দুর্গাপুরে ডিটিপিএস এবং ডিএসপি সম্প্রসারণের কাজ। নিজস্ব চিত্র।
গত দু’দশকে ক্রমশ কমেছে কর্মসংস্থানের সুযোগ। কাজ হারিয়েছেন বহু ঠিকা শ্রমিক। প্রতি ভোটের সময়ে যেমন শোনা যায় নতুন উদ্যোগের কথা, এ বারও নানা পক্ষ তেমন আশার কথাই শুনিয়ে গিয়েছে দুর্গাপুর সম্পর্কে।
বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষ প্রচারে গোড়ার দিকে সাফ জানিয়ে দেন, লোকসানে চলা কারখানা চালানো সরকারের কাজ নয়। তবে বন্ধ কারখানার
জায়গা অন্য কোনও ভাবে কাজে লাগানো যায় কি না, দীর্ঘমেয়াদি কোনও প্রকল্প কেন্দ্রের সঙ্গে কথা বলে করার চেষ্টা করবেন বলে আশ্বাস দেন। পরিস্থিতি পাল্টে যায় ২৯ এপ্রিল, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়াল দুর্গাপুরে আসার পরে। তিনি দাবি করেন, বিদেশ থেকে সার আমদানিতে বিপুল শুল্ক দিতে হয়। তা কমাতে দুর্গাপুরের বন্ধ এইচএফসিএল কারখানা চালুর কথা ভাবা যেতে পারে। তাঁর কথায়, ‘‘এখানে পুরনো সার কারখানা যেটা বন্ধ হয়ে গিয়েছে, সেটা চালু করা যেতে পারে। কেন বিদেশ থেকে সার আমদানি করব?’’ তিনি সার কারখানা পরিদর্শনও করেন, কাগজপত্র নেন। এর পরে দিলীপও বলতে শুরু করেন, ‘‘দুর্গাপুরের বন্ধ সার কারখানা খুলবে। যেখানে সম্ভাবনা আছে, সেখানে কেন্দ্র যথেষ্ট সজাগ।’’ ৬ মে দুর্গাপুরের জনসভা থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ আশ্বাস দেন, বিজেপি জিতলে সার কারখানা খোলা হবে। যদিও শহরবাসীর অনেকের প্রশ্ন, বিজেপি কেন্দ্রে ক্ষমতায় আছে ১০ বছর ধরে। এত দিন সার কারখানার কথা মনে পড়েনি কেন? ঠিক ভোটের আগেই মুহূর্তে
মনে পড়ল?
সেই সূত্র ধরেই এই কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী কীর্তি আজাদ দাবি করেছেন, ‘‘বন্ধ কারখানা খোলা তো দূর, কেন্দ্রের বিজেপি সরকার চালু রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাই বিক্রি করে দিচ্ছে। দেশে অ-বিজেপি সরকার ক্ষমতায় এলে তবে পরিস্থিতি বদলাবে।’’ প্রচারে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ডিপিএল নিয়ে আশ্বাস দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘ডিপিএল এক সময়ে বন্ধ করে দেওয়ার কথা হয়েছিল। আমরা ঠিক করলাম, বন্ধ করা যাবে না। ৮০০ কোটি টাকা খরচে ডিপিএল ঢেলে সাজা হচ্ছে। ৪০০ কোটি টাকা ইতিমধ্যে খরচ করা হয়েছে।’’
বর্ধমান-দুর্গাপুরের বাম প্রার্থী সুকৃতি ঘোষাল বলেন, ‘‘প্রচারে বেরিয়ে দেখেছি, অনেকেই দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের শোচনীয় পরিস্থিতির কথা বার বার বলেছেন। শিল্প না এলে মানুষের জীবন ও জীবিকা সুরক্ষিত থাকবে কী করে? দুর্গাপুরের হৃতগৌরব ফিরিয়ে আনতে জয়ী হলে সংসদে শিল্পের দুরবস্থা নিয়ে সরব হব।’’
ক্ষুদ্র শিল্প উন্নয়ন নিগমের প্রাক্তন চেয়ারম্যান বিনয়েন্দ্র কিশোর চক্রবর্তী জানান, বাম আমলে লৌহ-ইস্পাত অনুসারী শিল্প এবং ধাতু শিল্পে প্রায় ৭০ হাজার কর্মসংস্থান হয়েছিল। কিন্তু গত কয়েক বছরে বহু কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় হাজার হাজার শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন। নতুন বিনিয়োগ না আসা এবং বন্ধ কারখানা চালুর উদ্যোগ না হওয়ায় ইস্পাত ও অনুসারী শিল্পে ভাটা পড়েছে। তাঁর ক্ষোভ, ‘‘বর্তমানে ক্ষমতাসীন কেন্দ্র ও রাজ্য, দুই সরকার তো চালু কারখানাই বন্ধ করে দিচ্ছে!’’ দুর্গাপুর স্মল ইন্ডাস্ট্রিজ় অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন সভাপতি কৃপাল সিংহের প্রশ্ন, ‘‘ভারী শিল্প না থাকলে ক্ষুদ্র ও অনুসারী শিল্প বাঁচবে কী ভাবে? তা ছাড়া উৎপাদিত পণ্য ভিন্ রাজ্যে রফতানির সুযোগও কমেছে। কারণ সেই সব রাজ্যের সরকারও অনুসারী ও ক্ষুদ্র শিল্প স্থাপনের জন্য শিল্পপতিদের সুবিধা দিচ্ছে। সব মিলিয়ে দুর্দশা চরমে।’’
তবে এই পরিস্থিতিতে আশার আলো দুই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্ট (ডিএসপি) এবং দুর্গাপুর থার্মাল পাওয়ার স্টেশন (ডিটিপিএস)। দুই পর্যায়ে ডিএসপির নতুন ব্লাস্ট ফার্নেস গড়া-সহ বেশ কিছু বিভাগের আধুনিকীকরণ ও সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। খরচ হবে প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা। ডিটিপিএসে নতুন ৮০০ মেগাওয়াটের ইউনিটের জন্য খরচ হবে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা। যদিও উচ্ছেদের নোটিস পাওয়া দখলদারদের আন্দোলনে দু’টি প্রকল্পের কাজই ঢিমেতালে চলছে
বলে অভিযোগ।
ভোট মরসুমে নানাবিধ আশ্বাস শুনে শহরবাসী তাই বলছেন, ‘‘না আঁচালে বিশ্বাস নেই!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy