক্রে, এ দিন সন্ধ্যায় মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের একটি ভিডিয়ো বার্তা প্রকাশ করে কমিশন। তাতে তিনি বলেছেন—জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপারদের কড়া বার্তা দেওয়া হয়েছে। কোনও দলের সঙ্গে এমন আচরণ গ্রহণযোগ্য হবে না, যদি তা নিরপেক্ষ না হয়। প্রত্যেকের জন্য সমান সুবিধা এবং গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। অধস্তন আধিকারিকদের কেউ পক্ষপাতমূলক আচরণ করলেও দায় বর্তাবে জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপারের উপর। সূত্রের দাবি, বিজেপির অভিযোগ ছিল, ভোটার তালিকায় এমন প্রায় ১৭ লক্ষ নাম রয়েছে, যা থাকার কথাই নয়। কমিশনের নির্দেশ, দ্রুত এ সব সংশোধন করতে হবে।
এক জেলা-কর্তার কথায়, “কমিশন বুঝিয়ে দিয়েছে, বিচ্যুতি থাকলে জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপারেরাই দায়বদ্ধ হবেন। প্রস্তুত থাকতে হবে কমিশনের কড়া পদক্ষেপের জন্য।” সীমান্তবর্তী এলাকাগুলির উপর বাড়তি নজর রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ডিভিশনার কমিশনারদেরও। গত লোকসভা ভোটে কোচবিহারের শীতলখুচিতে গুলিচালনার ঘটনা রাজনৈতিক তরজার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছিল। সূত্রের দাবি, সেই ধরনের ঘটনার ব্যাপারে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে ফুল বেঞ্চ। বলা হয়েছে, ভোটে সিভিক ভলান্টিয়ার বা গ্রিন পুলিশের ব্যবহার চলবে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy