জাতীয় নির্বাচন কমিশন। —ফাইল চিত্র।
যেখানে হাতির ভয়, হ্যাঁ সেখানেও ভোট হয়।
শাল-সেগুনের ছায়ায় বুথ, জঙ্গুলে মেঠো পথ ভেঙে আসা মানুষের শীর্ণ লাইন, যে জনপদে নেতা-আমলাদের পা পড়ে না, সেখানে কতিপয় ভোটকর্মীর ভিড়— আর তার সঙ্গে রয়ে যায় ভোটের দিনে হস্তিকুলের দাপটে ভোট-ভেস্তে যাওয়ার আশঙ্কা। এ বার নির্বাচনের আগেই তাই দেশের হস্তি-অধ্যুষিত এলাকায় স্থানীয় বন দফতরকে বিশেষ ভাবে সজাগ করতে রাজ্য সরকারকে আগাম নির্দেশ দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন।
দেশের অধিকাংশ রাজ্যেই দাবদাহে বিধ্বস্ত। এ রাজ্যের দক্ষিণবঙ্গ জুড়েও সেই দহনের আঁচ। বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণ, এই সময়ে তাপপ্রবাহে বনের গভীরে থাকা জলাগুলি শুকিয়ে গেলে হস্তিকুল জলের সন্ধানে বেরিয়ে পড়ে লোকালয়ে। গ্রামের পুকুর-দিঘিগুলি হয়ে ওঠে তাদের লক্ষ্য। পাশাপাশি, শেষ বিকেলেই জেগে ওঠে জঙ্গলমহলের গ্রাম। প্রবল দাবদাহের ফলে, আলো পড়ে এলেই শুরু হয় নেতাদের ‘জনসংযোগের’ পালা। বন-পথে এমনকি গ্রামের মধ্যেও তখন হাতির মুখোমুখি হয়ে পড়া প্রায় অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে।
বন বিভাগ সূত্রেই জানা গিয়েছে, এই মুহূর্তে ঝাড়গ্রামে অন্তত ৬৮টি, পশ্চিম মেদিনীপুরে ২৫টি এবং বাঁকুড়া এবং পুরুলিয়া মিলিয়ে দক্ষিণবঙ্গে অন্তত ১২৫টি হাতি দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।
এই আবহে, উত্তরাখণ্ড, অসম কিংবা দক্ষিণের কর্ণাটক, তামিলনাডু়র পাশাপাশি ‘হাতি হইতে সাবধান’ বার্তা এসেছিল এ রাজ্যেও। বন-লাগোয়া গ্রামবাসী মায় ভোটকর্মীদেরও বনপথে সাবধানে চলাফেরার ব্যাপারে সতর্ক করতে বলা হয়। যদিও উত্তরের জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার কিংবা দক্ষিণবঙ্গের ‘হস্তি-প্রবণ’ বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর কিংবা ঝাড়গ্রামের বনাঞ্চলের বাসিন্দাদের সে ব্যাপারে সতর্ক করতে আদৌ প্রচার চালানো হয়েছে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই গিয়েছে বিরোধীদের।
ঝাড়গ্রামের এক বিজেপি নেতার কথায়, ‘‘ঢাল তরোয়ালহীন বনকর্মীরা প্রত্যন্ত গ্রামে গিয়ে মানুষকে সতর্ক করবে এমন আশা করাই বৃথা!’’ ঘটনাচক্রে, ঘটেছেও তাই। ঝাড়গ্রাম শহরের কাছেই দিন কয়েক আগে, হাতির হানায় গুরুতর আহত হয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় কলকাতার হাসপাতালে ভর্তি এক যুবক। বাঁকুড়ার সিপিএম নেতা অমিয় পাত্র দাবি করছেন, ‘‘বাম জমানায় সরকার নিজেই উদ্যোগী হয়ে রাঢ়বঙ্গের সব বনাঞ্চলে অন্তত মাস দেড়েক আগে থেকে হাতির চলাচলের উপরে নজরদারি চালাত। বন দফতরের পক্ষ থেকে সেই মতো সতর্কও করা হত মানুষকে। এখন সবই অতীত।’’
বাঁকুড়ার এক বনাধিকারিক রাখঢাক না রেখেই বলছেন, ‘‘উপরওলা তো নির্দেশ দিয়েই খালাস। কিন্তু গাড়ি নিয়ে জঙ্গলের অন্দরে ঘুরে হাতির চলাফেরা হদিস করতে তো গাড়ির তেল লাগে। বকেয়া মেটাতে না পারায় গত কয়েক মাসে স্থানীয় পাম্পে তেল দিতে চাইছে না। তা ছাড়া ‘হুলা পার্টি’ (হাতি তাড়ানোর দল) তৈরি করতে গেলে যে খরচ, সব সময় তা-ও জোগাড় করা দুষ্কর হয়ে উঠেছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy