নির্বাচন কমিশন। —ফাইল চিত্র।
নির্বাচনের মুখে বোমা বিস্ফোরণে পান্ডুয়ায় এক বালকের মৃত্যু এবং দু’জনের আহত হওয়ার ঘটনায় শিউরে উঠছেন অনেকেই।
সোমবার সকালে তিন্নার ওই ঘটনার কথা বর্ণনা করতে গিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠছিলেন স্থানীয় এক মহিলা। ছেলেগুলোর ‘অপরাধ’, বাড়ির কাছেই জলাশয়ের ধারে খেলছিল!
নাগরিক সমাজের একাংশ এই ঘটনাকে ‘নির্বাচনের বলি’ হিসেবেই দাবি করছে। তারা দুষছে নির্বাচন কমিশন এবং প্রশাসনকে। অথচ, রক্তপাতহীন, নির্বিঘ্ন, শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য নানা ব্যবস্থার কথা আগেই জানিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণার আগেই কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠানো হয় এ রাজ্যে। কিন্তু, প্রাণহানি ঠেকানো গেল কই!
প্রশাসন অবশ্য এই ঘটনায় নির্বাচনের যোগ দেখছে না। সূত্রের দাবি, বিস্ফোরণ-কাণ্ড নিয়ে মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের (সিইও) কার্যালয়ে রিপোর্ট দিয়েছেন রাজ্য পুলিশের নোডাল অফিসার। আর একটি রিপোর্ট দিয়েছেন হুগলির গ্রামীণের পুলিশ সুপার এবং জেলা নির্বাচনী আধিকারিক। তাতে বলা হয়েছে, প্রাথমিক তদন্তে ঘটনাটির সঙ্গে নির্বাচন বা রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। পারিবারিক শত্রুতার জেরে ঘটনা।
হুগলিতে ভোটগ্রহণ আগামী ২০ মে। তার আগে ‘ভোট সন্ত্রাসের’ প্রশ্ন আরও এক বার মাথাচাড়া দিয়েছে। অনেকেই মনে করেন, মারণ-বোমার জোগানদার বেআইনি বাজি কারখানা। এই সমস্ত কারখানা বন্ধের দাবি এক দশকেরও বেশি সময় ধরে প্রশাসনের কাছে জানিয়ে আসছে পরিবেশ অ্যাকাডেমি, আইন সহায়তা কেন্দ্র-সহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। ভোট এলেই নিয়ম করে তারা নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দেয়। এ বারেও দিয়েছে।
গত বছর ৫ জুন পঞ্চায়েত ভোটের মুখে উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁয় বোমা ফেটে মৃত্যু হয় এক বালকের। কয়েক বছর আগে উত্তর ২৪ পরগনাতেই একটি মেয়ে ভোরে ফুল তুলতে গিয়ে গোলাকৃতি একটি বস্তু দেখে খেলাচ্ছলে হাতে নিতেই বিস্ফোরণ ঘটে। বোমায় তার একটি হাত উড়ে যায়। সেই হাত ফেরত চেয়ে তার কাতর আর্তি অনেকেই ভোলেননি। দু’টি দলের সংঘর্ষের পরে ফেলে যাওয়া বোমা নিয়ে খেলতে গিয়ে বিস্ফোরণে বর্ধমান শহরে একটি ছেলের মৃত্যু হয়। একটি শিশু আহত হয়।
আগ্নেয়াস্ত্র এবং বোমা তৈরির সরঞ্জাম-সহ রবিবার রাতে দুই যুবককে ধরেছে দক্ষিণ শহরতলির নরেন্দ্রপুর থানার পুলিশ। পুলিশের দাবি, ধৃতদের কাছ থেকে ১টি ওয়ান শটার, ২টি সেভেন এমএম পিস্তল, ৩০ রাউন্ড কার্তুজ, ৫ কেজি বারুদ, ২৫টি সুতলির বান্ডিল উদ্ধার হয়েছে।
নির্বাচনের সময় বোমাবাজি এ রাজ্যের চেনা ছবি। সম্প্রতি ঝাড়গ্রামের বিজেপি প্রার্থী প্রণত টুডুর গাড়ির সামনে বোমা ফাটানোর অভিযোগ ওঠে। পরিবেশ অ্যাকাডেমির সভাপতি, পরিবেশকর্মী বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘প্রায় সর্বত্রই হতাহতেরা প্রান্তিক শ্রেণির মানুষ।’’ অনেকেরই প্রশ্ন, রাজনৈতিক লড়াইতে সাধারণ মানুষ, নিরীহ শিশুকে বলি হতে হবে কেন? বেআইনি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণে মৃত্যু-মিছিলও কম দীর্ঘ নয়।
বিশ্বজিতের কথায়, ‘‘শিশুমৃত্যু দেখতে দেখতে প্রশাসন এবং কমিশন অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে। এ বারেও বোমা উদ্ধার নিয়ে চিঠি দিয়েছি। কলকাতায় মুখ্য নির্বাচন আধিকারিকের দফতরে গিয়ে কথা বলেছি। কিন্তু কোনও লাভই তো হল না! এই মৃত্যুর জন্য সম্পূর্ণ দায়ী রাজ্য প্রশাসন এবং নির্বাচন কমিশন।’’
নাগরিক সংগঠন অল বেঙ্গল সিটিজেন্স ফোরামের সভাপতি শৈলেন পর্বতেরও বক্তব্য, ‘‘বালকটি নির্বাচনী সন্ত্রাসের বলি হয়েছে বলেই মনে করছি। ছেলেগুলির পরিবারের যা ক্ষতি হল, কিছুতেই পূরণ হবে না। তাও মোটা অঙ্কের ক্ষতিপূরণ দেওয়া উচিত। কমিশন বোমা উদ্ধারে তৎপর হোক, যাতে এমন ভাবে কাউকে মরতে না হয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy