মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ফেসবুক থেকে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পার্থকে আপনারা সকলে চেনেন? ওঁকে ভোট দেবেন। ও রাজ্যের মন্ত্রী। কিন্তু ও বলেছে, আমার মন্ত্রিত্ব চাই না। মানুষের হয়ে কাজ করতে চাই। সংসদে তাঁদের কথা তুলে ধরতে চাই।’’
মমতা বলেন, ‘‘হাজার টাকার বিনিময়ে মায়েদের দিয়ে যা ইচ্ছা লিখিয়ে নিচ্ছে। সন্দেশখালি মোদীর জঘন্য কেলেঙ্কারি। মনে রাখবেন, এ জিনিস যেন না হয়। বাংলা এ সব বরদাস্ত করে না। আমাদের ভাই-বোনেরা একে অপরকে সম্মান করে। যদি কোথাও কোনও ঘটনা ঘটে, আমরা ব্যবস্থা নিই। যদি দাঙ্গা না চান, একটি ভোটও নয় বিজেপিকে। ভোট চলছে। গরমে ভোটের হার একটু কম। যাঁর যাঁর ভোট নিজে দেবেন, যাতে ভোটার তালিকায় নামটা থাকে। ভোট গণতান্ত্রিক অধিকার।’’
মমতা বলেন, ‘‘এনআরসি করতে দেব না। নিরাপত্তা আমাদের দায়িত্ব। মোদী হটাও। বিজেপি হটাও। জয় হিন্দ। তৃণমূল কংগ্রেস জিন্দাবাদ। বঙ্কিমচন্দ্র এই নৈহাটির মানুষ, যিনি ‘বন্দে মাতরম’ লিখেছিলেন। বাংলাই পথ দেখাব। সরকার তৈরি করতে মদত দেবে। দেখতে হবে, দেশ যাতে বিক্রি না হয়, মায়ের অসম্মান যাতে না হয়।’’
মমতা বলেন, ‘‘বলছে, ‘ইস বার ৪০০ পার’। আমি বলি পগারপার। এ বার ইন্ডিয়া জোট জিতবে। রাজ্যে শুধু তৃণমূলকে ভোট দেবেন। সিপিএমকে ভুলেও নয়। ওরা যা করেছিল। আর নয়।’’
মমতা বলেন, ‘‘মোদী এসে বলেন, ‘মাছ খাবেন না।’ যে যা ভালবাসে, তাই খাবে। চিংড়ি পটল, চিংড়ি মালাইকারি, যার যা ইচ্ছা খাবে। মোদীবাবু আপনি খেয়ে দেখুন না স্বাদটা কেমন? কথা দিচ্ছি, কাউকে দিয়ে করাব না, নিজে রান্না করব। ছোট থেকে রান্না করি। আপনি যদি বলেন ধোকলা খেতে, খাব। আমি খেয়েছি। গুজরাতে পাওয়া যায়। আমার কাছে জাতপাত বলে কিছু নেই। আসল মানুষ।’’
মমতা রেশন নিয়ে পরিসংখ্যান দিলেন। বলেন, ‘‘মাছের তেলে মাছ ভাজা হচ্ছে। আমরা গত ২ বছরে ১৮ হাজার কোটি টাকা দিয়েছি। কেন্দ্র টাকা দেয়নি। ওদের ভাগের ১২ হাজার কোটি টাকা দেয়নি। আমরা দিয়েছি ওদের ভাগের টাকা। মোদীর ছবি কেন থাকবে?’’
কেন্দ্রের দিকে ইছাপুর গান অ্যান্ড শেল ফ্যাক্টরি বন্ধ করা নিয়ে আঙুল মমতার। মমতা বলেন, ‘‘ইছাপুর কারখানা বন্ধ করে দেশের বরাত কেন বিদেশে দিয়েছ? সৌধ, রাস্তাঘাট, জল করেছি। কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে ছয় লেনের করা হয়েছে। ডানকুনি থেকে কল্যাণী পর্যন্ত ইকোনমিক করিডোর হচ্ছে। বলে, ওরা এমস করেছি। আমরা ১৮০ একর জমি দিয়েছি বিনামূল্যে। ওরা কি বলে? বলে না। এই জলে আমরাও টাকা দিই। বলে না।’’
মমতা বলেন, ‘‘এক জন স্বজন আছে। জেলে বসে খুনের পরিকল্পনা করে। যেমন বিকাশকে করেছিল। এদের ছুঁতে নেই। আমাদের সঙ্গে ছিল। মাঝে এসেছিল, ভেবেছিলাম বদলেছিল। ময়লা যায় না ধুলে, কয়লা যায় না মলে। বলছে আমরা চোর। এত বিজ্ঞাপন দিচ্ছিস কী করে? সকাল থেকে মোদীর মুখ আর প্রচার। এ দিকে ১০০ দিনের লোকের টাকা নেই। আমরা দেব। ভাটপাড়া মিল আমরা খুলিয়েছি।’’
মমতা বলেন, ‘‘গত বছরের লোকসভা নির্বাচন মনে আছে? দাঙ্গা লাগিয়েছিল। আমি ছুটে এসেছিলাম। আমায় গালাগাল দিয়েছিল। আমি থামিনি। সব পার্টি অফিস রং করিয়েছি। সব জায়গায় একা ঘুরে বেড়িয়েছি। আয়, কত ক্ষমতা আছে? আমি একা লড়তে পারি।’’
মমতা বলেন, ‘‘বিনা পয়সায় গ্যাস কি পাচ্ছেন? না। তা হলে সব গেলে থাকল কী? এখন বলে বোমা ফাটাব। কী ফাটাল? নাকি ২৬ হাজার জনের চাকরি খেল। চাকরি দেওয়ার ক্ষমতা নেই, কিল মারার গোসাঁই।’’
মমতা স্মরণ করেন সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়কে। তিনি বলেন, ‘‘নিজের কথা বলা উচিত না। তখন জ্যোতি বসুর রাজত্ব। প্রায় চুল কাটাতে যেতেন। মানুদা গল্প করেছিলেন। জ্যোতিবাবুর নাপিত কানের কাছে বলতেন, মমতা। চুল খাড়া হয়ে যেত জ্যোতিবাবুর। চুল কেটে দিতেন নাপিত। মানুদা বলতেন সেই গল্প। মোদীর এখন এক হাল। আমার নাম নেয়।’’
মমতা বলেন, ‘‘বিজেপি কী বলে ভোট চাইছে? ১০ বছর আগে বলেছিল, ১৫ লাখ টাকা দেবে। পেয়েছেন? ২ কোটি লোককে চাকরি দেবে বলেছিল। পেয়েছেন? রান্নার গ্যাস পেয়েছেন? মোদী গ্যারান্টি ফোর টোয়েন্টি। বিনামূল্যে নাকি রেশন, জল দিচ্ছেন। পেয়েছেন? আমার নামটা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মনে আসে। কারণ, ভয় দেখালে আমি একমাত্র ভয় পাই না।’’
মমতা বলেন, ‘‘আমরা বাংলা, পথ দেখাব। আগামী দিনে জেনে রাখবেন, মোদীর গ্যারান্টি আসছে না। ছোট্ট করে বলি, যাতে বোর না হন। এটা আমাদের ভোট নয়। ২০২১ সালের ভোটের আগে লক্ষ্মীর ভান্ডার, বিনামূল্যে রেশন, স্মার্টকার্ড করেছি। সবুজসাথী ম্যানিফেস্টোয় ছিল না। তবু দিই। কথা দিয়ে কথা না রাখলে আগেই মৃত্যু হবে আমার। যতটা পারব, ততটাই বলব। আমার জীবন কথার ভান্ডার।’’
মমতা বলেন, ‘‘দোষ প্রধানমন্ত্রীর নয়। তিনি জানেন না। দোষ তাঁদের, যাঁদের কথায় প্রার্থী করা হয়েছে।’’ এর পর মমতা ‘তুমি কি কেবলই ছবি’ আবৃত্তি করেন।
মমতা বলেন, ‘‘রবীন্দ্রনাথের জন্মস্থান শান্তিনিকেতন বলেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এটা নতুন নয়। সকলে জানেন, বাংলার সংস্কৃতি ওরা জানে না। আমরা কিন্তু দেশের সংস্কৃতি জানি। আমরা বলি, এ মাটি আমাদের গর্ব।’’ এর পর নিজের লেখা ছড়া বলেন মমতা।
মমতা বলেন, ‘‘এখানকার প্রার্থীর নামের বিষয়ে কথা বলতে চাই না। ছেলেকে দিয়ে উল্টো ছবি কেন দিলেন? রবীন্দ্রনাথের ছবিটাও চেনা যায় না? বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙে দিতে হয়, রবীন্দ্রনাথের ছবি উল্টে দিতে হয়? সোজা করে দিতে পারেন না? ছবি যখন দেয়, বলে ‘মোদীজি জিন্দাবাদ’। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জিন্দাবাদ বলে না।’’
মমতা বলেন, ‘‘এত দিন রাজনীতি করছি। এত দিন ইছাপুরে সব বন্দুক তৈরি হত। আজ অর্ডার পায় না। কারণ, ইছাপুর গান শেল ফ্যাক্টরির অর্ডার কেড়ে ইজরায়েলকে দিয়েছে। বা অন্য কোনও দেশকে। কারণ, ‘বিশ্বগুরু’ হবেন তিনি। ‘বিশ্বগুরু’ এক জনকেই চিনি। তিনি কবিগুরু।’’
মমতা বলেন, ‘‘নোয়াপাড়ার খুব প্রিয় ছেলে ছিলেন বিকাশ বোস। আমি তখন যুব কংগ্রেসে। তিনিও ছিলেন। পুরো মৃত্যুকাণ্ড চাপা দেওয়া হয়। সিপিএম আমল। নাম বলব না। আপনারা গেস করুন। কে করেছিল। সিপিএম আমলে অনেকে বেঁচেছিল। এখন বিজেপি আমলে সাত খুন মাফ অ্যাডজাস্ট করলেই। বিজেপি ওয়াশিং মেশিলে কালোরা সাদা হয়ে বেরিয়ে আসছে।’’
মমতা জানান, গলা বসে গিয়েছে গত দেড় মাস ধরে প্রচার করতে করতে। তবু কিছু কথা বলতে এসেছেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy