শুভেন্দু অধিকারী। —ফাইল চিত্র।
আদিবাসী কুড়মি সমাজ নির্বাচনে নেমে বিজেপিকে যে প্রবল ‘চাপে’ ফেলে দিয়েছে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী কোনও ভাবেই তা চেপে রাখতে পারছেন না। রবিবার পুঞ্চার পরে বৃহস্পতিবার বরাবাজারের সভাতেও তিনি এ নিয়ে মুখ খুলেছেন। এ দিনও তিনি আদিবাসী কুড়মি সমাজকে তৃণমূলের ‘বি-টিম’ হিসাবে দাগিয়ে দেন। অভিযোগ করেন, বিজেপির ভোট কেটে তৃণমূলকে জেতাতেই ভোটে লড়ছেন কুড়মি নেতা অজিতপ্রসাদ মাহাতো।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে,কুড়মি নেতা অজিত মাহাতো প্রার্থী হওয়ার পরেই অতীতের লোকসভার ভোটের অঙ্ক বদলাতে পারে। গতবারের মত কুড়মি সমাজের সমর্থন নাও পেতে পারে বিজেপি প্রার্থী।
রাজনেতিক পর্যবেক্ষদের একাংশের মতে,কুড়মি ভোট ঝুলিতে না এলে সেক্ষেত্রে ভোট বৈতরণী পার হতে আদিবাসীদের সমর্থন একান্তই দরকার সেটা বুঝেই আদিবাসী সম্প্রদায়ের মন জয়ে চেষ্টার কসুর রাখছে না বিজেপি নেতারা। শুভেন্দুর আগে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ঝাড়গ্রাম লোকসভার (বান্দোয়ান বিধানসভা এই লোকসভার আওতাভুক্ত) বিজেপি প্রার্থী প্রণত টুডু দাবি করেন, বিজেপি কোনও ভাবেই আদিবাসী বিরোধী নয়। বরং বিজেপির জন্যই দেশে প্রথম আদিবাসী মহিলা রাষ্ট্রপতি হয়েছেন।
আদিবাসী কুড়মি সমাজ তৃণমূল ও বিজেপির সঙ্গে তাদের সমান দূরত্ব রয়েছে বলে জানালেও ঝাড়গ্রাম লোকসভার কুড়মি সমাজের প্রার্থী সূর্য সিং বেসরার একটি মন্তব্যকে নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। সে প্রসঙ্গ টেনে সভায় শুভেন্দু বলেন, ‘‘কুড়মি সমাজ লড়াই করছে তাদের এসটি করতে হবে বলে। এটা সামাজিক লড়াই, আমাদের কিছু বলার নেই। কিন্তু বলুন, আপনাদের প্রার্থী সূর্য সিং বেসরা কার প্রার্থী? কুড়মি সমাজ নাকি তৃণমূলের ‘বি টিম’। ঝাড়গ্রামে বলছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রধানমন্ত্রী দেখতে চান।’’
এরপরেই শুভেন্দু কটাক্ষ করেন, ‘‘মনে নেই, জঙ্গলমহলে ভাইপো এসেছিল। বলেছিল, কুড়মিরা সব বিজেপিকে ভোট দেয়। আমার কুড়মি ভোট লাগবে না। তাই কুড়মিদের নেতা অজিত মাহাতো দাঁড়িয়েছেন বিজেপির ভোট কেটে তৃণমূলকে জেতানোর জন্য!’’
তবে ঝাড়গ্রাম লোকসভায় আদিবাসী সম্প্রদায়ের ভোট বড় ফ্যাক্টর। বান্দোয়ানে গত লোকসভায় তিন হাজারের মতো ‘লিড’ পেয়েছিল বিজেপি। পরে বিধানসভা ভোটে ১৬ হাজারের বেশি ভোটে জেতে তৃণমূল।
শুভেন্দু দাবি করেন, নিখরচায় আদিবাসী সন্তানদের শিক্ষা দিতে প্রধানমন্ত্রী সারা দেশে একলব্য আবাসিক স্কুল শুরু করলেও এখানে রাজ্য সরকার জমি দেয়নি। মুন্ডা-সহ ৭৫টি প্রাচীনতন জনজাতি গোষ্ঠীর ৩৭ হাজার গ্রামকে দত্তক নিয়ে প্রধানমন্ত্রী সেগুলি আধুনিক মানের গড়ে দিয়েছেন। শুভেন্দুর প্রশ্ন, কেন এ রাজ্য সেই প্রকল্প থেকে বঞ্চিত রইল? কেন এই রাজ্যে চুক্তিভিত্তিক পদে নিয়োগে এসসি-এসটিদের জন্য সংরক্ষণ নেই? বান্দোয়ানে গাছ চুরির ঘটনায় স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক রাজীবলোচন সরেন জড়িত বলে নালিশ করেন শুভেন্দু। অভিযোগ উড়িয়ে দেন রাজীবলোচন। তিনি বলেন, ‘‘তাঁর কাছে তথ্য প্রমাণ থাকলে দেখান। আমি পেশায় শিক্ষক, তাঁর মতো চোর-ডাকাত নই। আমি বিধায়ক হয়েই জঙ্গল সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছি।’’
তৃণমূলের জেলা সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়ার দাবি, ‘‘একমাত্র এ রাজ্যেই আদিবাসীরা সুরক্ষিত। কুড়মিদের দাবির নিয়ে সারা দেশেই একমাত্রই বাংলার মুখ্যমন্ত্রীই সচেষ্ট।’’
পাল্টা অজিত মাহাতোর বক্তব্য, ‘‘ঝাড়গ্রাম আসন এসটি সংরক্ষিত হওয়ায় কুড়মি সম্প্রদায় থেকে প্রার্থী দিতে না পেরেই সূর্য সিং বেসরাকে আমরা সমর্থন দিয়েছি।
উনি আমাদের কমিটির সদস্য নন। তবে তাঁর ওই মন্তব্যকে আমরা সমর্থন করি না। আগেই ওই ধরনের কিছু বক্তব্যকে আমরা কুড়মি সমাজ খণ্ডন করেছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy