মহম্মদ সেলিম। — ফাইল চিত্র।
প্রাথমিক জট ছাড়ানো গিয়েছে অনেকটাই। বাকি পথ ঠিকমতো পেরোতে পারলে এ বার লোকসভা ভোটে রাজ্যে সার্বিক আসন সমঝোতা করেই লড়াই করতে চলেছে বামফ্রন্ট, কংগ্রেস এবং ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট (আইএসএফ)। সূত্রের খবর, কয়েক দিনের মধ্যে আসন-রফার অঙ্ক চূড়ান্ত হয়ে যেতে পারে। প্রার্থী তালিকা অবশ্য আলাদা করেই ঘোষণা করবে তিন পক্ষ। তার পরে বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেস-বিরোধী শক্তির তরফে যৌথ ভাবে তিন পক্ষের নেতারা একত্র হয়ে বক্তব্য জানাতে পারেন। দেখা যাবে যৌথ প্রচারও।
প্রথম দফায় রাজ্যের ১৬টি আসনের জন্য প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছিল বামফ্রন্ট। আলিপুরদুয়ার আসনে আরএসপি-র মিলি ওরাঁওয়ের নাম রবিবার ঘোষণা করা হয়েছে বামফ্রন্টের তরফে। তার ফলে, রাজ্যে আগামী ১৯ এপ্রিল প্রথম দফায় যে তিন আসনে ভোট, তার তিনটিতেই বাম প্রার্থী থাকছেন। সূত্রের খবর, কংগ্রেস ১২টি আসনের দাবি জানিয়েছে বামেদের কাছে। তার মধ্যে ৮টির নিষ্পত্তি হয়ে গিয়েছে। কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিটির বৈঠক রয়েছে কাল, মঙ্গলবার সন্ধ্যায়। তার আগে কংগ্রেসের সঙ্গে কথা বলে বাকি দাবি-দাওয়া সংক্রান্ত সমস্যা মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করছে সিপিএম। তারই পাশাপাশি, আইএসএফ-কে দু’টি আসন ছাড়ার সূত্র প্রায় পাকা। আরও একটি আসন নিয়ে আলোচনা চলছে। রাজ্যে তারা নিজেরাই ৮টি আসনে লড়বে বলে ঘোষণা করে দেওয়ার পরে নওসাদ সিদ্দিকীর দল ‘বাস্তব পরিস্থিতি’ বুঝে ফের আলাপ-আলোচনার রাস্তায় ফিরেছে বলেই সূত্রের খবর। নতুন করে বেঁকে না বসলে ডায়মন্ড হারবারে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে বাম ও কংগ্রেস সমর্থিত প্রার্থী হতে পারেন ভাঙড়ের বিধায়ক নওসাদই।
আসনের অঙ্ক মেলানোর এই প্রক্রিয়া সম্পর্কে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের মন্তব্য, ‘‘বিজেপি ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে সব শক্তিকে আমরা সেলাই করে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করছি। সেলাই করতে একটু সময় তো লাগেই। দর্জির দোকানে জামা দিলে যেমন বলে পুজো বা ইদের আগে পেয়ে যাবে, তেমনই আমরা বলছি ভোটের আগে হয়ে যাবে!’’
বামফ্রন্টের অন্দরে সব সমস্যা অবশ্য মেটেনি। তবে আগের চেয়ে জট অনেকটাই খোলা গিয়েছে বলে বাম সূত্রের খবর। দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় সিপিএম তিন বাম শরিক ফরওয়ার্ড ব্লক, আরএসপি এবং সিপিআইকে বার্তা দিয়েছে, সার্বিক সমঝোতার স্বার্থে প্রত্যেককেই তাদের ভাগের অন্তত একটি করে আসন ছেড়ে দিতে হবে। তিন শরিকের মধ্যে ফরওয়ার্ড ব্লকের অবস্থানই এখনও পর্যন্ত সব চেয়ে সমস্যাসঙ্কুল! তাদের ভাগের পুরুলিয়া আসনে কংগ্রেসের দাবি রয়েছে। ফ ব-র অন্দরে এই নিয়ে দ্বিমত থাকলেও দলের রাজ্য নেতৃত্ব এখনও পর্যন্ত পুরুলিয়া ছাড়তে নারাজ। তেমন হলে ফ ব ওই আসনে দলের এক প্রাক্তন বিধায়ককে প্রার্থী করে কংগ্রেসের সঙ্গে ‘বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই’য়ে যেতে চায়। যেমন ভাবে গত বার বহরমপুরে বামফ্রন্ট কংগ্রেসকে সমর্থন করলেও আরএসপি সেখানে প্রার্থী দিয়ে রেখেছিল। তবে বাম শিবিরের অন্দরে সেলিমের নেতৃত্বাধীন সিপিএমের এখনকার অবস্থান, ‘বন্ধুত্ব’ এবং ‘লড়াই’ একসঙ্গে হতে পারে না! ফ ব পুরুলিয়া নিয়ে বেশি জেদ ধরে থাকলে তাদের বারাসত আসন নিয়েও বিকল্প ভাবনার অবকাশ রয়েছে সিপিএমে। সূত্রের খবর, ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে শনিবার বেশি রাতে সিপিএমের রাজ্য কমিটির বৈঠকেও ফ ব-র ভূমিকা নিয়ে প্রবল অসন্তোষ উঠে এসেছে।
দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় সিপিএমের তরফে সেলিম, পলিটব্যুরোর সদস্য সূর্যকান্ত মিশ্র, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শ্রীদীপ ভট্টাচার্যেরা সিপিআইকেও বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। সিপিআইয়ের কাছে বসিরহাট আসন চেয়েছিল সিপিএম, যাতে সিপিআই রাজি হয়নি। বাম শরিক দলকে এ বার বলা হয়েছে, ঘাটাল আসন সিপিএমের জন্য ছেড়ে দিতে! পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দুই আসনেই দীর্ঘ কাল সিপিএম লড়ে না, এই প্রথার এ বার অবসান হওয়া দরকার! এমন প্রস্তাবে ভাবনায় পড়েছেন সিপিআই নেতৃত্ব, তাঁরা আজ, সোমবারই দলে আলোচনায় বসছেন বলে সূত্রের খবর। আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে এ দিন বামফ্রন্টের বৈঠকে শরিকদের বলা হয়েছে, দিন দুই-তিনের মধ্যে ফের বৈঠক হবে। তার মধ্যে তারা যেন সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে ফেলে।
সিপিএমের এক পলিটব্যুরো সদস্যের কথায়, ‘‘ভোট আসতেই রাজ্যে ফের মেরুকরণের আবহ তৈরির চেষ্টা চলছে। সার্বিক সমঝোতা করে ফেলতে পারলে এই দ্বিমেরু ভাষ্যের বিপরীতে দাঁড়িয়ে কিছু আসনে আমরা ভাল লড়াইয়ের জায়গায় থাকব। কয়েক দিনের মধ্যে সেই ঐক্য নির্মাণ হয়ে যাবে বলে আশা করি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy