—প্রতীকী চিত্র।
ফল ১৬-০। ভোটপ্রাপ্তির হারও পেরিয়েছে ৫০ শতাংশ। তৃণমূলের এমন অভূতপূর্ব ফল আগে কখনও হয়নি জেলায়।
গত বিধানসভা ভোটে জেলায় ১৬টি আসনের সবক’টিতেই জিতেছিল তৃণমূল। সেই অর্থে সেবারই ষোলো কলা পূর্ণ হয়েছিল তাদের। এ বার লোকসভা ভোটে রাজ্যের শাসক দলের ভোট প্রাপ্তির হার আরও বেশি। গত বিধানসভা ভোটে জেলায় তৃণমূলের প্রাপ্ত ভোটের হার ছিল ৪৮.৪৪ শতাংশ। এ বার তা হয়েছে ৫১ শতাংশের মতো। গত লোকসভা ভোটে গলসি বিধানসভায় তৃণমূল পিছিয়ে ছিল। এ বার সেই আসনেও বিজেপিকে পিছনে ফেলেছে রাজ্যের শাসক দল। তবে গত বিধানসভা ভোটের তুলনায় এ বার জেলায় দু’টি বিধানসভায় জয়ের ব্যবধান কমেছে তৃণমূল। কয়েকটি বিধানসভায় আবার দু’তিনগুণ বেশি ভোটে জয় পেয়েছে তারা।
তৃণমূলের জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের পর্যবেক্ষণ, “এক দিকে রয়েছে রাজ্য সরকারের সরাসরি পরিষেবা পৌঁছে যাওয়া। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে কর্মীদের হার না মানা মনোভাব, মাটি কামড়ে পড়ে থাকার মানসিকতা, বিপদে-আপদে মানুষের পড়শি হয়ে থাকার জন্যই আমাদের ভোট বেড়েছে।”
তৃণমূলের একটি সূত্রের দাবি, সব বিধানসভা আসনেই জয় আসবে, ভোটের কয়েক সপ্তাহ আগেও দলের পরামর্শদাতা সংস্থা তা বলেনি। কাটোয়ায় একটি সভায় এসে বর্ধমান দক্ষিণ ও পূর্বস্থলী উত্তরের বিধায়ককে ‘সতর্ক’ করে দিয়েছিলেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পরেও জেলা তৃণমূলের পুরনোদের একটি অংশ ভোটে ‘নিষ্ক্রিয়’ ছিলেন। বর্ধমান ও কালনায় কর্মিসভায় দলের বিধায়কদের নিয়ে পৃথক বৈঠক করেন অভিষেক। সেখানে জামালপুর, রায়না, গলসি-সহ কয়েক জন বিধায়ক ও ব্লক সভাপতিকে সতর্ক করেন। কালনা ও জামালপুরে দলীয় ‘দ্বন্দ্ব’ মেটাতে জেলার শীর্ষ নেতৃত্ব আলাদা বৈঠক করেন। এ ছাড়াও, জেলায় তৃণমূলের ‘মাথাব্যথা’ ছিল গলসি। সে কারণে অভিষেক নিজে ব্লকের এক নেতাকে চারটি পঞ্চায়েতের জন্য আলাদা দায়িত্ব দেন। একই সঙ্গে গলসি ১ ব্লকের এক নেতাকে বর্ধমানের বৈঠকে ভর্ৎসনা করে জানিয়েছিলেন, খারাপ ফল হলে দল ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবস্থা নেবে। এই নির্দেশ জেলাজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।
জেলার এক প্রবীণ তৃণমূল নেতার দাবি, “প্রথমে ভাবা হয়েছিল, এর ফলে বিক্ষুব্ধরা সম্ভবত উল্টো স্রোতে হেঁটে পদাধিকারীদের বিপদে ফেলার চেষ্টা করবেন। কিন্তু অভিষেকের সঙ্গে বৈঠকের পরে ক্ষমতাসীন গ্রুপ সক্রিয় হন। তাতে যে সব বিক্ষুব্ধরা মূল স্রোতে এসেছিলেন, তাঁরা বেঁচে গেলেন। বাকি বিক্ষুব্ধরা এই ফলের পরে হারিয়ে গেলেন।” তৃণমূলের অন্দরে কান পাতলেই শোনা যায়, রায়না-সহ বেশ কয়েকটি বিধানসভায় ব্লক সভাপতি ও বিধায়কের সম্পর্ক কার্যত ‘সাপে-নেউলের’ মতো। তাঁরা পরস্পরকে বিপদে ফেলার চেষ্টা করতে পারেন বলে দলের কাছে খবরও ছিল। ফল খারাপ হলে দল ওই সব বিধায়কের বিরুদ্ধে চরম ব্যবস্থা নেবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিল। তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ মনে করেন, সে কারণেই কোনও বিধায়ক বা ব্লক সভাপতি উল্টো স্রোতে হাঁটেনি। তার জেরে বিজেপির সঙ্গে ভোটের ব্যবধান এবং গত বিধানসভা তুলনায় প্রাপ্ত ভোটের হার বেড়েছে।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় তৃণমূল সবচেয়ে বেশি ভোটে জিতেছে মঙ্গলকোটে। এখানে গত বিধানসভায় তৃণমূল জিতেছিল ২২,৩৩৭ ভোটে। এ বার ব্যবধান হয়েছে ৪৬,৫০৭। কেতুগ্রামে গত বিধানসভায় তৃণমূল জিতেছিল ১২,৬৮৩ ভোটে। এ বার তারা জিতেছে ৪৬,০১২ ভোটে। বর্ধমান উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রে গত বিধানসভার চেয়ে আড়াই গুণ বেশি ভোটে (৪১,২৪১) জিতেছে তৃণমূল। রায়না ও মন্তেশ্বরে তৃণমূল যথাক্রমে ৪৩,৫৬৫ এবং ৪৫,৭৪২ ভোটে জিতেছে। আউশগ্রামে তিন গুণ (৩৩,৫৩৫) ও জামালপুর (৩৬,৩৮৮) বিধানসভায় দ্বিগুণের বেশি ভোটে জিতেছে রাজ্যের শাসক দল। তবে এই বাজারেও গত বিধানসভার তুলনায় জয়ের ব্যবধান কমেছে বর্ধমান দক্ষিণ ও পূর্বস্থলী উত্তরে।
তৃণমূলের জেলা নেতা বাগবুল ইসলাম ও উজ্জ্বল প্রামাণিকের দাবি, “রাজ্য সরকারের নানা উন্নয়নমূলক পরিষেবা সরাসরি মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। তার সুফল মিলছে। লক্ষ্মীর ভান্ডারের পাশাপাশি স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প মানুষের উপকারে লেগেছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy