মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল ছবি।
মাছ, মাংস ও মোগলকে এক পঙ্ক্তিতে এনে বিতর্কে জড়িয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই প্রসঙ্গকে আরও এক বার বাঙালির হেঁশেলে টেনে আনলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যা আদতে তাঁর ভরসা মহিলা ভোটারদের আবেগ ছোঁয়ার কৌশল বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
শনিবার বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুরের সভা থেকে কার্যত মোদীকে নিশানা করে মমতা বলেন, ‘‘শুধু বলছে, মাছ খাবেন না, মাংস খাবেন না, ডিম খাবেন না। আমরা বলছি, খাব। কারণ, প্রতি রাজ্যের একটা বিশেষত্ব আছে। আমি গুজরাতের ধোকলাও খাই। আপনার বাংলার মাছ নিয়ে আপত্তি কেন!’’ তার পরেই তিনি জুড়ে দেন, ‘‘বলছে, গর্ভবতীরাও ডিম খাবেন না। মাছ-মাংস না খেয়ে কি শুধু বার্লি, ব্যাঙের ছাতা খাবে?’’
এর আগে মমতা একটি সভায় জানিয়েছিলেন, মোদীকে তিনি মাছ রেঁধে খাওয়াতে চান। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এ দিন মেয়েদের শ্রম এবং তাদের পুষ্টির প্রসঙ্গও জুড়ে দিতে চেয়েছেন আমিষ-নিরামিষ বিতর্কের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘‘আমিষে একটা মাছ, মাংস বা ডিমের ঝোল করলেই রান্না হয়ে গেল। সেখানে নিরামিষে ডাল, মোচা, এঁচোড়ের তরকারি করো। শাক-বেগুন-পটল ভাজো। বড়া, টক করো— কত কী!’’ এ দিন কুলতলিতে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও অভিযোগ করেন, ‘‘মাছ খেলে দেশ বিরোধী?’’
এই সূত্রেই প্রশ্ন উঠেছে, মেয়েদের পুষ্টির বাস্তব চিত্রটা ঠিক কেমন এখানে? পুষ্টিবিদেরাও বলছেন, শুধু হেঁশেলের শ্রম কমাতে নয়, প্রাণীজ পুষ্টি শিশুর পাশাপাশি বয়ঃসন্ধিকালীন কিশোরী, অন্তঃসত্ত্বা, প্রসূতিদের স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই প্রয়োজনীয়। বাঁকুড়া মেডিক্যালের শিক্ষক-চিকিৎসক অর্পণ গোস্বামীর কথায়, ‘‘শাক-আনাজ, ফলমূলের পাশাপাশি প্রাণীজ প্রোটিনের গুরুত্বও অপরিসীম। বিশেষ করে মস্তিষ্কের বিকাশে, শারীরিক দুর্বলতা মেটাতে এর বিশেষ প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।’’
লক্ষ্মীর ভান্ডার, কন্যাশ্রী, রূপশ্রীর মতো মেয়েদের জন্য নানা প্রকল্প রয়েছে মমতার সরকারের। তাতে মহিলাদের ভোটও মিলেছে বার বার। তাই মনে করা হচ্ছে, এ বার কৌশলে নিরামিষ রান্নায় মহিলাদের বেশি ঝক্কির কথা তুলে মমতা সেই মহিলা ভোটকে আরও কাছে টানার চেষ্টা চালালেন। তবে তথ্য বলছে, গরিব পরিবারে মেয়েদের পাতে মাছ-ডিমে এখনও ঘাটতি রয়েছে। তা ছাড়া,বরাদ্দ কম থাকায় স্কুলে পড়ুয়াদের মিড-ডে মিল কিংবা অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে শিশু ও অন্তঃসত্ত্বাদের আধখানা ডিমও নিয়মিত দেওয়া যায় না বলে অভিযোগ। সে জন্য বরাদ্দ বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করেন শিক্ষকদের একাংশ। যদিও প্রশাসনের বক্তব্য, বরাদ্দ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে একা রাজ্য নয়, কেন্দ্রের ভূমিকাও রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীকে নিশানা প্রসঙ্গে বিষ্ণুপুরের বিজেপি প্রার্থী সৌমিত্র খাঁয়ের পাল্টা, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর কথার অপব্যাখ্যা করা ছাড়া তিনি (মমতা) আর কিছুই করতে পারেন না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy