মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর ‘গড়’ কাঁথিতে মুখ্যমন্ত্রীর নির্বাচনী পদযাত্রা। কিন্তু আগাগোড়া অধিকারীদের বাড়ি ‘শান্তিকুঞ্জ’ এড়িয়ে গেলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার যেখানে তিনি পদযাত্রা করলেন সেটা শান্তিকুঞ্জের থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে।
অন্যবার তৃণমূলের সভা এবং মিছিল হলে শান্তিকুঞ্জের চতুর্দিকে মাইক বাঁধা হত। ২০২২ সালে তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভার সময় যা নিয়ে তোলপাড় হয়েছিল। এ বার তেমন কিছুও হয়নি। বর্ষীয়ান সাংসদ শিশির অধিকারী এ দিন বলেন, ‘‘হাই কোর্টের নির্দেশের কারণে ওরা এ পথ মাড়ায়নি। অতীতে যে ভাবে মাইক বাজিয়ে বাড়ির সামনে মিছিল, উদ্দাম নৃত্য করেছে, তাতে এবার হাই কোর্টে সমালোচনার মুখে পড়তে হতে পারে, ওই আশঙ্কায় অন্য রাস্তায় গিয়েছে।’’
বৃহস্পতিবার বিকেলে কাঁথির তৃণমূল প্রার্থী উত্তম বারিকের সমর্থনে পদযাত্রা করেন মমতা। হলদিয়ার সভা সেরে হেলিকপ্টারে নামেন কাঁথি শহরের অরবিন্দ স্টেডিয়ামে। ততক্ষণে রাস্তার দু’দিকে কাতারে কাতারে মানুষ দাঁড়িয়ে রয়েছেন। যেখান থেকে শান্তিকুঞ্জ প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে।
যে রাস্তা দিয়ে মমতা হেঁটে প্রচার করেন তার দু’দিক তৃণমূলের পতাকা এবং মুখ্যমন্ত্রীর বড় বড় কাটআউট দিয়ে সাজানো হয়। মাইকে বেজেছে 'জনগণের গর্জন, বাংলা বিরোধীদের বিসর্জন।’ মুখ্যমন্ত্রীর এক দিকে প্রার্থী উত্তম আর অন্য দিকে রামনগরের বিধায়ক তথা মন্ত্রী অখিল গিরি ছিলেন। পিছনেই ছিলেন তৃণমূলের নির্বাচনী পর্যবেক্ষক রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় এবং চণ্ডীপুরের তারকা বিধায়ক সোহম চক্রবর্তী। কয়েক পা সামনে তখন ভিড় নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন কাঁথি পুরসভার চেয়ারম্যান সুপ্রকাশ গিরি। তাঁর পাশে ছিলেন জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ তরুণ জানা।
মমতাকে দেখার জন্য এসেছিলেন তৃণমূল সমর্থিত আইনজীবীরা। তাঁদের খোঁজখবর নেন মুখ্যমন্ত্রী। কখনও হাত নেড়ে, নমস্কার করে সাধারণ মানুষকে কৃতজ্ঞতা জানান। ব্যারিকেডের ধারে গিয়ে হাত মেলান সাধারণ মানুষের সঙ্গে। কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙে এক যুবক এগিয়ে এসে তাঁর পা ছুঁয়ে প্রণাম করেন। বড় ডাকঘর ছাড়িয়ে কাঁথি থানা, চৌরঙ্গী মোড় হয়ে শিশির অধিকারীর সাংসদ কার্যালয়ের দিকে এগিয়েছে মমতার মিছিল। রাস্তার দু’ দিকে ভিড় বেড়েছে জনতার। মমতা মাঝে রাস্তার ধারে দোকানে ঢুকে দোকানদারদেরকৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
এরই মধ্যে নিজের হাতে আঁকা একটি ছবি মমতার হাতে তুলে দেন কাঁথি শহরের এক কাপড় বিক্রেতা কমলেশ নন্দ। অনেক জায়গায় মহিলারা লক্ষ্মীর ভান্ডার এবং রাজ্য সরকারের নানা প্রকল্পের প্ল্যাকার্ড হাতে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে ছিলেন। কেউ কেউ আবার মমতার সঙ্গে নিজস্বী তোলেন। পরে মেচেদা বাইপাস হয়ে চাঁদবেড়িয়াতে পদযাত্রা শেষ হতেই মমতা গাড়ি চেপে চলে যান কাঁথি মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার ময়দানে। সেখানে একটি হেলিপ্যাড বানানো হয়েছিল। মমতাকে বিদায় জানাতে মোটরবাইকে চেপে হেলিপ্যাড পর্যন্ত যান মন্ত্রী অখিল। আর পায়ে হেঁটে গিয়েছিলেন সুপ্রকাশ।
কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী উত্তম বারিক বলেন, ‘‘অতীতে কোনও মুখ্যমন্ত্রী কাঁথিতে পদযাত্রা করেননি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। তাঁর পদযাত্রাকে ঐতিহাসিক করে তুলেছেন কাঁথির আমজনতা।" যদিও মুখ্যমন্ত্রীর পদযাত্রাকে ব্যর্থ বলে কটাক্ষ করে বিজেপির জেলা (কাঁথি) সাধারণ সম্পাদক চন্দ্রশেখর মণ্ডল বলছেন, ‘‘সামগ্রিক ভাবে মুখ্যমন্ত্রীর কর্মসূচিতে যে ভিড় হওয়ার কথা তার ছিটে ফোঁটা ছিল না। দূর-দূরান্ত থেকে মহিলাদের নিয়ে আসা হয়েছিল। তবে শিক্ষিত যুবকদের সে রকম দেখা যায়নি।"
মমতার পদযাত্রায় ভিড়ের আশঙ্কা করে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শহরে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়। শহরে মূল রাস্তায় ঢোকার পথ বেলা ১২টা থেকে আটকে দেয় পুলিশ। তবে তার আগে কাঁথি শহরের ক্যানেল পাড় থেকে সুপারমার্কেট পর্যন্ত পায়ে হেঁটে ভোট প্রচার করেন বিজেপি প্রার্থী সৌমেন্দু অধিকারী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy