জাতীয় নির্বাচন কমিশন। — ফাইল চিত্র।
জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপারদের নিয়ন্ত্রণ থেকে ভোট পরবর্তী হিংসা রোখা—সর্বোচ্চ পদক্ষেপের ইঙ্গিত দিয়েছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন।
প্রশাসনিক সূত্রের দাবি, দু’দিনের রাজ্য সফরে এসে দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার বেশ কিছু কড়া পদক্ষেপের ইঙ্গিত দিয়ে গিয়েছেন। সেই ইঙ্গিত অনুযায়ী, কর্তব্যে ইচ্ছাকৃত কোনও মারাত্মক গাফিলতিতে জেলাশাসক বা পুলিশ সুপারের পদমর্যাদার অফিসারকেও তাঁর পদ থেকে শুধু অপরাসণেই হয়তো সীমাবদ্ধ থাকবে না কমিশন। দৃষ্টান্ত তৈরি করতে ‘কড়া এবং স্থায়ী’ শাস্তির সুপারিশ করতে পারে তারা। প্রশাসনিক মহলে তা নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা।
এই প্রসঙ্গে অভিজ্ঞ আমলাদের মত, তেমন ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টের বিরুদ্ধে ‘ডিসিপ্লিনারি প্রসিডিংস’ (ডিপি) বা শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে পদক্ষেপের সুপারিশ করতে পারে কমিশন। তাতে অভিযোগের মাত্রা অনুযায়ী লঘু অথবা গুরু শাস্তির সম্ভাবনা রয়েছে। যেমন, গুরুতর অভিযোগ প্রমাণিত হলে ‘সার্ভিস রেকর্ডে’ কালো দাগ পড়তে পারে। যাতে পদোন্নতি (বিশেষ করে কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও পদে) বাধাপ্রাপ্ত হবে। বেতন বৃদ্ধির প্রক্রিয়াও ধাক্কা খেতে পারে। এমনকি, আরও গুরুতর অভিযোগের ক্ষেত্রে অভিযুক্তের চাকরিজীবনে কিছু সময় ছেদ (সার্ভিস ব্রেক) হওয়ার সম্ভাবনাও তৈরি হতে পারে বলে অভিজ্ঞ আমলারা মনে করছেন।
এক জেলা-কর্তার কথায়, “কমিশন বলেছে—উই উইল কাম অন ইউ হেভিলি। কর্ত্যব্যে ইচ্ছাকৃত গাফিলতিতে এমনটা হতেই পারে। তা ছাড়া প্রাক্তন আমলা রাজীব কুমার পার্সোনেল মন্ত্রক (ডিওপিটি) বা আইএএসদের নিয়ন্ত্রক বিভাগের নিয়মকানুন সম্পর্কে খুবই অভিজ্ঞ। সেই দিক থেকে তাঁর এই বার্তা হালকা ভাবে নেওয়ার জায়গা নেই।”
কেন এমন বার্তা?
প্রশাসনিক বিশ্লেষকদের অনেকেরই ব্যাখ্যা, শুধুমাত্র ভোটের সময় কমিশনের আওতাধীন থাকলেও, রাজ্য সরকারের কাছেই শেষপর্যন্ত দায়বদ্ধ থাকতে হয় আইএএস, আইপিএস-দের। এতদিন কর্তব্যে গাফিলতিতে সাধারণত কোনও অফিসারকে পদ থেকে অপসারণ করত দিল্লির নির্বাচন সদন। তাতে ভবিষ্যতে কোনও ভোটের দায়িত্বে সংশ্লিষ্টকে আর না রাখাই রীতি। কিন্তু নির্বাচনের পরে কমিশনের নিয়ন্ত্রণ উঠলে অফিসারেরা ফের রাজ্য সরকারের অধীনেই চলে আসেন। সে ক্ষেত্রে কমিশনের দেওয়া সাজার প্রভাব তেমন আর থাকে না। প্রশাসকদের মতে, মূলত এই জায়গাটিতেই আঘাত করতে চাইছে কমিশন।
প্রবীণ এক কর্তার কথায়, “নিয়ন্ত্রণ থাকাকালীন কমিশন যে কোনও পদক্ষেপের সুপারিশ করতে পারে। চাকরিজীবনে এমন স্থায়ী ধাক্কা লাগার ভয় থাকলে নিরপেক্ষ থেকে সুষ্ঠু এবং স্বচ্ছ ভাবে ভোট পরিচালনা করতে বাধ্য থাকবেন সংশ্লিষ্ট আধিকারিকেরা (যাঁদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ ওঠে)।”
প্রসঙ্গত, গত বুধবার কলকাতায় মুখ্য নির্বাচন কমিশনার বলেছিলেন, ‘‘প্রশাসনে ঊর্ধ্বতন, মাঝামাঝি, নিচুতলার অথবা জুনিয়র অফিসারদের বিভেদমূলক মানসিকতা (পার্টিজ়ন অ্যাটিটিউড) বরদাস্ত করা হবে না। স্পষ্ট বলা হয়েছে, অধস্তনদের নিয়ন্ত্রণ করে উপযুক্ত ক্ষেত্র (লেভেল প্লেইং ফিল্ড) প্রস্তুত করতে হবে জেলাশাসক, পুলিশ সুপারদেরই। তাঁরা করলে ভাল, না করলে আমরা তা করাব। দায়বদ্ধ করা হবে সংশ্লিষ্টদের।’’
এ বারের নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখাকেই অন্যতম পাখির চোখ করেছে কমিশন। তাতে ‘জ়িরো টলারেন্স’ নীতি রাখার বার্তাও প্রশাসনের সর্বস্তরকে দিয়েছে তারা। সূত্রের দাবি, প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকেই কমিশনের ইঙ্গিত, ভোট পরবর্তী হিংসা রোখার পথ খোঁজার কাজ চলছে। তাতে তাদের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক ক্ষমতা প্রয়োগ করা যায় কি না, তা নিয়েও কমিশনের অন্দরে চলছে ভাবনাচিন্তা। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর অর্থ, ভোটের পরে আরও কিছুদিন কমিশনের নিয়ন্ত্রণ থেকে যেতে পারে।
প্রসঙ্গত, ভোট-শেষে কমিশনের নিয়ন্ত্রণ উঠে যাওয়ার পরে হিংসার ঘটনা ঘটলে দায় কে নেবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিরোধীরা। ভোটের পরে কেন্দ্রীয় বাহিনী না থাকাও আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করে। এখানেই ২০২১ সালে বিধানসভা এবং ২০২৩ সালে পঞ্চায়েত ভোটের পরে হওয়া হিংসার কথা মনে করিয়ে দেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকে। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, প্রায় প্রতিটি ভোটের পরে তৈরি হওয়া এমন পরিস্থিতি রুখতেই এমন ভাবনাচিন্তা করছে কমিশন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy