তিনি কেশপুরের ভূমিপুত্র। ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে কেশপুর তাঁকে ১ লক্ষ ১৭ হাজার ভোটের ‘লিড’ দিয়েছিল। ২০১৯-এ ‘লিড’ হয় ৯২ হাজারের। এ বার ‘লিড’ কত হবে? ঘাটালের তৃণমূল প্রার্থী দেব বলছেন, ‘‘আমি এখানকার ভূমিপুত্র। আশাবাদী, ভাল লিডই পাব।’’ সঙ্গে তাঁর উপলব্ধি, ‘‘ঘাটাল জিততে গেলে কেশপুর চাই-ই। কেশপুরটা বুঝতে পারলাম যে, কঠিন!’’
শুক্রবার কেশপুরে প্রচারে এসেছিলেন দেব। শুরুতে রোড শো করেছেন। পরে কর্মী বৈঠক। আর সেই প্রচারেই তিনি টের পেয়েছেন এলাকায় দলের কোন্দল। কেশপুরের পাশাপাশি প্রচারে বেরিয়ে শুক্রবার ঘাটালের উত্তর অংশেও দলের সমন্বয়ের অভাব টের পান দেব। দাসপুরেওছিল একই ছবি। তাই শুক্রবার রাতেই ঘাটালে ফিরে তড়িঘড়ি বৈঠক ডাকেন তিনি। দলের স্বার্থে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব কাটিয়ে তেড়েফুঁড়ে নামার পরামর্শ দেন। দলীয় সূত্রে খবর, শুক্রবার কেশপুরের কর্মী বৈঠকেও দেব বলেছেন, ‘‘ঘাটালটা এতটা সহজ সিট নয়, যতই কেশপুর আমাদের সঙ্গে থাকুক। বাকি বিধানসভাগুলোয়, যে রকম ভাবে শিউলদি (বিধায়ক শিউলি সাহা) বলল, প্রত্যেকটা জায়গায় এক লাখ ভোটে আমাদের জিততে হবে। এটা সত্যিই সহজ নয়।’’ তাঁর স্পষ্ট বার্তা, ‘‘নিজেদের মধ্যে লড়াই বন্ধকরুন।’’ সব শুনে বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য তুষার মুখোপাধ্যায়ের খোঁচা, ‘‘ওঁকে এ বার কেশপুরই টা-টা, বাই-বাই করে দেবে।’’
কেশপুরে তৃণমূলের গোষ্ঠী রাজনীতিতে একদিকে বিধায়ক শিউলি সাহার অনুগামীরা, অন্যদিকে দলের ব্লক সভাপতি প্রদ্যোত পাঁজার অনুগামীরা রয়েছেন। এ বার জিতে হ্যাটট্রিক করতে হবে, কর্মী বৈঠকে এই দাবি ওঠে। সেখানে দেবের বার্তা, ‘‘এখানে বাঁচতে গেলে জিততে হবে। আমরা সবাইকে নিয়েই বাঁচব।’’ কর্মীরা দেবকে ওই বৈঠকে বলতে শুনেছেন, ‘‘আমি থাকি না কেশপুরে। শিউলিদি থাকে না। আপনারা থাকেন। আরে, আপনাদের তো বাঁচতে হবে! আপনাদের মধ্যে এত কিছু হচ্ছে কেন? লবি করছেন কেন? আমি কী দেখলাম, গত ১০- ১৫ দিন ধরে? বুঝলাম, কেশপুরের মানুষ সহজ, কিন্তু মঞ্চটা একটু কঠিন হয়ে গিয়েছে!’’
দলীয় সূত্রে খবর, বৈঠকে দেব শুনিয়েছেন, ‘‘দল থাকলে আমরা সবাই থাকব। আমাদের সম্মান থাকবে। আমাদের অস্তিত্ব থাকবে। আমরা যদি হেরে যাই, তখন সব হেরে যাবে। আমরা অন্য দলে গেলে দশ নম্বর ছানা হয়ে থাকব!’’ প্রকাশ্যে অবশ্য দেবের দাবি, ‘‘আমার মনে হয় সবাই একসাথেই কাজ করছে। পার্সোনাল ইকুয়েশন থাকতেই পারে একটা। তবে যখনই লোকসভার মতো নির্বাচন হচ্ছে, তখন সবাই তাঁদের বেস্টটা দিয়ে কাজ করার চেষ্টা করছেন।’’
সপ্তাহ দুয়েক হল দেব ভোট প্রচারে নেমেছেন। টানা প্রচার না করলেও লোকসভা এলাকার দু’-একটি ব্লক ছাড়া অন্যত্র প্রথম পর্যায়ের প্রচার শেষ করেছেন তারকা প্রার্থী। আর তাতেই তিনি বুঝেছেন, সামনে কঠিন লড়াই। তাই শুক্রবার দিনভর প্রচার শেষে রাতে খড়ারের দলপতিপুরের বেসরকারি গেস্ট হাউসে ঘাটাল ও দাসপুরের নেতৃত্বকে নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করেন তিনি। সেখানে তিনটি ব্লকের অঞ্চল সভাপতি-সহ জেলা ও ব্লকের নেতরা । সকলের কথা শোনেন দেব। কোথায় কী সমস্যা, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব কেন, প্রচারে তার কতটা প্রভাব পড়ছে— সবই আলোচনায় আসে। সব শুনে দেব যাবতীয় গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব কাটিয়ে দলের স্বার্থে যেটা ভাল, সেই পথে হাঁটার পরামর্শ দেন। নিজেদের মধ্যে গোলমাল না করে কী করে লিড আরও বাড়ানো যায়, সেই কথাও বলেন। তবে ওই বৈঠকে ছিলেন না ঘাটালের প্রাক্তন বিধায়ক শঙ্কর দোলই।
ওই বৈঠকের মাঝেই ৪ এপ্রিল খড়ারে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৈঠকের খবর পৌঁছয়। লোকসভা ভোটের আগে দলের সবর্ভারতী সাধারণ সম্পাদকের বৈঠকে কারা ডাক পাবেন, শুরু হয় চর্চা। সূত্রের খবর, তৃণমূলের ব্লক, জেলা নেতৃত্ব ছাড়াও দলের উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিদের ডাকা হবে।ঘাটাল ও মেদিনীপুর দুই সাংগাঠনিক জেলা নিয়েই আলোচনা হবে। দেব এবং জুন মালিয়া, থাকবেন দুই তারকা প্রার্থীও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy