দিদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ভাই স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
দিদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ধমক’ খেয়েই ‘ইউ টার্ন’ নিলেন ভাই স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়।
ভোটের মুখে হঠাৎ ‘বেসুরো’ ছোট ভাই স্বপন ওরফে বাবুনের সঙ্গে তাঁর কোনও সম্পর্ক নেই বলে সাংবাদিক বৈঠক করে ঘোষণা করেছিলেন মমতা। সে কথা শুনেই সুর বদলালেন বাবুন।
বুধবার সকালেই তিনি হাওড়া সদরের তৃণমূলের প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। প্রার্থী পছন্দ হয়নি জানিয়ে বাবুন এমনও ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, দিদি (মমতা) তাঁকে অনুমতি না দিলেও তিনি হাওড়া থেকে নির্দল প্রার্থী হিসাবে ভোটে লড়বেন। দুপুরে সেই বাবুনই ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে জানিয়ে দিলেন, তিনি নির্দল প্রার্থী হিসাবে ভোটে দাঁড়াচ্ছেন না। আর দিদি তাঁকে নিয়ে যা যা বলেছেন, তার সবটুকুই তিনি ‘দিদির আশীর্বাদ’ হিসাবেই নিচ্ছেন।
বুধবার শিলিগুড়িতে একটি সাংবাদিক বৈঠক করে ছোট ভাই বাবুনের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করার ঘোষণা করেন তৃণমূলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা। তিনি জানিয়ে দেন, হাওড়া সদর লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী হতে না পেরে বাবুন যা করছেন বা বলছেন, তাতে গোটা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার ক্ষুব্ধ। মমতা বলেন, ‘‘আমি সরাসরি বলছি, যারা বেশি বড় হয়ে যায়, তাদের লোভও বেড়ে যায়। ওকে পরিবারের সদস্য বলেই আমি মনে করি না। সব সম্পর্ক ছেদ।’’ একই সঙ্গে মমতা ভাই বাবুনের কাজ নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘‘ওর অনেক কাজই আমি অনেক দিন ধরে পছন্দ করি না। কিন্তু সব কথা তো বাইরে বলা যায় না। আজ বলছি। আমাদের পরিবারে কেউ এ রকম নয়। এতে সবাই ক্ষুব্ধ।’’
মমতা যখন এ কথা বলছেন তার ঘণ্টাখানেক আগেই হাওড়া সদর লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন বাবুন। তিনি জানিয়েছিলেন, দলের প্রার্থিতালিকা দেখে অভিমান হয়েছে তাঁর। কারণ তাঁর পরামর্শ না মেনে সেখানে প্রার্থী করা হয়েছে প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়কে। যাঁকে তিনি অপছন্দ করেন এবং একই সঙ্গে মনে করেন, তিনি লোকসভা ভোটের প্রার্থী হওয়ার যোগ্য নন। কারণ প্রসূন এলাকার উন্নয়ন খাতে নিজের সাংসদ তহবিলের বরাদ্দটুকুও শেষ করতে পারেননি। প্রসূন সম্পর্কে যে তাঁর ‘অ্যালার্জি’ রয়েছে, তা-ও স্পষ্ট করে জানিয়েছেন মমতার ভাই।
বাবুন আরও বলেছিলেন, ‘‘যে ক্লাস ফাইভ পাশ করতে পারে না। তাকে দিয়ে গ্র্যাজুয়েশন করানো হচ্ছে। প্রসূনের থেকে অনেক ভাল ভাল প্রার্থী ছিল হাওড়ায়। অরূপ রায়, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, রানা চট্টোপাধ্যায়ের মতো অনেকেই ছিলেন। কিন্তু তাদের প্রার্থী না করে এমন একজনকে দেওয়া হল যার মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা নেই। আমার মতে, ওর মতো বাজে লোককে না দেওয়াই উচিত ছিল।’’ এ প্রসঙ্গেই হাওড়া থেকে নির্দল প্রার্থী হিসাবে ভোটে দাঁড়ানোর ইঙ্গিতও দিয়েছিলেন বাবুন। জানিয়েছিলেন, দিদি না করলেও তাঁকে বোঝাবেন, কেন ভোট দাঁড়াচ্ছেন। বাবুনের ওই মন্তব্যের পরই আসে মমতার জবাব।
শিলিগুড়িতে সাংবাদিক বৈঠকে মমতা বলেন, ‘‘ও ছোটবেলার কথা ভুলে গিয়েছে। বাবা যখন মারা গেল, ওর তখন আড়াই বছর বয়স। আমি আমার পরিবারের সবাইকে মানুষ করেছি। স্কুলে পড়িয়ে ৪৫ টাকা পেতাম। তার পর আমি রাজনীতি করতে শুরু করি। কিছু কিছু মানুষ আছে যাদের সব ভোটেই দাঁড়ানোর ইচ্ছা হয়। কাউন্সিলর, এমএলএ, এমপি সব ভোটে দাঁড়াতে চায়। কিন্তু আমি পরিবারতন্ত্র করি না। মানুষতন্ত্র করি। লোভীদের আমি পছন্দ করি না।’’ একই সঙ্গে মমতা স্পষ্ট করে দেন, ‘‘যে যেখানে খুশি যেতে পারে। স্বাধীন ভাবে ভোটে দাঁড়াতে পারে। তবে হাওড়া সদরে তৃণমূলের প্রার্থী, জোড়াফুলের প্রার্থী প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ই। অন্য কেউ নয়।’’
মমতার এই মন্তব্যের পরই বাবুন জানিয়ে দেন, তিনি নির্দল প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে যে কথা বলেছিলেন, তা ফিরিয়ে নিচ্ছেন। বাবুনের কথায়, ‘‘আমি বিজেপিতে যাচ্ছি না। কোথাও নির্দল প্রার্থী হিসাবেও লড়ব না। দিদি আমাকে যা বলেছে তা আমি দিদির আশীর্বাদ হিসাবে নিচ্ছি।’’
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার থেকেই মুখ্যমন্ত্রী মমতার ছোট ভাই বাবুনের বিজেপিতে যোগদান করা নিয়ে নানা জল্পনা ঘোরাফেরা করতে শুরু করেছিল রাজনীতির অলিন্দে। এরই মধ্যে হঠাৎ বাবুন দিল্লি চলে যাওয়ায় সেই জল্পনা আরও বেশি করে দানা বাঁধে। যদিও বাবুন সেই জল্পনায় নিজেই ইতি টানেন এবং জানিয়ে দেন, দিদি যতদিন আছেন, ততদিন তিনি কোথাও যাচ্ছেন না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy