গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
লোকসভা নির্বাচনের গণনার দিন গন্ডগোলের আশঙ্কা করে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিলেন বিজেপি প্রার্থী অর্জুন সিংহ। বুধবার ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রের পর্যবেক্ষক রাকেশ কুমার প্রজাপতিকে চিঠি দিয়েছেন তিনি। বিজেপি প্রার্থীর অভিযোগ, এসডিও এবং বিডিয়ো স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে গণনার দিন গন্ডগোল পাকাতে পারেন। রাজ্যের প্রশাসনিক ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে গণনাকেন্দ্রে কারচুপি করতে পারেন তাঁরা। ব্যারাকপুর থেকে নির্বাচিত তৃণমূলের বিধায়ক এবং পুরসভার চেয়ারম্যান গণনাকেন্দ্রে ঢুকে প্রভাব খাটাতে পারেন বলেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিদায়ী সাংসদ। তাঁর দাবি, কাউন্টিং এজেন্ট ছাড়া আর কেউ যাতে গণনাকেন্দ্রে ঢুকতে না পারেন, তা সুনিশ্চিত করতে হবে কমিশনকে। ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রের গণনা হবে রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ কলেজে। এখানে আগে থেকেই তৃণমূল নেতারা গোলমাল পাকানোর যাবতীয় প্রস্তুতি রাখবেন বলে ওই চিঠিতে দাবি করেছেন অর্জুন। ব্যারাকপুরের রাজনীতিতে পার্থ ভৌমিক, সোমনাথ শ্যামের সঙ্গে তাঁর দ্বন্দ্বের কথা কারও অজানা নয়। বাংলার রাজনীতির কারবারিদের মতে, চিঠিতে নাম না করে শাসকদলের সেই নেতাদের দিকে ইঙ্গিত করেছেন তিনি।
ব্যারাকপুরের বিদায়ী সাংসদের নির্বাচন কমিশনে এমন চিঠি দেওয়াকে তাঁর হারের ‘পূর্বাভাস’ বলেই ব্যাখ্যা করছে তৃণমূল। যদিও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, আগেভাগে এই চিঠি দিয়ে নির্বাচন কমিশনের উপরই ‘উল্টো চাপ’ তৈরি করতে চাইলেন অর্জুন।
চিঠিতে অর্জুন লিখেছেন, স্থানীয় বিধায়ক পুরসভার চেয়ারম্যান এবং কাউন্সিলর নিজেদের প্রভাব খাটিয়ে গণনাকেন্দ্রে গোলমাল করবেন বলে পরিকল্পনা করেছে তৃণমূল। গোপন সূত্র থেকে তিনি শাসকদলের এই পরিকল্পনার কথা জানতে পেরেছেন বলে দাবি করেছেন। ব্যারাকপুরের বিজেপি সাংসদ আরও লিখেছেন, গণনার কাজে ব্যবহৃত ডেকোরেটার এবং ক্যাটারারদের সঙ্গে যোগসাজশ করে গণনাকেন্দ্রে দুষ্কৃতীদের প্রবেশ করানো হতে পারে, যাতে গণনার ফল সহজেই প্রভাবিত করা যায়। এমন সব আশঙ্কার কথা উল্লেখ করে তিনি কমিশনকে চিঠি লিখেছেন। ইতিমধ্যে তৃণমূল নেতারা গণনাকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা ডেকোরেটর এবং ক্যাটারারদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন বলেও চিঠিতে উল্লেখ করেছেন অর্জুন। প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের টিকিট না পেয়ে বিজেপি প্রার্থী হয়ে ব্যারাকপুরে ভোটের লড়াই করেছিলেন অর্জুন। সাড়ে ১৪ হাজার ভোটে তৃণমূল প্রার্থী দীনেশ ত্রিবেদীকে হারিয়ে জয়ী হন তিনি। কিন্তু ২০২২ সালের মে মাসে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগদান করেন। তাঁর প্রত্যাশা ছিল, এ বারের লোকসভা নির্বাচনে ব্যারাকপুর থেকে তাঁকে প্রার্থী করবে তৃণমূল। কিন্তু ১০ মার্চ ব্রিগেড মঞ্চে বসেই ব্যারাকপুর কেন্দ্রের প্রার্থী হিসাবে সেচমন্ত্রী পার্থের নাম শোনেন তিনি। এর পর দিল্লিতে গিয়ে ফের বিজেপিতে যোগদান করে আবারও ব্যারাকপুরের মানুষের কাছে ভোট চেয়েছেন অর্জুন। ২০ মে ব্যারাকপুরের ভোট হয়ে গিয়েছে। ৪ জুন গণনার পরে বোঝা যাবে ব্যারাকপুরের কুরুক্ষেত্রে জয়ী হলেন কে।
ব্যারাকপুরের বিদায়ী সাংসদের নির্বাচন কমিশনে এমন চিঠি দেওয়াকে তাঁর হারের পূর্বাভাস বলেই ব্যাখ্যা করছে তৃণমূল। ব্যারাকপুরের এক তৃণমূল নেতা বলেন, ‘‘বার বার দল বদল করাকে ব্যারাকপুরের মানুষ একেবারেই পছন্দ করেন না। ২০১৯ সালে তৃণমূল থেকে বিজেপিতে গিয়েছিলেন। কিন্তু ২০২২ সালে দল তাঁর ভুল মাফ করে আবার ফিরিয়ে নিয়েছিল। কিন্তু সেই দলের সঙ্গে বেইমানি করে যে ভাবে অর্জুন সিংহ দলত্যাগ করে বিজেপির হয়ে ভোটে দাঁড়িয়েছেন, তা ব্যারাকপুরের মানুষ ভাল চোখে দেখেননি। তাই নিশ্চিত হার জেনেই আগে থেকে অজুহাত খাড়া করার কাজ সেরে ফেলতে চাইছেন।’’ তবে রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের কথায়, ‘‘২০২১ সালে নির্বাচনে গণনাকেন্দ্রে যে ভাবে একের পর এক বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থীদের হারানো হয়েছিল, সেই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে অর্জুন সিংহ নির্বাচন কমিশনকে এমন চিঠি লিখেছেন। কে জিতবে, কে হারবে তা ঠিক করেছেন ব্যারাকপুরের মানুষ। কিন্তু ভোটগণনায় যাতে শাসকদল কোনও রকম কারচুপি না করতে পারে, সেই কারণেই আগাম সতর্কতা নেওয়া হচ্ছে।’’
যদিও রাজনৈতিক কারবারিদের একাংশের মতে, আগেভাগে নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়ে ‘উল্টো চাপ’ দিতে চাইলেন ব্যারাকপুরের বিদায়ী সাংসদ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy