—প্রতীকী চিত্র।
ভাগ্যকে ধন্যবাদ দিচ্ছেন সুন্দরবনের হিঙ্গলগঞ্জের যোগেশগঞ্জের সম্রাট মণ্ডল। ভালোয় ভালোয় গত ২০ মে বিহারে শিক্ষকতার পরীক্ষা দিয়ে ফিরেছেন। তখন না-ছিল ভোট। না দুয়ারে এসে কড়া নেড়েছিল ঘূর্ণিঝড় রেমাল।
সে দিন বিহারে হাওড়া, হুগলির বহু পরীক্ষার্থীর সঙ্গেও সেখানে দেখা হয় তাঁর। রাজ্যে ভোট-টোট ফেলে শিক্ষকতার চাকরি খুঁজতে পড়শি রাজ্যে তাঁরা পাড়ি দিয়েছেন। রাজ্যের শিক্ষক নিয়োগ পরিস্থিতি ঘিরে যে ঘোর অনিশ্চয়তা, তারই ছবি ফুটে উঠেছে সম্রাটের বর্ণনায়।
প্রশ্নের উত্তরে সম্রাট জানান, হিঙ্গলগঞ্জ, হাসনাবাদ, সন্দেশখালিতে অনেকেই এই দুর্যোগের মধ্যেও কাল, রবিবার মজফ্ফরপুর, গয়া বা পটনায় পরীক্ষা দিতে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। ওই তল্লাটে ভোট ১ জুন। ঝড়ের ধাক্কা শুরুর আগেই রবিবার সকাল, সকাল এলাকা ছেড়ে বেরোনর পরিকল্পনা তাঁদের। ঝড় তীব্র চেহারা নিলে ঘর-বাড়ি, মা, বাবার কী অবস্থা হবে, কবে বাড়ি ফিরতে পারবেন, এই সব কিছু নিয়েই অবশ্য বেশ অনিশ্চয়তা রয়েছে।
বিএড কলেজের শিক্ষকদের হিসাব, বিহারের সেকেন্ডারি টিচার এলিজিবিলিটি টেস্ট বা ‘স্টেট’ দিতে পশ্চিমবঙ্গ থেকে কম করে ৪০ হাজার পরীক্ষার্থী যাচ্ছেন। পরীক্ষা চলছে, ১৮ থেকে ২৯ মে। উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষকতার চাকরিরও চাহিদা বিপুল। ১১ জুন থেকে ওই পরীক্ষা শুরু। পরীক্ষার্থীরা অনেকেই বলছেন, কয়েক বছর আগেও বাংলা থেকে কেউ বিহারে সরকারি পরীক্ষা দিয়ে স্কুল শিক্ষকতার চাকরি করতে যাচ্ছেন, ভাবা যেত না। সেখানে সংরক্ষণেরও সুবিধা নেই। সবাইকে সাধারণ পরীক্ষার্থী হিসেবে যেতে হচ্ছে।
পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরার শেখ পারভেজ আহমেদ বা দাঁতনের কৃষ্ণ হাঁসদা সোমবার, ২৭ মে, যথাক্রমে গয়া এবং পটনায় পৌঁছবেন বলে জানালেন। ২৯ বছরের পারভেজ বলছিলেন, “আমার বন্ধুরা বেশির ভাগই মার্বেল, কাঠ, দর্জির কাজ করছে। অনেকেই মহারাষ্ট্র, গুজরাত, দিল্লিতে। বিয়েথা-ও করে ফেলেছে ওরা। পড়াশোনা শিখে শিক্ষকতা করতে চেয়ে আমার এই দশা!”
বেলুড় রামকৃষ্ণ মিশনের শিক্ষণ মন্দির থেকে বিএড পাশ পারভেজ বিহারে নবম ও দশম শ্রেণির স্টেট পরীক্ষা দিতে যাবেন। পারভেজের বিষয় বাংলা। কাঁথির কলেজ থেকে বাংলায় স্নাতক কৃষ্ণও একই পরীক্ষা দিচ্ছেন। দু’জনেই এই প্রসঙ্গে বলছিলেন, “ঠিক এক দিন আগে পরীক্ষা পড়লেই আর ভোট দেওয়া হত না।”
তবে ঝড়ে মেদিনীপুরে কী হবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন দু’জনেই। কৃষ্ণর পরিকল্পনা, রবিবার সকাল, সকাল হাওড়ায় চলে আসার। তার পরে সেখান থেকে বিহারগামী
ট্রেন ধরবেন।
উত্তরবঙ্গে গঙ্গারামপুরের আমিনুল ইসলাম পরিবারে দ্বিতীয় প্রজন্মের শিক্ষার্থী। তাঁর বাবা প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষাতত্ত্বে পিএইচডি করছেন। তিনিও মজফফরপুরে পরীক্ষা দেবেন।
আর ৩১ বছরের সম্রাট বাংলা, ইতিহাস, শিক্ষাতত্ত্বে তিন-তিনটি এমএ, বিএড, এমএড, ডিএলএড ডিগ্রি জুটিয়ে ফেলেছেন। সেই সঙ্গে ছোট একটা চাকরিও করেন নদিয়ায়। তাঁরও পাখির চোখ, বিহারের শিক্ষকতার চাকরি।
সুন্দরবনে আসন্ন ঝড় ঘিরে আশঙ্কার পরীক্ষার দুশ্চিন্তা গ্রাস করছে তাঁকেও। স্বভাব-কবি সম্রাট মুখে মুখে কবিতা বানিয়ে নিয়মিত সমাজমাধ্যমে লেখেন। সন্ধ্যায় ফোনেই তিনি বলে উঠলেন— “জীবনে উঠুক তুফান, উঠুক ঝড়, আমরা বেকার, আমরা যাযাবর!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy