—প্রতীকী চিত্র।
নির্বাচনের আগে বামেদের ভোট-ব্যাঙ্কে নজর ছিল তৃণমূল ও বিজেপির। বামের ভোট ঘরে ফিরবে, না কি, সেই ভোটে ফের থাবা বসাবে তৃণমূল-বিজেপি, তা নিয়ে চর্চার অন্ত ছিল না। ভোট মিটেছে তিন দিন আগে। বিভিন্ন মহল্লায় শোনা যাচ্ছে, পঞ্চায়েত নির্বাচনে বাম-ভোটের ‘ঘর ওয়াপসি’ শুরু হয়েছিল। তা আরও গতি পেয়েছে লোকসভা ভোটে। এমনকি, তৃণমূল ও বিজেপির অন্দরমহলেও এই তত্ত্ব শোনা গিয়েছে। যদিও প্রকাশ্যে তা স্বীকার করছেন না দুই দলের কেউ।
গত লোকসভা ভোটে একদা লালদুর্গ পূর্ব বর্ধমানে সিপিএমের ভোট নেমে এসেছিল ১১ শতাংশে। বিধানসভা ভোটে তাতে আরও ধস নামে। সিপিএমের ভোটে মূলত থাবা বসিয়েছিল বিজেপি। সংখ্যালঘু বাম ভোটের প্রায় পুরোটাই যায় তৃণমূলে। জেলা সিপিএমের দাবি, হারানো ভোট-ব্যাঙ্কের অনেকটাই ফিরে আসছে।
পঞ্চায়েত নির্বাচনে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই শুরু করে বামেরা। জেলায় বিজেপিকে পিছনে দল দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসে তারা। পঞ্চায়েত স্তরে ৪০১০ আসনের মধ্যে সিপিএম জেতে ২৬৯টিতে। বিজেপি পায় ২০৪টি। গ্রাম স্তরে সিপিএম পায় ২৪.৫ শতাংশ ভোট। দলের এক জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত নির্বাচনের পরে সন্ত্রাস, বুথ দখল এবং গণনা ঠিকমতো হয়েছিল, এমন ২৬টি বুথে সমীক্ষা চালিয়েছিল দেখা গিয়েছিল, ওই সব বুথে আমরা পেয়েছিলাম প্রায় ৩৪ শতাংশ ভোট। পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোট বাড়ায় দলের মনোবল বাড়ে। লোকসভা নির্বাচনের শুরু থেকেই ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে কর্মীরা ময়দানে নেমেছিল।’’ এই বক্তব্য যে ফেলে দেওয়ার নয়, তা মানছে তৃণমূল ও বিজেপি। এক তৃণমূল নেতার কথায়, ‘‘আগের থেকে বামেদের প্রচারে ঝাঁঝ এ বার অনেক বেশি ছিল। বেশি এলাকায় প্রচার করা হয়।’’ বিজেপির এক নেতা বলেন, ‘‘এটা অস্বীকার করার কোনও কারণ নেই যে, অনেক এলাকায় আমাদের থেকে বামেদের সংগঠন শক্ত। তার প্রতিফলন প্রচারে দেখা গিয়েছে।’’
জেলা সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে, পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেলায় ২৩ শতাংশ বুথে এজেন্ট ছিল না। লোকসভা ভোটে বর্ধমান পূর্ব কেন্দ্রে ৬ শতাংশ বুথে এবং বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রে ১১ শতাংশ বুথে এজেন্ট দেওয়া সম্ভব হয়নি। এজেন্ট-রা ভোটের শেষ পর্যন্ত বুথে লড়াই করেছেন। নির্বাচনের দিন প্রচুর ক্যাম্পও খোলা হয়েছিল। এই তথ্যও অস্বীকার করছে না তৃণমূল-বিজেপিও। এক বিজেপি নেতা বলেন, ‘‘সংখ্যালঘু অধ্যুষিত বহু এলাকায় আমাদের এজেন্ট ছিল না। সেখানে সিপিএমের এজেন্ট ছিল।’’
সিপিএমের জেলা সম্পাদক সৈয়দ হোসেন বলেন, ‘‘কিছু জায়গায় ভয়ভীতির পরিবেশ ছিল। তবে বেশির ভাগ জায়গায় মানুষ ভোট দিয়েছেন। অনেক বেশি বুথে এজেন্ট ছিল আমাদের। এজেন্ট হন এলাকার বাসিন্দারাই। এ বার প্রচারেও টেক্কা দিয়েছি তৃণমূল ও বিজেপিকে। দেওয়াল লিখন, ফেস্টুন, বাড়ি বাড়ি প্রচারেও এগিয়ে ছিলাম। পঞ্চায়েতের থেকেও ভোট বাড়বে আমাদের। অনেকে লড়াই দ্বিমুখী বলার চেষ্টা করছেন। বাস্তবে লড়াই ত্রিমুখী।’’
জেলায় মোট ভোটারদের প্রায় ২১ শতাংশ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। সিপিএম নেতাদের দাবি, কালনা, মন্তেশ্বর, ভাতার, পূর্বস্থলী দক্ষিণের মতো বেশ কয়েকটি বিধানসভার সংখ্যালঘু এলাকায় শাসক দলের ‘গোষ্ঠী-কলহে’ ভোটারদের একাংশ বিরক্ত। তাঁরা বামেদের দিকে ঝুঁকেছেন। বর্ধমান পূর্বের সিপিএম প্রার্থী নীরব খাঁ বলছেন, ‘‘রায়নায় পঞ্চায়েত নির্বাচনে ব্যাপক সন্ত্রাস চালিয়ে বেশির ভাগে বুথে আমাদের এজেন্ট বসতে দেয়নি তৃণমূল। এবার তা হয়নি। ভোটের দিন কালনা, পূর্বস্থলী উত্তর, পূর্বস্থলী দক্ষিণের প্রায় ১০০ বুথে আমি ঘুরেছি। ভোটারদের উৎসাহ,উন্মাদনা দেখে মনে হয়েছে আমাদের ভোট বাড়বে।’’ পূর্বস্থলী উত্তরের প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক প্রদীপ সাহার দাবি, ‘‘রাজ্যের শাসক দল ডুবে রয়েছে দুর্নীতিতে। বিজেপির প্রতি মানুষ আস্থা হারাচ্ছে। তার প্রমাণ পঞ্চায়েত ভোটে মিলেছে।’’
তৃণমূলের রাজ্য মুখপাত্র দেবপ্রসাদ বাগের দাবি, ‘‘সিপিএমের সংগঠন দুর্বল। ফলে লোকসভা ভোটে সিপিএম দাগ কাটতে পারবে না।’’ বিজেপির কাটোয়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি গোপাল চট্টোপাধ্যায়য়ের দাবি, ‘‘পঞ্চায়েত ভোটে জেলা জুড়ে শাসক দল সন্ত্রাস চালিয়েছিল। এ বার মানুষ ভোট দিতে পেরেছেন। রায় বিজেপির পক্ষে গিয়েছে। মনে হয় না সিপিএম লড়াইয়ে রয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy