ঝাড়গ্রামের নির্বাচনী সভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।
লোকসভা ভোটে ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের পরাজয়ের প্রহর গোনা চলছে বলে দাবি করছেন। আবার একই মুখে বলছেন, কংগ্রেসের নেতৃত্বে ‘ইন্ডিয়া’ জোট-সরকার গড়লে মুসলিমদের সংরক্ষণ দেবে এবং দলিত, আদিবাসী ও অন্যান্য অনগ্রসর সম্প্রদায়ের (ওবিসি) মানুষের সুযোগ কেড়ে নেবে! পঞ্চম দফার ভোটের দিনে ফের রাজ্যে এসে নিজেদের জয়ের স্বপ্ন এবং বিরোধীদের সম্পর্কে আতঙ্ক দু’হাতে ফেরি করে গেলেন নরেন্দ্র মোদী!
বাংলায় ষষ্ঠ দফায় ভোট ঢুকবে তফসিলি জাতি, জনজাতি, দলিত অধ্যুষিত রাঢ়বঙ্গে। তার আগে সোমবার প্রধানমন্ত্রীর জোড়া সভা ছিল তমলুক, কাঁথি ও ঘাটাল কেন্দ্রকে নিয়ে হলদিয়ায় এবং অন্য দিকে ঝাড়গ্রামে। দুর্যোগের কারণে প্রধানমন্ত্রীর কপ্টার শেষ পর্যন্ত হলদিয়ার উদ্দেশে উড়তে পারেনি। ওড়িশা থেকে কলাইকুণ্ডায় কিছু ক্ষণ অপেক্ষা করে প্রধানমন্ত্রী চলে গিয়েছিলেন ঝাড়গ্রামের সভায়। সেখান থেকেই ভার্চুয়াল মাধ্যমে হলদিয়ার হেলিপ্যাড ময়দানকে সংযুক্ত করে একসঙ্গেই চার কেন্দ্রের মানুষের উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন মোদী। এবং সেখানেই তাঁর ঘোষণা, ‘‘পঞ্চম দফার ভোট আজ শেষ হতে চলেছে। ‘ইন্ডিয়া’ জোট পাঁচ দফায় এসে পরাস্ত হয়েছে! আগামী ৪ জুন তারা ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে! ‘ইন্ডিয়া’ জোটের হারের কাউন্ট ডাউন চলছে। আর এক বার...।’’ জনতা চেঁচিয়েছে, ‘‘মোদী সরকার!’’
তৃতীয় বার সরকারে আসার ঘোষণা করে দিলেও কংগ্রেস কী ভাবে গরিব ও আদিবাসী মানুষের সঙ্গে বঞ্চনা করেছে এবং আগামী দিনেও করবে, সেই সংক্রান্ত নানা কথা শোনা গিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর মুখে। কখনও বলেছেন, ‘‘কংগ্রেস বলছে, সবার সম্পত্তির তদন্ত করবে। ভোট-জিহাদ যারা করবে, তাদের সেই সম্পত্তি দেবে! এটা আপনারা হতে দেবেন? বি আর অম্বেডকর আমাদের অধিকার দিয়েছেন। কিন্তু ‘ইন্ডিয়া’ জোট সংরক্ষণ গোলমাল করে দিচ্ছে। কর্নাটকে তফসিলি, ওবিসি সংরক্ষণ কেড়ে নিয়ে মুসলিমদের দিয়েছে। কংগ্রেস এর জবাব দিতে পারছে না!’’ কখনও আবার টেনে এনেছেন রাহুল গান্ধীর পুরনো ভিডিয়োর প্রসঙ্গ। সেই সূত্র ধরে মোদীর বক্তব্য, ‘‘শাহজাদার (রাহুল) ভিডিয়ো দেখলাম, বেশ কয়েক বছরের পুরনো। সেখানে শাহজাদা বলছেন, কংগ্রেস মুসলিমদের সংরক্ষণ দেবে। প্রধানমন্ত্রী থাকার সময়ে মনমোহন সিংহ বার বার বলতেন, সম্পদে প্রথম অধিকার সংখ্যালঘুদের। আমরা বললে কংগ্রেস বলছে, তাদের ইস্তাহারে তো এ সব লেখা নেই। এ বার দেখা গেল, খোদ শাহাজাদা বলেছেন! এখন ‘ইন্ডিয়া’ জোট কী বলবে?’’ প্রধানমন্ত্রীর দাবি, ‘‘এটা তো সংবিধানকে চ্যালেঞ্জ। সাম্প্রদায়িক এবং পরিবারবাদী অবস্থান।’’
একই দিনে সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। বাঁকুড়ার ওন্দার সভা থেকে পাল্টা হুঙ্কার, ‘‘বলছে সংখ্যালঘু, তফসিলিদের সংরক্ষণ কেড়ে নেবে। ক্ষমতা আছে? সংখ্যালঘুরা এতটা নিম্ন মানের নয়। সংরক্ষণ কাড়ার ক্ষমতা আমারও নেই। এটা সংবিধানের অধিকার। তফসিলি, ওবিসি, আদিবাসীর সংরক্ষণ থাকবে।’’ সেই সঙ্গেই তাঁর দাবি, ‘‘বাংলাই ভারত থেকে বিজেপিকে তাড়াবে! বাংলাই ‘ইন্ডিয়া’ জোটকে নেতৃত্ব দেবে।’’
রাজ্যে এসে প্রধানমন্ত্রী যে ভাবে কংগ্রেসকে এ দিন টানা নিশানা করেছেন, তার প্রেক্ষিতে বিদায়ী লোকসভায় বৃহত্তম বিরোধী দলের নেতা তথা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘যারা হেরে যাবে বলছেন, তাদের নিয়ে এত কথা কেন? বোঝা যাচ্ছে, মোদী আতঙ্কে ভুগছেন। দেশের সরকার পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত শীর্ষ ৯০ জন আমলার মধ্যে ওবিসি হাতে গোনা, এটা রাহুল গান্ধী সংসদে বলেছিলেন। ওবিসি, আদবাসীদের সংরক্ষণ, জমি বা কোনও সুযোগ-সুবিধা কেড়ে নেওয়া হবে, এমন তো কেউ বলেননি।’’ তাঁর আরও প্রশ্ন, ‘‘মোদী আগে বলুন, ২০২১ সালে না-হওয়ার পরে জনগণনা বন্ধ হয়েই থাকল কেন? কোন অংশের জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক অবস্থা কেমন, সেটা বোঝার জন্য জাতভিত্তিক সমীক্ষা করাতে মোদীর সরকার আপত্তি করেছে কেন?’’
কংগ্রেস এবং তৃণমূল কংগ্রেসকে এক বন্ধনীতে এনেও ফের আক্রমণ শোনা গিয়েছে মোদীর গলায়। তাঁর মন্তব্য, ‘‘পুরো তৃণমূলের আক্রোশ এখন আমাদের উপরে। মানুষ তৃণমূলকে ভোট দিচ্ছেন না। তৃণমূলের জাহাজ ফুটো হয়ে গিয়েছে! তারা এখন কংগ্রেসকে বার্তা দিচ্ছে। কিন্তু কংগ্রেসও ডুবন্ত জাহাজ! একসঙ্গে সওয়ারি করলেও ডুববে দুই দল!’’ শেষে আবার আদিবাসী প্রসঙ্গে কংগ্রেস, তৃণমূল ও বামেদেরও একত্রে বিঁধেছেন। মোদীর কথায়, ‘‘আদিবাসীদের উন্নয়ন চায়নি কংগ্রেস। আদিবাসী এক জন মহিলাকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে হারাতে চেয়েছিল কংগ্রেস, তৃণমূল ও বামেরা। যারা আদিবাসী মহিলাকে রাষ্ট্রপতি হতে দিতে চায়নি, তাদের বিশ্বাস করবেন?’’
জবাবে অধীর বলেছেন, ‘‘মোদীর বলার মতো ওই একটাই বিষয়, আদিবাসী মহিলাকে রাষ্ট্রপতি করেছেন। কিন্তু তাতে আদিবাসী সমাজের কী উন্নয়ন হয়েছে?’’ আর প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে রাজ্যের মন্ত্রী ও তৃণমূল নেত্রী শশী পাঁজার পাল্টা মন্তব্য, ‘‘আসলে বিজেপি হেরে যাওয়া যুদ্ধ লড়ছে। ওদের উদ্বিগ্ন দেখাচ্ছে। বিজেপির প্রার্থীরা কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন। প্রার্থীরা ভোট-কেন্দ্রে গোলমালের চেষ্টা করছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy