—প্রতীকী চিত্র।
প্রচারে তাঁরা ছিলেন। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নিজের জেলা পূর্ব মেদিনীপুর-সহ রাজ্যের নানা প্রান্তে বিজেপির ভোট প্রচারে দেখা গিয়েছে সন্দেশখালির নির্যাতিতাদের। এ বার তাঁরা এলেন জঙ্গলমহলে। এবং সন্দেশখালির যে স্টিং-ভিডিয়ো নিয়ে তোলপাড় চলছে, যেখানে নিশানা করা হয়েছে খোদ বিরোধী দলনেতা, তাকে ‘তৃণমূলের সাজানো’ বলে দাবি করলেন সন্দেশখালির নির্যাতিতারা। শুভেন্দুর সুরেই বললেন, ‘‘পুরোটাই জালিয়াতি।’’
জঙ্গলমহলের জেলা ঝাড়গ্রাম নিজের এলাকা বলেই দাবি করেন শুভেন্দু। এখানে বিজেপি প্রার্থীর মনোনয়ন জমার দিনও হাজির ছিলেন তিনি। স্পষ্ট বলেছিলেন, ‘‘এই আসন আমার চাই।’’ নন্দীগ্রামের পর শুভেন্দুর দ্বিতীয় রাজনৈতিক ভিত্তিভূমি সেই জঙ্গলমহলে প্রচারে এসেছেন সন্দেশখালির নির্যাতিতারা। উত্তরবঙ্গ-সহ একাধিক জেলায় বিজেপির প্রচারে থাকার পরে পাঁচজন মাঝবয়সী মহিলা ঝাড়গ্রামে এসেছেন। তাঁরা তাঁদের অত্যাচারের কাহিনী শোনাচ্ছেন ও জাগ্রত করছেন অন্য মহিলাদের।
তৃণমূল ও বিজেপি, দুই শিবিরের পাখির চোখই এ বার মহিলা ভোট। এ ক্ষেত্রে তৃণমূল লক্ষ্মীর ভান্ডারের কথা বলছে তো বিজেপি অন্নপূর্ণ ভান্ডারে আরও বেশি টাকার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। লক্ষ্মীর ভান্ডার নিয়ে গানও লিখেছেন ঝাড়গ্রামের তৃণমূল প্রার্থী কালীপদ সরেন। পাশাপাশি গেরুয়া শিবির সন্দেশখালির মেয়েদের এনে ইতিমধ্যে, গোপীবল্লভপুর, বিনপুরের বিভিন্ন জায়গায় প্রচার করেছে।
সোমবার নয়াগ্রাম ব্লকে গিয়ে গ্রামের মহিলাদের সঙ্গে কথা বলেন সন্দেশখালির পাঁচ মহিলা। সন্দেশখালির মাঝবয়সী বিবাহিত মহিলারা এ দিন বলেন, ‘‘১৩ বছর ধরে তৃণমূলের দুষ্কৃতি বাহিনী আমাদের উপর অত্যাচার করেছে। আমরা শান্তিতে বাস করতে পারিনি। লক্ষ্মীর ভান্ডার দিয়ে দিদিমণি আমাদের মুখ বন্ধ করে রাখতে চাইছেন। আমরা টাকা চাই না, আমাদের ইজ্জত ও সম্মান চাই।’’ তাঁদের কথায়, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মা-মাটির মানুষের কথা বলেন। উনি যদি মা হন, তাহলে মেয়েদের ইজ্জত নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন কেন? দিদিমণি সব জায়গায় যাচ্ছেন, আমাদের সামনে আসছেন না কেন?’’ সঙ্গে জুড়ছেন, ‘‘আমরা এই সরকার চাই না। এই সরকার বদলাতে চাই।’’
জানা গিয়েছে, বিজেপির বিভিন্ন বুথ বা শক্তিকেন্দ্র প্রমুখের উদ্যোগে গ্রামের মহিলাদের জমায়েত করা হচ্ছে। তাঁদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলছেন সন্দেশখালির মহিলারা। নানা প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন। বিজেপির মহিলা মোর্চার সভানেত্রী পুষ্প চেট্যালের দাবি, ‘‘বিনপুর বিধানসভার জামবনি ব্লকের একটি বুথেই ১৪০ জন গ্রামের মহিলা জড়ো হয়েছিলেন।’’ উল্লেখ্য, ঝাড়গ্রাম লোকসভা কেন্দ্রে ৮ লক্ষ ৮৮ হাজার ৩৩৫ মহিলা ভোটার রয়েছেন। প্রায় ৫০ শতাংশ মহিলা ভোটার। এছাড়াও ঝাড়গ্রাম জেলায় বিনপুর, ঝাড়গ্রাম, নয়াগ্রাম ও গোপীবল্লভপুর এই চারটি বিধানসভায় মহিলা ভোটারের সংখ্যা পুরুষের তুলনায় বেশি।
তবে সম্প্রতি সন্দেশখালির স্টিং-ভিডিয়ো অস্বস্তি বাড়িয়েছে গেরুয়া শিবিরের। সেখানে দাবি করা হয়েছে, শুভেন্দুর পরিকল্পনাতেই টাকার বিনিময়ে সন্দেশখালির মেয়েদের দিয়ে নির্যাতনের মিথ্যা অভিযোগ করানো হয়েছে। তবে শুভেন্দু এক্স হ্যান্ডলে (পূর্বতন ট্যুইটর) পোস্ট করে দাবি করেছেন, ভিডিয়োটি ডিপফেক প্রযুক্তিতে তৈরি হয়ে থাকতে পারে। ওই ভিডিয়ো প্রসঙ্গে ঝাড়গ্রামে আসে সন্দেশখালির নির্যাতিতারাও বলছেন, ‘‘ওই ভিডিয়োটি পুরোটাই সাজানো। তৃণমূলের মন্ত্রীরা চোর। মেয়েদের নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। হাজার হাজার মহিলা কি মিথ্যা কথা বলছেন?’’
ঝাড়গ্রামের বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা পাল্টা বলেন, ‘‘সবাই জেনে গিয়েছে সন্দেশখালির ঘটনাটি সাজানো। প্রমাণিত হয়ে গিয়েছে বিজেপি নোংরা রাজনীতি। জঙ্গলমহলে নোংরা রাজনীতি চলবে না।’’ বিজেপির মহিলা মোর্চার সভানেত্রী পুষ্প চেট্যালের পাল্টা বক্তব্য, ‘‘নির্যাতিতাদের উপর কী ধরনের অত্যাচার হয়েছে তা তাঁরা বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে মহিলাদের শোনাচ্ছেন। এক হাজার টাকার লক্ষ্মীর ভান্ডারের পরিণিতি মহিলারা শুনছেন। মহিলারা জেগে উঠছেন। মহিলা ভোট আমাদের পক্ষেই থাকবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy