লক্ষ্মীর ভান্ডারের সুবিধার প্রভাব অনেকটাই। —ফাইল ছবি।
রাজ্যে বিপুল জয়ের রাতেই লক্ষ্মীর ভান্ডারের টাকা পেলেন এই সরকারি প্রকল্পের আওতায় থাকা মহিলারা। রাজ্যের শাসক দলের এই জনপ্রিয় প্রকল্প যে ভোটে তাঁদের পক্ষে সুবিধাজনক হয়েছে, মুক্ত কণ্ঠে স্বীকার করছেন অনেক তৃণমূল নেতাই।
মুর্শিদাবাদে এ বার ভোট পড়েছে অন্য বারের তুলনায় কিছু কম। অনেকে বলছেন, এই জেলার পরিযায়ী শ্রমিকেরা ইদের পরে ভোটের জন্য অপেক্ষা না করে ফিরে গিয়েছেন কাজের জায়গায়। তাঁদের অনেকের পরিবার গ্রামেই রয়েছে। সেই মহিলারা লক্ষ্মীর ভান্ডারের টাকা পাচ্ছেন। মুর্শিদাবাদে মোট ভোটার ৫৬ লক্ষ ৯৩ হাজার ৮১৮ জন, যার মধ্যে মহিলা ২৮ লক্ষ ৩ হাজার ৩৩০ জন। তাঁদের মধ্যে লক্ষ্মী ভান্ডারের উপভোক্তা ১৬ লক্ষ ৪০ হাজার ৮৭৯ জন। মহিলাদের ভোট তিনটি কেন্দ্রে গড়ে ৮০-৮৫ শতাংশ পড়েছে। জেলার দুই হেভিওয়েট প্রার্থী, কংগ্রেসের অধীর চৌধুরী ও সিপিএমের মহম্মদ সেলিমকে তৃণমূল প্রার্থীরা হারিয়েছেন। দলের একাংশের মতে, লক্ষ্মীর ভান্ডার এই জয়ের পথ অনেকটা সুগম করে দিয়েছে।
মানছেন বিরোধী দলের নেতারাও। গত লোকসভায় বিজেপি সিঙ্গুরে প্রায় ১১ হাজার ভোটে এগিয়েছিল। দু’বছর পরে বিধানসভা ভোটে তৃণমূল ২৮ হাজারের বেশি ভোটে জেতে। এ বারের লোকসভা ভোটে তৃণমূল এখানে এগিয়ে ১৯ হাজার ভোটে। সিঙ্গুরের বিজেপি নেতা সঞ্জয় পাণ্ডের বক্তব্য, “বিধানসভা ভোটের তুলনায় আমরা হাজার দশেক ভোট মেকআপ করেছি। কিন্তু লক্ষ্মীর ভান্ডারের জন্য পুরোটা পারলাম না।”
কলকাতা লাগোয়া ভাঙড়ের প্রত্যন্ত এলাকার বহু মানুষ প্রান্তিক চাষি। মহিলারা কেউ বধূ। কেউ গৃহ সহায়িকার কাজ করেন। তাঁদের কাছে লক্ষ্মীর ভান্ডারের সুবিধার প্রভাব অনেকটাই। সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য তুষার ঘোষ বলেন, “লক্ষ্মীর ভান্ডারের বড় প্রভাব এই ভোটে পড়েছে।” বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য সুনীপ দাসও বলেন, “বাংলায় তৃণমূলের ভাল ফলের ক্ষেত্রে লক্ষ্মীর ভান্ডারের প্রভাব অবশ্যই পড়েছে। গ্রামবাংলায় আমরা মহিলাদের ভোট তেমন পাইনি।” এক ছবি সন্দেশখালি-সহ বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রেও। লক্ষ্মীর ভান্ডারের জন্য মহিলা ভোটের বড় অংশ জোড়াফুলে এসেছে, দাবি তৃণমূলের। পাথরপ্রতিমার রামগঙ্গার প্রতিমা দাস বলেন, “দিদি আমাদের কথা ভেবে লক্ষ্মীর ভান্ডার দিয়েছেন। এতে খুব উপকার হয়েছে। তাই দিদির পাশে থেকেছি।” ব্যারাকপুর কেন্দ্রে ৪৮% মহিলা ভোটারের মধ্যে ৩৫% ভোট পেয়েছে তৃণমূল। এর একটা বড় অংশ ‘লক্ষ্মীর ভান্ডারে’র সৌজন্যে, দাবি পার্থ ভৌমিকের।
পশ্চিম মেদিনীপুরের মেদিনীপুর এবং ঘাটাল, এই দুই আসনেই জিতেছে তৃণমূল। মেদিনীপুরে ১৮ লক্ষ ১১ হাজার ভোটারের মধ্যে মহিলা ভোটার ছিলেন ৯ লক্ষ ২ হাজার। ঘাটালে ১৯ লক্ষ ৩৯ হাজার ভোটারের মধ্যে মহিলা ভোটার ৯ লক্ষ ৫৪ হাজার। লক্ষ্মীর ভান্ডারকে সামনে রেখেই প্রচার করেছিল তৃণমূল। দলের জেলা চেয়ারম্যান দীনেন রায় লক্ষ্মীর ভান্ডারকেই ‘কৃতিত্ব’ দিচ্ছেন। তাঁর বিধানসভা কেন্দ্র খড়্গপুর থেকে মেদিনীপুরের তৃণমূল প্রার্থী জুন মালিয়া ‘লিড’ পেয়েছেন ৩২ হাজার। তাঁর দাবি, তফসিলি মহিলাদের অধিকাংশ ভোটই তৃণমূলের বাক্সে পড়েছে। ঝাড়গ্রাম লোকসভায় মোট ভোটারের প্রায় ৫০ শতাংশ মহিলা। তার প্রায় ৯২ শতাংশ তৃণমূলকে ভোট দিয়েছেন বলে প্রাথমিক পর্যালোচনায় জানা যাচ্ছে।
বাঁকুড়া কেন্দ্রের জয়ী তৃণমূল প্রার্থী অরূপ চক্রবর্তীও একই কথা বলছেন। জয় না মিললেও মহিলা ভোটের একটা বড় অংশের সমর্থন তাদের দিকে গিয়েছে বলে অনুমান পুরুলিয়ার শাসক দলের একাংশের। বিষ্ণুপুরে জয়ী বিজেপি প্রার্থী সৌমিত্র খাঁ মানছেন, “আমার কর্মীদের বৌয়েরা মিছিলে গিয়েছেন, অথচ ভোট দিয়েছেন তৃণমূলে। এটা লক্ষ্মীর ভান্ডারের ফল।” বর্ধমান, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ-সহ বেশ কিছু জায়গায় ভোট ছিল ১৩ মে। তার তিন-চার দিন আগে লক্ষ্মীর ভান্ডারের টাকা ঢোকে উপভোক্তাদের অ্যাকাউন্টে। ভোটে তার সরাসরি প্রভাব পড়েছে মনে করছেন নেতাদের একাংশ। নান্দাইয়ে সিপিএম পরিবারের মহিলাও লক্ষ্মীর ভান্ডারের জন্য তৃণমূলকে ভোট দিয়েছেন, এমন উদাহরণ রয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy