Advertisement
Back to
Justice Abhijit Gangopadhyay vs Kunal Ghosh

রাগী-অনুরাগী অতীত, ‘সন্ধিক্ষণে’ পরস্পরকে নিয়ে মুখ খুললেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়, কুণাল ঘোষ

ঘটনাচক্রে বিচারপতি তাঁর ইস্তফার ঘোষণা যখন করছেন, তার ২৪ ঘণ্টা আগে রাজ্যের শাসকদলের মুখপাত্র পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন কুণাল। সেই ইস্তফা গৃহীতও হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইনের বছরের বেস্ট অনুষ্ঠানে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে কুশল বিনিময় কুণাল ঘোষের।

আনন্দবাজার অনলাইনের বছরের বেস্ট অনুষ্ঠানে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে কুশল বিনিময় কুণাল ঘোষের। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০২৪ ১৮:৩০
Share: Save:

মাসখানেক আগেও দু’জনের যা সম্পর্ক ছিল— তাকে ‘বুনো ওল আর বাঘা তেঁতুলে’র সঙ্গে তুলনা করত পরিচিতি মহল! অর্থাৎ ঠিক শত্রুতা নয়, তবে লাগসই প্রতিদ্বন্দ্বিতা। এক জনের ‘ঝাঁঝালো’ মন্তব্যের পাল্টা ‘দাওয়াই’ দিতেন অন্য জন। এক জন এজলাসে বসে তোপ দাগলে অন্য জনও মশলা-বারুদ নিয়ে হাজির হতেন সাংবাদিক বৈঠকে। কিন্তু মুখোমুখি দেখা হলে রাগ উধাও। তখন ঠোঁটে হাসি, হাতে হাত, কখনও-সখনও প্রচ্ছন্ন প্রশংসাও। বিগত মাস খানেকের সময়টুকু বাদ দিলে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এবং কুণাল ঘোষ ‘জুটি’র রসায়ন নিয়মিত অবসরে এমনই নরম-গরম বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। দেখা গেল রবিবারের রাজনৈতিক ডামাডোলের বাজারেও তাঁদের সেই রসায়ন অটুট।

রবিবারই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় রাজনীতিতে আসার ইচ্ছা প্রকাশ করে জানান, তিনি কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি পদ থেকে ইস্তফা দিতে চলেছেন। এ কথা জানার পরই কুণাল বললেন, ‘‘ভেবে ভাল লাগছে যে, আমি যে কথা ওঁকে বলেছিলাম, উনি সেই মর্মেই এগোচ্ছেন। ফলে এটাও প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকছে ওঁর যে রায় বা পর্যবেক্ষণ ছিল, তা রাজনৈতিক।’’

বিচারপতিও এর পাল্টা জবাব দিয়েছেন। একটি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে ইস্তফার পরিকল্পনা জানানোর পর যখন নিজের বাড়ির নীচে সাংবাদিক বৈঠক করছেন বিচারপতি, তখন কুণালের মন্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘কুণাল ঘোষ একজন অত্যন্ত ভাল মানুষ! আমার চেম্বারে বসে ওঁর সঙ্গে আমার দীর্ঘ কথাবার্তা হয়েছে। রাজনীতির বিষয়ে নয়, অন্য বিষয়ে। আমার মনে হয়েছে, উনি অত্যন্ত ভাল মানুষ।’’

যদিও এই মন্তব্যের আগে বিচারপতিকে বলতে শোনা গিয়েছিল যে, ‘‘আমার সিদ্ধান্তের জন্য বিশেষ করে শাসকদলের কিছু নেতাকে অভিনন্দন জানাতে চাই। তাঁরা মাঠে নামার আহ্বান জানিয়েছিলেন বলেই আমি সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে এই সিদ্ধান্ত নিলাম।’’ উল্লেখ্য, বিচারপতিকে এই চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন তৎকালীন শাসকদলের মুখপাত্র কুণালই। রবিবার বিচারপতি যেমন কুণালকে ভাল মানুষ বলেছেন, তেমনই তাঁকে চ্যালেঞ্জও ছুড়েছেন।

ঘটনাচক্রে বিচারপতি তাঁর ইস্তফার ঘোষণা যখন করছেন, তার ৪৮ ঘণ্টা আগে রাজ্যের শাসকদলের মুখপাত্র পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন কুণালও। সেই ইস্তফা গৃহীতও হয়েছে। নানা কারণে দলের মধ্যে কোণঠাসা কুণালকে তাঁর বিষয়ে প্রশ্ন করার জন্য ফোনে না পাওয়া গেলেও বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের বিষয়ে এক্স হ্যান্ডলে (সাবেক টুইটার) পোস্ট করতে একটুও দেরি করেননি কুণাল। পরে আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে ফোন করা হলে প্রতিক্রিয়াও জানিয়েছেন।

প্রসঙ্গত আনন্দবাজার অনলাইনের বছরের বেস্ট অনুষ্ঠানের সন্ধ্যাতেই প্রথম মুখোমুখি সাক্ষাৎ বিচারপতি এবং কুণালের। সেখানেই একে অন্যের হাত ধরে সৌজন্য বিনিময় করেছিলেন। অথচ তার কয়েক দিন আগেও বিচারপতির বিরুদ্ধে সাংবাদিক বৈঠক করে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন কুণাল। কিন্তু মুখোমুখি সাক্ষাতে সৌজন্যের অভাব হয়নি। বিচারপতি হাসতে হাসতেই কুণালকে বলেছিলেন, ‘‘আপনাকে আমার বেশ লাগে। আপনি আমার বিরুদ্ধে আরও গালাগালি করুন। আমি কিছু মনে করছি না।’’ পাল্টা কুণাল বলেছিলেন, ‘‘ও ভাবে বলবেন না, আমিও আপনাকে পছন্দই করি।’’ কিন্তু ওই পর্যন্তই। পরের দিন থেকে আবার যে যার ভূমিকায় ফিরেছেন। বিচারপতি শাসকের নিন্দা করে দুর্নীতি মামলায় একের পর এক মন্তব্য করেছেন। পাল্টা দলীয় মুখপাত্র হিসাবে কুণাল তাঁকে আক্রমণ করেছেন।

কিছুদিন আগেই বিচারপতির উদ্দেশে কুণাল বলেছিলেন, ‘‘অবসরের বেশি দিন বাকি নেই। তার আগেই আপনি স্বেচ্ছাবসর নিয়ে আসুন না রাজনৈতিক ময়দানে। তার পর দেখা যাবে।’’ আবার সময় বিশেষে কুণালকে ‘প্রণাম’ জানিয়ে তাঁকে ‘ভবিষ্যৎদ্রষ্টা’ বলে মন্তব্যও করতে শোনা গিয়েছে বিচারপতিকেও। গত বছরই শাসকদল তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মামলার জেরে যখন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের হাত থেকে নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত কিছু মামলা সরিয়ে নেওয়া হল, তখন বিচারপতিকে প্রকাশ্যে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘‘কুণাল ঘোষকে আমার প্রণাম জানাবেন। তিনি যা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, তা পুরোপুরি মিলে গিয়েছে। তিনি এত বড় ভবিষ্যৎদ্রষ্টা তা আমার জানা ছিল না।’’

তবে গত এক মাস দু’পক্ষই চুপ ছিল। ৩০ জানুয়ারি বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের হাত থেকে সরিয়ে নেওয়া হয় কার্যত শিক্ষা সংক্রান্ত সমস্ত মামলাই। বদলে তাঁকে দেওয়া হয় শ্রম এবং শিল্প সংক্রান্ত মামলাগুলির দায়িত্ব। অন্য দিকে কুণালও রাজনৈতিক নানা বিষয়ে ব্যস্ত ছিলেন। গত কয়েক দিনে দলের মধ্যেই প্রবীণ নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। যার জেরে কুণাল দলের রাজ্য সম্পাদক এবং দলীয় মুখপাত্রের পদ থেকে ইস্তফাও দেন। এর মধ্যে মুখপাত্র পদে তাঁর ইস্তফা গৃহীত হয়েছে। তৃণমূল সূত্রে খবর, তাঁকে শোকজ়ের চিঠিও ধরানো হতে পারে দলের তরফে। এই পরিস্থিতি দলের একাংশের মতে যখন কুণাল দলের মধ্যে সামান্য কোণঠাসা এবং যোগাযোগ-রহিত তখনই তাঁর প্রতিক্রিয়া জানা গেল বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়কে নিয়ে।

রবিবার প্রথমে কুণাল এ বিষয়ে এক্স হ্যান্ডলে (সাবেক টুইটার) একটি পোস্ট করেন, লেখেন, ‘‘রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকবে। কিন্তু অন্য গুরুত্বপূর্ণ পেশা থেকে যদি কেউ রাজনীতিতে আসেন, তাহলে সংসদীয় গণতন্ত্রের রাজনীতিতে তা স্বাস্থ্যকর বা ইতিবাচক। একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে স্বাগত জানাচ্ছি। নতুন ইনিংসের শুভেচ্ছা।’’ তবে একই সঙ্গে কুণাল এ-ও লেখেন যে, ‘‘তবে বিশেষ করে এই পেশার কেউ রাজনীতিতে এলে, তাঁর আগের পেশাগত সিদ্ধান্তগুলি নিয়ে নিরপেক্ষতাজনিত প্রশ্ন উঠতেই পারে, সেটাও স্বাভাবিক।’’ পরে আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে কুণালকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আনন্দবাজার অনলাইনের অনুষ্ঠানেই আমাদের দু’জনের প্রথম মুখোমুখি আলাপ। তার আগে আমরা কেউ কাউকে মুখোমুখি চিনতাম না। এটা ভেবে ভাল লাগছে, ওঁকে আমি যে কথা বলেছিলাম, উনি সেই মর্মেই এগোচ্ছেন। ফলে এটাও প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকছে, ওঁর রায় বা পর্যবেক্ষণগুলো ছিল রাজনৈতিক।’’

যদিও কুণাল ঘনিষ্ঠদের বক্তব্য, ‘‘অভিজিৎ স্পষ্ট করেননি উনি কোন দলে যাবেন। অনেকেরই ধারণা, উনি বিজেপির দিকেই এগোচ্ছেন। উনি যে দলেই যান, সেখানকার নেতাদের দুর্নীতি নিয়ে কাঠামোর কারণে যদি চুপ করে থাকেন তা হলে তা ঠিক হবে না।’’ আসলে কুণাল-ঘনিষ্ঠরা বোঝাতে চাইছেন তা হল, বিচারপতি বরাবর দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব হওয়ার কথা বলেছেন। অন্য দিকে, বিজেপি নেতা শুভেন্দুর নাম রয়েছে নারদ মামলার সিবিআই তদন্তে। নারদ স্টিং অপারেশনে শুভেন্দুর ছবিও দেখা গিয়েছিল। এখন যদি বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বিজেপিতে যান এবং লোকসভা ভোটে প্রার্থী হন তবে শুভেন্দুকে লক্ষ্য করেই নতুন আক্রমণের প্রেক্ষাপট রচনা করবে তৃণমূল।

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2024 Kunal Ghosh Justice Abhijit Gangopadhyay
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy