ভোটের লাইনে সিউড়িতে। ফাইল ছবি।
লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে তাদের বিপুল জয়ের নেপথ্যে যে ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ নামক সামাজিক প্রকল্পের প্রাপক মহিলারাদের বড় ভূমিকা রয়েছেন, তা নিয়ে দ্বিমত নেই তৃণমূল কংগ্রেসে। বীরভূমের দুই লোকসভা কেন্দ্রও তার ব্যতিক্রম নয়।
কিন্তু, এই বিপুল জয়ের পরেও শাসকদলকে চিন্তায় রেখেছে জেলার বেশ কিছু পুর-শহরের ফল। যেখানে এ বারেও বিজেপি এগিয়ে রয়েছে তৃণমূলের চেয়ে। তৃণমূলের একাংশেই প্রশ্ন, গ্রামাঞ্চলে যে-ভাবে লক্ষ্মী ভান্ডারের প্রাপকেরা ঢেলে ভোট দিয়েছেন, সেটা কি তবে শহর এলাকায় ঘটেনি? শহরের ‘লক্ষ্মীরা’ কি তবে তৃণমূলের প্রতি ততটা ‘সদয়’ নন? জেলা বিজেপি নেতৃত্বের ব্যাখ্যা, তাঁরা জিতলে রাজ্য সরকারের এই প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাবে বলে তৃণমূলের লাগাতার প্রচারে যে-ভাবে গ্রামাঞ্চলের মহিলাদের মনে কাজ করেছে, তা হয়তো শহরে কাজ করেনি। কারণ, শহরে শিক্ষার হার বেশি। তৃণমূলের পাল্টা বক্তব্য, শহরেও তৃণমূলের প্রাপ্ত ভোটের বড় অংশ মহিলাদের ভোট।
ঠিক কী ঘটেছে, তা নিয়ে বিশ্লেষণ চলবে। কিন্তু, তৃণমূল প্রার্থী প্রবল দাপটে জিতলেও বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রের শহরগুলিতে গ্রামের মতো ভোট পাননি। জেলা সদর সিউড়ি এবং রামপুরহাট পুরসভায় কার্যত ভরাডুবি হয়েছে। ভোটপ্রাপ্তির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২১ ওয়ার্ড বিশিষ্ট সিউড়ি পুরসভায় গোটা সাতেক ওয়ার্ড বাদ দিয়ে সব ক’টিতে এগিয়ে বিজেপি। লিডের পরিমাণ প্রায় ৫ হাজার। ছবিটা আরও খারাপ রামপুরহাট পুর-শহরে। এই পুরসভায় বিজেপি তৃণমূলের থেকে এগিয়ে ৭ হাজারেরও বেশি ভোটে। ১৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে মাত্র ৩টিতে লিড পেয়েছে তৃণমূল। সামান্য লিড পেলেও ১৬ ওয়ার্ড বিশিষ্ট দুবরাজপুর পুরসভার ১০টি ওয়ার্ডে এগিয়ে বিজেপি। নলহাটি পুরসভাতেও লিডের নিরিখে এ বার বিজেপি ১টি ওয়ার্ড বাড়িয়ে নিয়েছে। তুলনায় তৃণমূলের অনেক ভাল ফল হয়েছে সাঁইথিয়ায়।
বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রের অধীনে বোলপুর শহরের ছবিটাও আলাদা নয়। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বোলপুর পুরসভার ২০টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৫ ওয়ার্ডে বিজেপি এগিয়েছিল। এমনকি তৎকালীন তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের ওয়ার্ডেও ‘লিড’ নিতে ব্যর্থ হয় তৃণমূল। এ বারেও ১৫টি ওয়ার্ডে বিজেপির থেকে কম ভোট পেয়েছে শাসকদল।
এই ফল নিয়ে দলে কাটাছেঁড়ার পরেই লক্ষ্মী ভান্ডার প্রকল্প শহরে সে-ভাবে কাজ করেছে কি না, তা নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে। যদিও তৃণমূলের মহিলা সেলের জেলা সভাপতি সাহারা মণ্ডলের দাবি, লক্ষ্মীর ভান্ডার তো আছেই, সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পে সুবিধার হিসাব কষলে দেখা যাবে, একটি পরিবারে চার-পাঁচ হাজার টাকাও ঢুকছে। সেটা নিয়ে প্রচার চালানো হয়েছে। সাহারা বলেন, ‘‘জনবিরোধী বিজেপি এলে প্রকল্পগুলি পাছে বন্ধ হয়ে যায়, তা আশঙ্কা করেই মহিলারা শাসকদলকে ভোট দিয়েছেন। খোঁজ নিয়ে দেখলেই বোঝা যাবে, শহরেও তৃণমূল যে ভোট পেয়েছে, তার বড় অংশই মহিলাদের।’’
বিজেপির বীরভূম সাংগঠনিক জেলার মহিলা সেলের সভানেত্রী রশ্মি দে বলেন, ‘‘এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, মহিলাদের অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্য দিতে লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্প গ্রামীণ এলাকায় ভাল সাড়া ফেলেছে। কিন্তু তৃণমূল লাগাতার মিথ্যা প্রচারে তাঁদের এটা বিশ্বাস করাতে পেরেছে, বিজেপি ক্ষমতায় এলে প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাবে। আমরা পাল্টা অন্নপূর্ণা ভান্ডারের কথা বললেও সেই ভুল ভাঙাতে পারিনি।’’ বিজেপি নেত্রীর দাবি, শহরের মহিলাদের সেই ‘মিথ্যা’ বিশ্বাস করানো যায়নি। কারণ রাজ্যে ক্ষমতাসীন একটা সরকারের চালু করা প্রকল্প যে কেন্দ্র বন্ধ করতে পারে না, তা তাঁরা বুঝেছিলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy