আসানসোলের যুদ্ধে সম্মুখসমরে জামাইবাবু সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া ও শ্যালক রানিগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল ছবি।
বহু প্রতীক্ষার পর আসানসোল কেন্দ্রের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করল বিজেপি। ওই কেন্দ্রে বিজেপি বর্ধমান-দুর্গাপুরের বিদায়ী সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়াকে টিকিট দিয়েছে। বিজেপির ওই ঘোষণার পর পরই ধর্মসঙ্কটে পড়েছেন রানিগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়। কেননা, সুরেন্দ্র সম্পর্কে তাপসের জামাইবাবু হন। প্রার্থিতালিকা ঘোষণার পর পরই আসানসোলের ভূমিপুত্র সুরেন্দ্র জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবারেই তিনি আসানসোল পৌঁছবেন। রাজনৈতিক মহলের কৌতূহল, জামাইবাবু ভোটপ্রচারে নামলে শ্যালক তাপসের ভূমিকা কী হয়, তা নিয়ে।
তাপসের দিদি মনিকা সুরেন্দ্রর স্ত্রী। তাপস-সুরেন্দ্র বিপরীত রাজনৈতিক দলের সদস্য হলেও, তাঁদের ব্যক্তিগত সম্পর্কে তার প্রভাব পড়েনি। ২০২০ সালে তাপসের ছেলের বিয়ে হয়। শ্যালক যাতে রাজনৈতিক ভাবে কোনও সমস্যায় না পড়েন, সে কথা মাথায় রেখেই সুরেন্দ্র-মনিকা দু’জনেই বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দেননি। এ হেন শীতল সম্পর্ক কি ভোটযুদ্ধের কারণে ‘উষ্ণ’ হতে পারে? তা নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক মহলে।
তাপস জানাচ্ছেন, জামাইবাবু প্রতিপক্ষ হলেও তার প্রভাব ব্যক্তিজীবনে পড়বে না। পাশাপাশি, ব্যক্তি জীবনের প্রভাব পড়বে না রাজনীতিতেও। তাঁর কথায়, ‘‘আমি তো ধর্মসঙ্কটে। তবে আমি তৃণমূলের সৈনিক। যুদ্ধক্ষেত্রে কোনও আত্মীয়তা রাখা উচিত নয়। রাখবও না। থাকবে শুধু প্রতিপক্ষের সঙ্গে আমাদের লড়াই। আমার সঙ্গে জামাইবাবুর সম্পর্ক কোনও দিন খারাপ হয়নি। হবেও না। কারণ আমরা দু’জনেই রাজনীতি করে বড় হয়েছি।’’ তাঁর আরও সংযোজন, ‘‘আজ পর্যন্ত জামাইবাবু আমাকে কখনওই তাঁর সঙ্গে বিজেপিতে যোগ দিতে বলেননি। বলেছেন, যে রাজনৈতিক দলই করবে, নিষ্ঠার সঙ্গে করবে। তাঁর বলা কথাই আমি মেনে চলার চেষ্টা করি। নির্বাচনী যুদ্ধে তিনি প্রতিপক্ষ হলেও ব্যক্তি সম্পর্কে তাঁর কোনও প্রভাব পড়বে না।’’ তাপসের দাবি, গত ১০ মার্চ ব্রিগেড সমাবেশে আসানসোল কেন্দ্রের প্রার্থী হিসাবে শত্রুঘ্ন সিন্হার নাম ঘোষণার পর থেকে তিনি তাঁর জন্যই ভোটপ্রচার করছেন। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ মেনেই চলছেন তিনি। প্রসঙ্গত, আসানসোল লোকসভা অধীন তাপসের বিধানসভা রানিগঞ্জ।
আসানসোলে জন্ম হলেও, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার সময় ছাত্র রাজনীতি শুরু করেন সুরেন্দ্র। সত্তরের দশকে ছাত্র পরিষদ দিয়ে রাজনীতি শুরু। তার পরেই দিল্লিতে কংগ্রেস নেতৃত্বের নজরে আসেন। দাপুটে রাজনীতিক হিসাবেই বিহার থেকে রাজ্যসভার সাংসদ হন ১৯৮৬ সালে। সেই সময়েই রাজনীতিতে প্রবেশ তাপসের। শ্যালক ও জামাইবাবু তখন কংগ্রেসে। পিভি নরসিংহ রাওয়ের মন্ত্রিসভায় জায়গা পেয়েছিলেন সুরেন্দ্র। পরে কংগ্রেস নেতৃত্বের সঙ্গে মনোমালিন্যের জেরে তিনি যোগ দেন বিজেপিতে। তাপস রয়ে যান কংগ্রেসেই। ১৯৯৬ সালে কংগ্রেসের প্রতীকে জিতে আসানসোল দক্ষিণ থেকে বিধায়ক হন তাপস। তখন থেকেই আলাদা হয়ে যায় শ্যালক-জামাইবাবুর রাজনীতির পথ।
১৯৯৮ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূল তৈরি করার পর সেই দলে যোগ দেন তাপস। আসানসোল পুরসভা তৃণমূল দখল করলে তাঁকে মেয়র পদেও বসান মমতা। ২০১১ ও ২০১৬ সালে আসানসোল দক্ষিণ থেকে তৃণমূলের প্রতীকে বিধায়কও হয়েছিলেন তাপস। ২০২১ সালে আসন বদল করে তাঁকে রানিগঞ্জ থেকে প্রার্থী করা হলেও জয় পেয়েছেন তিনি। শ্যালক-জামাইবাবু পৃথক রাজনৈতিক দল করলেও, কখনও তাঁদের ব্যক্তিগত সম্পর্ক নষ্ট হয়নি বলেই দাবি বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের ঘনিষ্ঠদের। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং কেন্দ্র থেকে সুরেন্দ্রকে প্রার্থী করে বিজেপি। সেই বার জিতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হন তিনি। ২০১৯ সালে আসন বদল করে আসানসোলের পাশের কেন্দ্র বর্ধমান-দুর্গাপুরে প্রার্থী করা হয় তাঁকে। সেখানে জয়ী হলেও তাঁকে আর মন্ত্রিসভায় জায়গা দেননি নরেন্দ্র মোদী।
পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির দ্বিতীয় দফার প্রার্থিতালিকা প্রকাশ হলে দেখা যায়, বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রে টিকিট পাননি সুরেন্দ্র। তাঁর বদলে ওই আসনে প্রার্থী করা হয় বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি তথা মেদিনীপুরের বিদায়ী সাংসদ দিলীপ ঘোষকে। আবার প্রথম তালিকায় দেখা গিয়েছিল আসানসোলে প্রার্থী হয়েছেন ভোজপুরি গায়ক-নায়ক পবন সিংহ। কিন্তু তাঁর প্রার্থিপদ নিয়ে তৃণমূল প্রশ্ন তুললে সরে দাঁড়ান পবন। বৃহস্পতিবার আসানসোল কেন্দ্রে সুরেন্দ্রর নাম প্রার্থী হিসাবে ঘোষণা করে বিজেপি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy