—ফাইল চিত্র।
বেঙ্গালুরুর ক্যাফেতে বিস্ফোরণের ঘটনায় শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গের কাঁথি থেকে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এনআইএ এবং রাজ্য পুলিশের যৌথ অভিযানে অবশেষে ধরা পড়েছেন বিস্ফোরণের মূলচক্রীরা। শুক্রবার কোচবিহারে নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে সে প্রসঙ্গে মন্তব্য করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানিয়েছেন, বাংলায় লুকিয়ে থাকা অভিযুক্তদের তাঁর পুলিশ দু’ঘণ্টার মধ্যে ধরে দিয়েছে।
দিনহাটার সভামঞ্চ থেকে মমতা বলেন, ‘‘বেঙ্গালুরুতে একটা বোমা পড়েছিল। লোকগুলো কর্নাটকের। আমাদের এখানকার নয়। বাংলায় লুকিয়ে ছিল, দু’ঘণ্টার মধ্যে আমরা ধরে দিয়েছি। আমাদের পুলিশ ধরে দিয়েছে।’’ এর পর বিজেপির বিরুদ্ধে তোপ দেগে মমতা বলেন, ‘‘আমরা ওই দু’জনকে ধরে দিলাম। সেখানে ওরা বলছে, বাংলা নিরাপদ নয়! তা হলে কি গুজরাত, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, বিহার নিরাপদ? আসলে বাংলার মানুষ শান্তিতে থাকে। সেটা বিজেপির সহ্য হয় না।’’
গত ১ মার্চ রামেশ্বরম ক্যাফেতে ঢুকে বিস্ফোরক বোঝাই ব্যাগ রেখে আসেন এক ব্যক্তি। তাতে টাইমার সেট করা ছিল। এক ঘণ্টা পর হয় বিস্ফোরণ। তাতে ১০ জন আহত হন। পুলিশ জানিয়েছে, বিস্ফোরণ ঘটানোর জন্য আইইডি ব্যবহার করা হয়েছিল। কিন্তু সেই বিস্ফোরকের মাত্রা খুব বেশি না থাকায় অভিঘাত তেমন জোরালো হয়নি। ৩ মার্চ ঘটনার তদন্তভার হাতে নেয় এনআইএ। ঘটনায় জড়িত মূল অভিযুক্ত মুজ়াম্মিল শরিফকে ঘটনার ২৭ দিন পর পুলিশ গ্রেফতার করে। তবে আরও দু’জনের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। এনআইএ সূত্রের দাবি, ঘটনার পরেই তাঁরা বাংলায় চলে এসেছিল। শুক্রবার কাঁথি থেকে ওই দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এনআইএর সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের একটি দলও এই অভিযানে শামিল হয়েছিল।
এ প্রসঙ্গে পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার সৌম্যদীপ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘রাতে আমাদের কাছে খবর আসে। খবর আসার সঙ্গে সঙ্গেই সব পরিকল্পনা করে ফেলি। দু’ঘণ্টার মধ্যেই গ্রেফতার করা হয় দুই অভিযুক্তকে। আবারও বলছি, রাজ্য পুলিশ ও কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা যৌথ ভাবে এই অভিযান চালিয়েছে। তদন্ত সংক্রান্ত বাকি তথ্য কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাই দিতে পারবে।’’
কৃষ্ণনগরের বিজেপি প্রার্থীর সঙ্গে নরেন্দ্র মোদীর ভাইরাল ফোনালাপে শোনা গিয়েছিল, প্রধানমন্ত্রী বাংলায় ইডির বাজেয়াপ্ত করা তিন হাজার কোটি টাকা বিলিয়ে দেবেন বলছেন। তা নিয়ে কটাক্ষ করে মমতা বলেন, ‘‘উনি তিন হাজার কোটি টাকা জনগণকে ফিরিয়ে দেব বলছেন। আপনারা ভাগে কত পাবেন? ২১ টাকা। এক কেজি পেঁয়াজও হয় না। সারা দেশে বেকারের সংখ্যা বেড়েছে। কেন্দ্রের কোনও মাথাব্যথা নেই।’’
দিনহাটার সভা থেকে নাম না করে প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে কটাক্ষ করেন মমতা। বলেন, ‘‘ছাত্রছাত্রীদের চাকরি খেয়ে এখন বিজেপির প্রার্থী হয়ে বসে আছেন। লজ্জাও করেন না।’’
কেন্দ্রীয় সংস্থার তৎপরতা এবং গ্রেফতারি নিয়ে মমতা বলেন, ‘‘একমাত্র আদিবাসী মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন হেমন্ত সোরেন। তাঁকেও গ্রেফতার করে রেখে দিয়েছে। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীকেও গ্রেফতার করে রেখেছে। আমাদের ছেলেমেয়েদের গ্রেফতার করছে। আমি বলছি, কোনও ব্লকে এক জনকে গ্রেফতার করলে তাঁর স্ত্রী বা পরিবারের সদস্যেরা সেখানে এজেন্ট হবেন। কেউ ছাপ্পা ভোট দিতে এলেই তাঁরা ধরবেন।’’
১১ লক্ষ মানুষ ‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্পে টাকা দেওয়ার কথা জানালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাজেটেই সেই ঘোষণা হয়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। মমতা বলেন, ‘‘আপনারা চিন্তা করবেন না। আপনারা এ বছরের মধ্যে বাড়ি তৈরির টাকার অর্ধেক কিস্তি পাবেন। পরের বছর বাকিটা।’’
সিএএ নিয়ে দিনহাটা থেকেও আবার কেন্দ্রীয় সরকারকে আক্রমণ করলেন মমতা। সিএএকে তিনি ‘মাছের মাথা’ বলে উল্লেখ করেন। এনআরসিকে বলেন ‘মাছের লেজু’। ইউনিফর্ম সিভিল কোডকেও একই সুরে আক্রমণ করেছেন তিনি।
কেন্দ্রে জোট নিয়ে মমতা বলেন, ‘‘কেন্দ্রে ‘ইন্ডিয়া’ জোট হলেও বাংলায় সিপিএম, কংগ্রেসের বিরুদ্ধে লড়াই আমাদের। বিজেপির বিরুদ্ধে ভোট দিতে হলে বাংলায় তৃণমূলকে ভোট দিতে হবে। অন্য কাউকে নয়।’’
রেলমন্ত্রী থাকাকালীন উত্তরবঙ্গের জন্য কী কী করেছেন, মঞ্চে দাঁড়িয়ে তার তালিকা পড়ে শোনান মমতা। পর পর বেশ কিছু ট্রেন রুটের নাম পড়েন তিনি। বলেন, ‘‘কোচবিহার স্টেশন নতুন করে করেছি। বিমানবন্দর করেছি। পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজবংশী ভাষা অ্যাকাডেমি সব আমি করে দিয়েছি। আমরা করব সব, আর ভোট পাবে বিজেপি, তা কখনও হয়?’’
মন্ত্রী উদয়ন গুহের উদ্দেশে মমতা বলেন, ‘‘উদয়নকে বলব, বি কুল। ঠান্ডা মাথায় নির্বাচন করতে হবে। ও (নিশীথ প্রামাণিক) তোমাকে গন্ডগোলে জড়িয়ে ভোট করিয়ে নেবে। ভুলেও সেটা করতে দিও না। আগে থেকে নিজেকে তৈরি রাখো। শান্তি বজায় রাখো।’’
বালুরঘাটে অমিত শাহের সভাকে কটাক্ষ করেছেন মমতা। বলেন, ‘‘বালুরঘাটের নাম বলছে বেলুরঘাট। উনি বড় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। জায়গার নামটুকুও জানেন না। এসে বলছেন, ‘উল্টে ঝুলিয়ে রেখে দেব।’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মুখে এ কথা শোভা পায়?’’
নির্বাচন কমিশন জলপাইগুড়ির ঝড়ে ভেঙে যাওয়া বাড়ি গড়ে দেওয়ার অনুমতি দেয়নি। তা নিয়ে মমতা বলেন, ‘‘অসমকে ওরা উৎসবের টাকা দেওয়ার অনুমতি দিয়েছে। যাঁরা ২০ হাজার পেয়েছেন, প্রশাসন আবার ৪০ দেবে। মোট ১ লক্ষ ২০ হাজার প্রশাসন পৌঁছে দেবে। যাঁদের ঘর ভেঙেছে, ঘর তৈরি করতে শুরু করুন।’’
বেঙ্গালুরুর গ্রেফতার নিয়ে মমতা বলেন, ‘‘লোকগুলো বাংলার বাসিন্দা নয়। বাংলায় লুকিয়ে ছিল। দু’ঘণ্টার মধ্যে ধরে দিয়েছি। আমাদের পুলিশ ধরেছে।’’
কোচবিহারে গিয়ে বিজেপি প্রার্থী তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিককে নাম না করে খোঁচা দিলেন মমতা। তাঁকে ‘কচি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী’ বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।
দিনহাটার সভামঞ্চে পৌঁছলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সংহতি ময়দানে তাঁর সভাকে কেন্দ্র করে জনসমাগম হয়েছে।
উত্তরবঙ্গে প্রচারের মাঝে ইদ উপলক্ষে ‘বিরতি’ নিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতায় ফিরেছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার কলকাতার রেড রোডে ইদের নমাজ পাঠের অনুষ্ঠানেও যোগ দেন। তার পর শুক্রবার আবার উত্তরবঙ্গে গিয়েছেন।
কোচবিহারের দিনহাটার সংহতি ময়দানে শুক্রবার প্রথম সভা রয়েছে মমতার। কোচবিহারের তৃণমূল প্রার্থী জগদীশচন্দ্র বসুনিয়ার সমর্থনে প্রচার করবেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy