মুর্শিদাবাদে ভোট শেষের পরে ‘ওয়ার রুমে’ দলের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, পলিটব্যুরো সদস্য রামচন্দ্র ডোম, জেলা সম্পাদক জামির মোল্লা ও অন্যেরা। — নিজস্ব চিত্র।
একের পর এক বুথে যাচ্ছেন প্রার্থী। পর পর সেখান থেকে ধরা পড়ছে ‘ভুয়ো’ এজেন্ট! এক একটা এলাকায় ঢুকছেন প্রার্থী। সেখানে দেখা যাচ্ছে বুথের কাছে শাসক দলের জমায়েত। প্রার্থীকে পাশে পেয়ে মানুষের প্রতিবাদ এবং শেষ পর্যন্ত পুলিশের হস্তক্ষেপে সরে যাচ্ছে জমায়েত। ভোটের দিন এমন দৃশ্য দেখা গিয়েছে মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রের নানা জায়গায়। তবে সে সব নেহাতই কাকতালীয় নয়!
দলের ‘ওয়ার রুমে’র সহায়তা পেয়েই গোলমালের জায়গায় পৌঁছে যেতে পেরেছেন মুর্শিদাবাদের প্রার্থী। সেই ‘ওয়ার রুম’ কৌশল এ বার অন্যান্য আসনেও কাজে লাগাতে চাইছে সিপিএম।
ইসলামপুর, রানিনগর, ডোমকল, করিমপুর, হরিহরপাড়ার বিভিন্ন বুথে ভোটের দিন ঘুরে বেড়িয়েছেন সিপিএম প্রার্থী মহম্মদ সেলিম। সিপিএম সূত্রের খবর, মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে কোন কোন অঞ্চলে ভোটের দিন বিশেষ নজর দিতে হবে, তার তালিকা আগাম প্রস্তুত করা হয়েছিল এ বার। সেই সঙ্গেই ভোটের জন্য দলের মুর্শিদাবাদ জেলা কমিটির দফতরে খোলা হয়েছিল ‘ওয়ার রুম’। সেখান থেকে লাগাতার নজর রাখা হচ্ছিল যাবতীয় ঘটনার উপরে এবং অভিযোগ থাকলেই তৎক্ষণাৎ জানিয়ে দেওয়া হচ্ছিল নির্বাচন কমিশনের সংশ্লিষ্ট আধিকারিক এবং পুলিশ পর্যবেক্ষকদের। তথ্য পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছিল প্রার্থীকেও। গত বিধানসভা ও পঞ্চায়েত ভোটের ঘটনা বিশ্লেষণ করে কোন কোন এলাকায় দলের জন্য সমস্যা হতে পারে, তার সম্ভাব্য ছকও কষে রাখা হয়েছিল দলীয় স্তরে। সেই মানচিত্র ধরেই ভোটের দিন ঘুরেছেন সেলিম এবং নিজেদের ভোটারদের বুথ পর্যন্ত পৌঁছনোর বাতাবরণ তৈরি করেছেন। ‘চিহ্নিত’ এলাকায় বড় কোনও গোলমালও এ বার শেষ পর্যন্ত হয়নি।
প্রার্থী সেলিম নিজেই সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বলে মুর্শিদাবাদে দলের আলাদা নজর ছিল। ‘ওয়ার রুম’ও বাড়তি তাগিদে কাজ করেছে। তৃণমূল কংগ্রেস যেমন উপদেষ্টা সংস্থাকে দিয়ে কাজ করাচ্ছে বা বিজেপির আইটি সেল কাজ করছে, সিপিএমের উদ্যোগ ঠিক সেই রকম নয়। প্রযুক্তিতে সড়গড় দলের কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকেরা মিলে এই কাজ করছেন। মুর্শিদাবাদে ‘ওয়ার রুমে’ ছিলেন ১৫ জন। তাঁদের সঙ্গে নিজস্ব উদ্যমে ছিলেন সেলিম-পুত্র আতিশ (টিপু)। কোথায় কেমন ভোট হচ্ছে, কোথায় এজেন্ট থাকলেন বা থাকলেন না, সবই তাঁরা পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে নজরদারি করেছেন। এই অভিজ্ঞতাই এর পরে অন্যান্য কেন্দ্রে ছড়িয়ে দিতে চাইছে সিপিএম। প্রসঙ্গত, উত্তর ২৪ পরগনার জেলা সম্পাদক থাকার সময়ে গৌতম দেব এক বার দলের দফতর থেকে ভোটে নজরদারির আলাদা ব্যবস্থা রাখতে উদ্যোগী হয়েছিলেন।
দলের রাজ্য সম্পাদক সেলিমের কথায়, ‘‘আমাদের নিজেদের ছেলেরাই প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে এই কাজটা করছে। বিভিন্ন জায়গাতেই এই রকমের কাজ করার লোকজন আমাদের আছে। মুর্শিদাবাদে যে টিম দায়িত্ব নিয়েছে, সেখান থেকে কয়েক জনকে নিয়ে এবং স্থানীয় কেন্দ্রের কর্মী বা স্বেচ্ছাসেবকদের একসঙ্গে করে অন্যান্য জায়গাতেও এই ‘ওয়ার রুমে’র কাজ করা যেতে পারে।’’
মুর্শিদাবাদে ‘ওয়ার রুম’ যেমন সিপিএমের সক্রিয়তা বাড়িয়েছে, তেমনই সাংগঠনিক ভাবে নজরদারির ফলেই বুথ থেকে ‘ভুয়ো’ এজেন্ট ধরা গিয়েছে। বস্তুত, এই ‘ভুয়ো’ এজেন্ট এ বারের ভোটে নতুন আবিষ্কার! দেখা গিয়েছে, কোথাও বিরোধী দলের মূল এজেন্টকে ঢুকতে না দিয়ে তাঁর কাগজপত্র নিয়ে বুথে বসেছেন অন্য কেউ। আবার কোথাও বিরোধী বা নির্দল প্রার্থীর নামে নির্দিষ্ট ফর্ম সই করে এজেন্ট সেজে বসে গিয়েছেন কেউ কেউ! ধরা পড়ার পরে বাইরে বেরিয়ে তাঁদের কেউ কেউ স্বীকারও করেছেন, স্থানীয় স্তরে কাদের নির্দেশে তাঁরা এ কাজ করেছেন। এই ঘটনায় রাজ্যের শাসক দলের বিরুদ্ধেই সরব সিপিএম।
আসন সমঝোতার পরে সিপিএমের সাংগঠনিক প্রক্রিয়ার উপরে ভরসা রাখতে হচ্ছে কংগ্রেসকেও। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর কথায়, ‘‘আমাদের নানা জায়গায় ভোট আছে, বিশ্বাসযোগ্যতা আছে। বিজেপিকে সরিয়ে কেন্দ্রে কংগ্রেসের নেতৃত্বে সরকার হতে পারে, এটা মানুষ বিশ্বাস করেন। তার সঙ্গে সিপিএমের সংগঠন যোগ হলে দু’পক্ষের বোঝাপড়া শক্তিশালী হয়। আমরা সেটাই করতে চেয়েছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy