এনডিএ-র সংসদীয় দলের বৈঠকে যোগ দিতে নয়াদিল্লির সংবিধান-সদনে নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।
প্রথমে দু’হাতে সংবিধান তুলে নিয়ে মাথায় ঠেকালেন। তার পরে টেবিলে সংবিধান রেখে তার সামনে ঝুঁকে ফের মাথা ঠেকালেন। পুরনো সংসদ ভবনের সেন্ট্রাল হলে এনডিএ-র প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য আনুষ্ঠানিক ভাবে নির্বাচিত হওয়ার পরে নরেন্দ্র মোদীর মুখে শোনা গেল ‘সর্বধর্ম সমভাব’-এর কথা।
বিরোধীরা অভিযোগ তুললেন, আজ যে সংবিধানে নরেন্দ্র মোদী মাথা ঠেকাচ্ছেন, গত দশ বছর ধরে নরেন্দ্র মোদী সেই সংবিধানের উপরেই হামলা চালিয়েছেন। এ বার চারশোর বেশি আসনে জিতে এলে এই সংবিধানই বদলে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন তিনি।
আর ‘সর্বধর্ম সমভাব’? বিরোধীদের প্রশ্ন, নরেন্দ্র মোদীর লোকসভা ভোটের প্রচারে কি সব ধর্মের জন্য সমান মনোভাব দেখা গিয়েছে? যদি সব ধর্মের জন্য সমান মনোভাবই হবে, তা হলে বিজেপির ২৪০ জন, এমনকি এনডিএ-র ২৯৩ জন সাংসদের মধ্যে এক জনও মুসলিম, খ্রিস্টান, শিখ বা বৌদ্ধ বা অন্য সংখ্যালঘু নেই কেন?
এ বারই অবশ্য প্রথম নয়। পাঁচ বছর আগে পুরনো সংসদ ভবনের সেন্ট্রাল হলে এনডিএ-র সংসদীয় দলের বৈঠকে এসেও সংবিধানে মাথা ঠেকিয়েছিলেন মোদী। তারপরে বলেছিলেন, ‘সব কা সাথ, সব কা বিকাশ’-এর সঙ্গে তাঁর নতুন লক্ষ্য হবে ‘সব কা বিশ্বাস’। অর্থাৎ, সংখ্যালঘুদের বিশ্বাস অর্জন।
লোকসভা ভোটের আগে নরেন্দ্র মোদী ‘চারশো পার’-এর লক্ষ্য স্থির করার পরেই একাধিক বিজেপি নেতা দাবি করেছিলেন, সংবিধানে বদল করার জন্যই লোকসভায় চারশো আসনে জেতা দরকার। তার খেসারত ভোটে দিতে হয়েছে। বিজেপি ফের ভোটে জিতে এলে সংবিধান বদলে দিতে পারে ভেবে বি আর অম্বেডকরের অনুগামী দলিতরা বিজেপির বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন। ফলে বিজেপির আসন কমেছে।
সেই কারণেই কি আজ ফের সংবিধানে মাথা ঠেকালেন মোদী? আজ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তিনি ‘সর্বধর্ম সমভাব’-এর নীতির প্রতি দায়বদ্ধ। সংবিধান নিয়ে তিনি বলেছেন, ‘‘আমার জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত বাবাসাহেব অম্বেডকরের দেওয়া ভারতের সংবিধানের মহান মূল্যের প্রতি সমর্পিত। সংবিধান থেকেই এক গরিব ও অনগ্রসর পরিবারে জন্ম নেওয়া আমার মতো ব্যক্তিও রাষ্ট্রসেবার সুযোগ পেয়েছে। আমাদের সংবিধানের জন্যই কোটি কোটি দেশবাসী আশা, সামর্থ্য ও গরিমায় পূর্ণ জীবন যাপনের সুযোগ পাচ্ছেন।’’
কংগ্রেসের নেতা জয়রাম রমেশের অভিযোগ, এ হল নরেন্দ্র মোদীর দ্বিচারিতা। গত দশ বছরে তিনি সংবিধানকেই আক্রমণ করেছেন। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে দুর্বল করার চেষ্টা করেছেন। চারশো আসন জিতে সংবিধান বদলের পরিকল্পনা করেছিলেন। তার জন্য নির্বাচনের প্রচারে তিনি মুসলিমদের প্রতি বিদ্বেষ ছড়িয়েছেন। কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে মুসলিমদের মধ্যে হিন্দুদের যাবতীয় সম্পত্তি বিলিয়ে দেবে, এমনকি মঙ্গলসূত্র কেড়ে নেবে বলে প্রচার করেছেন। মুসলিমদের অনুপ্রবেশকারী বলে তাঁদের বিরুদ্ধে বেশি সন্তান জন্ম দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন। দেশের মানুষ এই বিদ্বেষের রাজনীতি খারিজ করে দিয়েছেন। এটা নরেন্দ্র মোদীর ব্যক্তিগত রাজনৈতিক ও নৈতিক পরাজয়। কংগ্রেস নেতা পবন খেরার অভিযোগ, এক দিকে মোদী সংবিধানে মাথা ঠেকাচ্ছেন, অন্য দিকে মোহনদাস কর্মচন্দ গান্ধী, বি আর অম্বেডকরের মূর্তি সংসদ চত্বরের এক কোণে সরিয়ে দিচ্ছেন।
বিজেপি নেতারাও মানছেন, সংবিধান বদল হলে সংরক্ষণের সুযোগ চলে যেতে পারে বলে দলিত-আদিবাসীদের মধ্যে আতঙ্কের খেসারত বিজেপিকে ভোটে দিতে হয়েছে। তফসিলি জাতির জন্য সংরক্ষিত ৮৪টি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে বিজেপি ২০১৯-এ ৪৬টি আসন জিতেছিল। এ বার বিজেপি তার মধ্যে ১৬টি আসনে হেরেছে। তফসিলি জাতি, জনজাতির জন্য সংরক্ষিত মোট ১৩১টি আসনের মধ্যে বিজেপি গত লোকসভা ভোটে ৭৭টি আসন জিতেছিল। এ বার ৫৫টি জিততে পেরেছে। শুধু উত্তরপ্রদেশেই ৮০টি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে তফসিলি জাতির জন্য সংরক্ষিত ১৭টি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে বিজেপি মাত্র ৮টি জিততে পেরেছে। সাতটি সমাজবাদী পার্টি, একটি কংগ্রেস ও অন্য আসনে তরুণ দলিত নেতা, আজাদ সমাজ পার্টি (কাঁসিরাম)-র প্রধান চন্দ্রশেখর আজাদ জিতেছেন।
কংগ্রেসের সাংসদ মাণিকম টেগোরের অভিযোগ, নরেন্দ্র মোদী মুখে সর্বধর্ম সমভাবের কথা বললেও তিনি সকলের জন্য ভারতের ভাবনায় বিশ্বাসী নন। তাই বিজেপি তথা এনডিএ-র সাংসদ তালিকায় এক জনও মুসলিম, খ্রিস্টান, শিখ, বৌদ্ধ সাংসদ নেই। অথচ বৈচিত্র ও সমাজের সব শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব গণতন্ত্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। পরিসংখ্যান বলছে, এনডিএ সাংসদদের মধ্যে ৩৩.২ শতাংশ ব্রাহ্মণ-রাজপুতদের মতো উচ্চবর্ণ, ১৫.৭ শতাংশ অন্যান্য উচ্চবর্ণ, ওবিসি ২৬.২ শতাংশ, দলিত ১৩.৩ শতাংশ এবং আদিবাসী ১০.৮ শতাংশ। কিন্তু কোনও মুসলিম, খ্রিস্টান, শিখ, বৌদ্ধ নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy