পাঁশকুড়ায় ভোট প্রচারে মুখ্যমন্ত্রী। নিজস্ব চিত্র।
একাধিকবার কর্মসূচি বাতিল হওয়ার পরে দুর্যোগের আবহাওয়ায় সোমবার পাঁশকুড়ায় ভোট প্রচারে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সভায় তিনি তৃণমূলের তমলুকের বিধায়ক সৌমেন মহাপাত্রের উপরে রেগে থাকার কথা বলার পাশাপাশি, দলেরই নেতা খুনের জেলবন্দি অভিযুক্ত আনিসুর রহমানের হয়ে সওয়াল করলেন আবার।
পাঁশকুড়া পশ্চিম বিধানসভাটি ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত। ঘাটালের তৃণমূলের লোকসভা প্রার্থী দীপক অধিকারীর (দেব) সমর্থনে মমতার আগেই পাঁশকুড়া এলাকায় আশার জল্পনা শোনা গিয়েছিল। তবে সেই জল্পনা সত্যি হয়নি তখন। ষষ্ঠ দফার ভোট গ্রহণের একেবারে দোরগড়ায় এ দিন পাঁশকুড়ার আটবেড়িয়ায় মমতা সভা করতে আসেন। রবিবার দুপুর ২টো ৬ মিনিটে তাঁর হেলিকপ্টার অবতরণ করে। তাঁর হেলিকপ্টার নামার আগে অল্প ঝড়ে সভা মঞ্চের সামিয়ানা ছিঁড়ে গিয়েছিল। আর মমতা যখন সভামঞ্চে ওঠেন, তখন কালো মেঘে চারপাশ ঢেকে যায়। ঝড়-বৃষ্টির আশঙ্কায় মুখ্যমন্ত্রী তাঁর বক্তৃতা সংক্ষিপ্ত করেন। তবে ওই সংক্ষিপ বক্তৃতার মাঝেই মমতা বলতে শোনা যায়, তিনি সৌমেনের উপরে রেগে ছিলেন। তবে এখন তাঁর রাগ পড়ছে। মমতার কথায়, ‘‘আমি রেগে আছি। বাট ক্ষমা করে দিলাম সৌমেন কুমার মহাপাত্র...।’’
রাজনৈতিক মহল মনে করাচ্ছে, গত ১৬ মে হলদিয়ার প্রচার সভায় সৌমেন মহাপাত্র উপস্থিত থাকলেও, মমতা মুখে তাঁর নাম মুখে আনেননি। দলের জেলা (তমলুক) নির্বাচনী কমিটির চেয়ারম্যান সৌমেনের উপরে কেন মমতা রেগে রয়েছেন, তা নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে। এর সঠিক কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা থাকলেও, তৃণমূল সূত্রের খবর, গত ১৭ মে তমলুকে অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের পদযাত্রার দিনই হলদিয়ায় মমতা সভা করতে চেয়েছিলেন। একই দিনে একই লোকসভা এলাকায় দু'টি বড় সভা আয়োজন করতে সমস্যা হতে পারে বলে তমলুক লোকসভা নির্বাচনী কমিটি থেকে জানানো হয় মুখ্যমন্ত্রীকে। প্রশ্ন, এতেই কি সৌমেনের উপরে রেগে মমতা? যদিও সৌমেন বলছেন, ‘‘এটা অভ্যন্তরীণ বিষয়। আমি হয়তো নেত্রীর কাছে কোনও ভুল করেছি। তাই উনি এটা বলেছেন। তবে দিদি কারও উপর সব সময় রাগ করে থাকেন না। তাই উনি ক্ষমা করে দেওয়ার কথাও বললেন।’’
এ দিন বক্তব্যের শুরুতেই মমতা ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থীকে কাছে ডেকে নেন। দেবকে ১ নম্বর বোতাম টিপে ভোট দেওয়ার আবেদন জানান। এর পরেই তাঁর মুখে উঠে আসে তৃণমূল নেতা কুরবান শা খুনের মূল অভিযুক্ত আনিসুর রহমানের প্রসঙ্গ। মমতা বলেন, ‘‘পাঁশকুড়ায় আমি সব সময় আসি। কিন্তু কয়েক বছর আমার আসা হয়নি। কারণ আমার একটি ফেভারিট ছেলেকে ওই গদ্দারটা জেলে রেখে দিয়েছে। আগামী দিনে ওকে বের করবই।’’ নাম না করে মমতা জেলবন্দি আনিসুর রহমানকে ‘ফেভারিট’ ছেলে বলায় দর্শক আসনে বসে থাকা আনিসুর অনুগামীরা উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন।
আনিসুর প্রেসিডেন্সি জেলে রয়েছে। সেখানে বসেই সে ফোনে জেলার প্রভাবশালী তৃণমূল নেতাদের মাধ্যমে সাক্ষীদের ভয় দেখাচ্ছেন বলে অভিযোগ। এমন একজনের পক্ষে মুখ্যমন্ত্রী বারবার সওয়াল করায় কুরবানের দাদা আফজল বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার তো অভিযুক্তদের পক্ষ নিয়ে কাজ করেছে। মুখ্যমন্ত্রী জেলায় এলেই আনিসুরের হয়ে সাফাই গাইছেন। আমার ভাইও তো তৃণমূল করত। মুখ্যমন্ত্রী একবারও তো আমার ভাইয়ের নাম মুখে আনেননি! রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে উনি একজন খুনে অভিযুক্তকে কী ভাবে জেল থেকে বের করে আনার কথা বলতে পারেন!’’ উল্লেখ্য, এর আগে হলদিয়ার জনসভাতেও মমতা আনিসুরের পক্ষে সওয়াল করেছিলেন। পাঁশকুড়ার সভা শেষ করে মমতা সড়ক পথে মেদিনীপুরের উদ্দেশ্যে রওনা দেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy