ভোটের ফলাফল স্পষ্ট হতে না হতেই পাড়ায় পাড়ায় শুরু হয়ে যায় সাউন্ড বক্সের দাপট। —ফাইল চিত্র।
সারা বছর নিরাপত্তার ঘেরাটোপে থাকা মুখ্যমন্ত্রীর পাড়া হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের আগল ভেঙে গেল দুপুর ৩টে নাগাদ। নির্বাচনের ফলাফল তত ক্ষণে অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। সকলে জেনে গিয়েছেন, গেরুয়া নয়, রাজ্যে আরও এক বার আসছে ‘সবুজ ঝড়’! পুলিশের ব্যারিকেড ঠেলে ‘হাই সিকিয়োরিটি’ এলাকায় ঢুকে এলেন কয়েক জন! দু’জনের ঘাড়ে দুটো বিশাল মাপের সাউন্ড বক্স। পুলিশ তাঁদের আটকাল না। মনে করা হল, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিশ্চয়ই বক্তৃতা করবেন, তাই নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কিন্তু কয়েক মুহূর্তেই প্রমাণিত হল, সেই ধারণা ভুল!
হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের সঙ্কীর্ণ পরিসরের মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি থেকে কয়েক হাত দূরে রাস্তার উপরে পাতা হল বক্সগুলি। পাশের লোহা ঝালাইয়ের দোকানে বসানো হল গান বাজানোর যন্ত্র। সেটি মোবাইলের সঙ্গে সংযুক্ত করে চালানো হল, ২০২১ সালের ‘তৃণমূলের বিজয় গান’! শুরু হল দেদার নাচ! সময় যত গড়াল, নাচে যুক্ত হলেন আরও অনেকে। কে বলবে, সকাল থেকে শুনশান এই রাস্তাতেই ছিল চাপা উত্তেজনা। শুধু পুলিশের গাড়ি ঘুরে গিয়েছে দফায় দফায়। যা নিয়ে ওই রাস্তায় বসা বৃদ্ধা গৌরী রুদ্র বললেন, ‘‘আমরা অনেকেই রাত জাগা। পুরো পাড়া কাল থেকে শুনশান। পাড়ার মেয়ের সম্মানের লড়াই। তাই আমাদেরও ঘুম নেই!’’
সকাল থেকে শুনশান গোটা শহরের চেহারাটাও ছিল এমনই। দেখলে মনে হবে, যেন ‘ছুটির দিন’ কাটছে। অন্যান্য দিন সকাল ১০টায় উত্তর থেকে মধ্য কলকাতার এক জায়গায় আসতে যেখানে প্রায় ৪৫ মিনিট সময় লাগে, এ দিন তা লেগেছে মাত্র ১২ মিনিট। এর পরে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের মতোই ফিরেছে এ শহরের ছন্দ। ফাঁকা রাস্তায় দিকে দিকে দেখা যেতে শুরু করে মোটরবাইক-বাহিনী। হেলমেট পরার বালাই ছিল না। পতাকা মাথায় জড়িয়ে, আবির মেখে তাঁরা ছুটে বেড়ান শহরের এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্তে। উল্লেখযোগ্য ভাবে কম ছিল পুলিশের উপস্থিতিও। যা নিয়ে রাজভবনের কাছে এক পুলিশকর্মী বললেন, ‘‘গোটা শহর অটো সিগন্যাল ব্যবস্থায় চলেছে।’’
ভোটের ফলাফল স্পষ্ট হতে না হতেই পাড়ায় পাড়ায় শুরু হয়ে যায় সাউন্ড বক্সের দাপট। বেলেঘাটার এমনই একটি পাড়ায় গিয়ে চোখে পড়ে, চারটি বিশাল মাপের সাউন্ড বক্স রাখা হয়েছে ফুটপাতে। বক্স ঘিরে চলছে নাচ। এক যুবক বললেন, ‘‘কারও আপত্তি থাকার কথা নয়। গান শুনতে সকলেই ভালবাসেন। আমরা শুধু একটু জোরে বাজাচ্ছি, এই যা!’’ নাচে ব্যস্ত পাশের এক তরুণীর মন্তব্য, ‘‘সারা রাত রাস্তাতেই পার্টি হবে। যাঁর ভাল লাগবে না, তিনি বাড়ি ছেড়ে অন্য কোথাও ঘুরে আসতে পারেন!’’ একই রকম চিত্র যাদবপুরে। সেখানে সাউন্ড বক্সের দাপটে বামেদের একটি দলীয় কার্যালয় বন্ধ করে চলে যেতে দেখা যায় সেখানকার কর্মীদের।
মধ্য কলকাতার ৬, মুরলীধর সেন লেনের শুনশান বিজেপি কার্যালয়ে পৌঁছে দেখা গেল, কয়েক জন বসে ফলাফলের ময়না তদন্ত করছেন। এত ফাঁকা কেন? জানা গেল, বেলা বাড়তে অনেকেই বাড়ির পথ ধরেছেন। সেখানেই এক বিজেপি নেতা বলেন, ‘‘প্রচুর মিষ্টির বাক্স আর আবিরের বরাত দেওয়া ছিল। সেগুলো আর আনা হয়নি। যে হারে হুমকি আসছে, তাতে মিষ্টির দাম মেটাতে যাওয়া যাবে কি না, সেটাই চিন্তার।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy