নিশীথ প্রামাণিক। —ফাইল চিত্র।
লোকসভা ভোটে তৃণমূল জয়ী হতেই, কোচবিহারে বিজেপির দখলে থাকা গ্রাম পঞ্চায়েতের ‘রাশ’ গেরুয়া শিবিরের হাতছাড়া হতে শুরু করেছে। শুক্রবার প্রাক্তন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী তথা লোকসভা ভোটে বিজেপির প্রার্থী নিশীথ প্রামাণিকের ‘গড়’ বলে পরিচিত ভেটাগুড়ি ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের দখলও নিয়েছে তৃণমূল। এ দিন ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান, উপপ্রধান-সহ বিজেপির ১১ জন পঞ্চায়েত সদস্য তৃণমূলে যোগ দেন। সিতাইয়ে নবনির্বাচিত সাংসদ সাংসদ জগদীশচন্দ্র বর্মা বসুনিয়া তাঁদের হাতে দলের পতাকা তুলে দেন। এ দিনই ভেটাগুড়িতে তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ে ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান-সহ বিজেপির কয়েক জন পঞ্চায়েত সদস্যের হাতে দলের পতাকা তুলে দেন কোচবিহার জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ নুর আলম হোসেন। ফলে, ১৮ সদস্যের ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের দখল কার্যত তৃণমূলের হাতে এসেছে। পঞ্চায়েত ভোটে ১২টিতে বিজেপি, ছ’টিতে তৃণমূল জয়ী হয়। দলবদলের ফলে তৃণমূল সদস্য সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ জন।
এ দিনই মাথাভাঙা ২ ব্লকের বিজেপি পরিচালিত পারডুবি গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান পূর্ণিমা বর্মণ-সহ দু'জন পঞ্চায়েত সদস্য তৃণমূলে যোগ দেন। মোট ২২ আসনের ওই গ্রাম পঞ্চায়েতে বিজেপি ১২টি, তৃণমূল ১০টিতে জয়ী হয়েছিল। এ দিন তিন বিজেপি পঞ্চায়েত সদস্যের দলবদলে তৃণমূলের সদস্যসংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১৩ জন। মাথাভাঙায় তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক তাঁদের দলের পতাকা দেন। বুধবার কোচবিহারে তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ে ওই দলে যোগ দেন মাথাভাঙা ১ ব্লকের নয়ারহাট গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান মাম্পি বর্মণ ও কোচবিহার জেলা যুব মোর্চার সহ-সভাপতি তথা পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী দলনেতা হেমন্ত বর্মণ। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে নয়ারহাট পঞ্চায়েতের ২১টি আসনের মধ্যে বিজেপি ১২টি ও তৃণমূল ৯টি আসনে জয়লাভ করে। বিজেপি বোর্ড গড়ে। নয়ারহাটে প্রধান দলবদল করায় সেখানে বোর্ডের নিয়ন্ত্রণ কার্যত তৃণমূলের হাতে গিয়েছে।
তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি অভিজিৎ বলেন, “বিজেপির জেতা ২৪টি গ্রাম পঞ্চায়েতে ওদের প্রধান, উপপ্রধান, সদস্যদের মধ্যে অলিখিত প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। কার আগে, কে তৃণমূলে যোগ দেবেন। নানা বিষয়ে খোঁজ করে তবেই কোথাও প্রধান, কোথাও উপপ্রধান বা সদস্যদের দলে নিচ্ছি। সবাইকে নেওয়ার ব্যাপার নেই।” বিজেপির কোচবিহার জেলা সাধারণ সম্পাদক বিরাজ বসুর অবশ্য দাবি, “লোকসভা ভোটের ফল প্রকাশের পরে জেলা জুড়ে সন্ত্রাসের আবহ তৈরি করছে তৃণমূল। দলের পঞ্চায়েত প্রধান, মহিলা পঞ্চায়েত সদস্যদের স্বামীদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। যাঁরা তৃণমূলে যান, সকলেই সন্ত্রাসের পরিস্থিতির শিকার। এক জনও স্বেচ্ছায় তৃণমূলে যোগ দেননি, দেবেনও না।”
তৃণমূল সাংসদ জগদীশচন্দ্র বর্মা বসুনিয়া বলেন, ‘‘ভেটাগুড়ি ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ও উপপ্রধান-সহ ১১ জন পঞ্চায়েত তৃণমূলে যোগদান করেছেন। তাঁরা আগে তৃণমূলেই ছিলেন। নানা ভাবে ভয়-ভীতি সন্ত্রাসের আবহ তৈরি করে বিজেপিতে যোগ দিতে তাঁদের এক রকম বাধ্য করা হয়েছিল।”
ভেটাগুড়ির পরে বিজেপি পরিচালিত মাতালহাট গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সহ ১৫ জন সদস্য তৃণমূলে যোগ দিলেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় দিনহাটার গোসানি রোডের আমন্ত্রণ ভবনে বিজেপির এই পঞ্চায়েত সদস্যরা তৃণমূলে যোগ দেন। তাঁদের হাতে দলীয় পতাকা তুলে দেন তৃণমূল নেতা কোচবিহার জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ নুর আলম হোসেন ও দলের দিনহাটা এক এ ব্লক সভাপতি সুধাংশু রায়। জানা গিয়েছে, ২২ সদস্য-বিশিষ্ট গ্রাম পঞ্চায়েতে গত নির্বাচনে বিজেপি দলের প্রতীকে জয়ী হন ১৫ জন এবং সাত জন তৃণমূলের প্রতীকে জয়ী হন। গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান মানবেন্দ্র রায় বলেন, ‘‘মানুষ তৃণমূলের প্রার্থীকে সদ্য লোকসভা নির্বাচনে জয়ী করায় এলাকার উন্নয়নকে এগিয়ে নিয়ে যেতে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিলাম।’’
বিষয়টি নিয়ে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। ফোন বেজে যায়। মেসেজের উত্তর মেলেনি। দলবদলের পরে ভেটাগুড়ি ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান প্রিয়ঙ্কা দে, উপপ্রধান দীপকচন্দ্র বর্মণ অবশ্য জানিয়েছেন, এ বারের লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যের মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের পক্ষেই রায় দিয়েছে। তাঁরা জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে রায়ের পক্ষেই রয়েছেন। সে জন্যই বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগদান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy